এত কিছু জিনিস সম্পর্কে ভবিষ্যৎবাণী করা হলেও ‘বিগ ব্যাং’ মডেলটি কিন্তু আদৌ সম্পূর্ণ নয়। এই মডেল ‘বিগ ব্যাং’ থেকে আদৌ বলা সম্ভব নয় কেন আমাদের বিশ্ব একটা বিরাট ‘স্কেলে’ একই রকম (ইউনিফর্ম), অথবা কেনই বা এই বিশ্বে খুব ছোট ‘স্কেলে’ সেই একরূপিতা নেই (নন-ইউনিফর্ম)। আমরা জানি যে মহাবিশ্বে ছায়াপথ, নক্ষত্র ইত্যাদি তৈরি হওয়ার জন্য ছোট ‘স্কেলে’ অর্থাৎ মহাবিশ্বের আয়তনের তুলনায় অনেকটাই ছোট আয়তনে ‘নন-ইউনিফরমিটি’ থাকা প্রয়োজন। ‘বিগ ব্যাং’ মডেল এই প্রশ্নের কোনও উত্তর দিতে পারে না। তেমনই দিতে পারে না খুব সামান্য হলেও কসমিক মাইক্রোওয়েভ ব্যাকগ্রাউন্ড রেডিয়েশনের তাপমাত্রায় পরিবর্তনের কোনও ব্যাখ্যা। খুব ছোট হলেও অনিয়মিত এই পরিবর্তন কি নক্ষত্র কিংবা ছায়াপথের সৃষ্টির জন্য দায়ী হতে পারে ? NASA-র COBE বা Cosmic Background Explorer ও WMAP বা Wikinson Microwave Anisotropy Probe উপগ্রহগুলি এই প্রশ্নের উত্তর খোঁজার চেষ্টা করেছে। নাসার ‘কোবে’ বা ‘এক্সপ্লোরার ৬৬’ নামে কৃত্রিম উপগ্রহটি উৎক্ষেপণ করা হয় ১৯৮৯ সালের ১৮ নভেম্বর। চার বছর ধরে মহাকাশে অভিযান চালায় ‘কোবে’। ‘কোবে’র অভিযানের উদ্দেশ্য ছিল মহাবিশ্বের ‘কসমিক মাইক্রোওয়েভ ব্যাক গ্রাউন্ড রেডিয়েশন’ (সিএমবি) নিয়ে অনুসন্ধান করা এবং কসমস সম্পর্কে আমাদের ধারণাকে ঠিক রূপ দিতে তথ্য সরবরাহ করা। ‘কোবে’ অভিযান থেকে এমন কিছু তথ্য মেলে যা থেকে ‘বিগ ব্যাং’ তত্ত্ব সমর্থিত হয়। কসমোলজির ব্যাপারটা আরও ভালো ভাবে বুঝতে নাসা ২০০১ সালে পাঠায় Wikinson Microwave Anisotropy Probe বা WMAP। WMAP মহাবিশ্ব সম্পর্কে যে সব তথ্য পাঠিয়েছে তার বিশ্লেষণ সম্পূর্ণ হয়েছে। আমরা এই মহাবিশ্ব সম্পর্কে নতুন কিছু ধারণার অপেক্ষায় আছি। যা-ই হোক, মহাবিশ্বের সম্পূর্ণ ইতিহাস বুঝতে হলে আমাদের দরকার ‘বিগ ব্যাং’ মডেলের পুনর্নির্মাণ।
‘‘কালস্রোত বেয়ে চলেছে নানা জ্যোতির্লোকের নানা আবর্ত। এই জন্যেই আমাদের ভাষায় এই বিশ্বকে বলে জগৎ। অর্থাৎ এর সংজ্ঞা হচ্ছে এ চলছে, চলাতেই এর উৎপত্তি, চলাই এর স্বভাব।’’
—বিশ্বপরিচয়, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।
সূত্র : বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সংসদ ও দফতর, পশ্চিমবঙ্গ সরকার
সর্বশেষ সংশোধন করা : 12/5/2019