স্যার জগদীশচন্দ্র বসু (নভেম্বর ৩০, ১৮৫৮ – নভেম্বর ২৩, ১৯৩৭) এক জন বাঙালি পদার্থবিদ, উদ্ভিদবিদ ও জীববিজ্ঞানী এবং প্রথম দিকের এক জন কল্পবিজ্ঞান রচয়িতা। তাঁর গবেষণা উদ্ভিদবিজ্ঞানকে সমৃদ্ধ করে তোলে এবং ভারতীয় উপমহাদেশে ব্যবহারিক ও গবেষণাধর্মী বিজ্ঞানের সূচনা করে। ইনস্টিটিউট অব ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ার্স তাঁকে রেডিও বিজ্ঞানের জনক বলে অভিহিত করে।
স্যার জগদীশচন্দ্র বসু, হ্যাঁ, তিনিই বিশ্ববাসীকে প্রথম বারের মতো জানিয়েছিলেন উদ্ভিদের মধ্যে আছে প্রাণশক্তি। এটি প্রমাণের জন্যে তিনি ‘ক্রেস্কোগ্রাফ’ নামক একটি যন্ত্র আবিষ্কার করেন, যা উদ্ভিদদেহের সামান্য সাড়াকে লক্ষ গুণ বৃদ্ধি করে প্রদর্শন করে।
আমরা যে এফএম বা রেডিওতে গানের মূর্ছনায় হারিয়ে যাই তার আবিষ্কারক হিসেবে কিছু দিন আগেও পুরো বিশ্ববাসী ইতালির বিজ্ঞানী মার্কোনিকেই জানত। কিন্তু ১৯৯৮ সালে প্রকাশিত ইনস্টিটিউট অব ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ার্স-এর প্রসিডিংসে আমাদের জগদীশচন্দ্র বসুকে রেডিওর প্রকৃত আবিষ্কারক হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। কারণ, মার্কোনি তাঁর আবিষ্কারে অনেক সূক্ষ্ম যন্ত্রপাতি ব্যবহার করেছিলেন যার মধ্যে একটি হচ্ছে কোহেরার (২টি ধাতব পাতের মাঝে খানিকটা পারদ), যা ছিল রেডিও বা তারহীন সংকেত পাঠানোর প্রক্রিয়ার মূল বিষয়। মজার ব্যপার হচ্ছে এই কোহেরার-এর প্রকৃত আবিষ্কারক স্যার জগদীশচন্দ্র বসু, যা মার্কোনি বা তাঁর সমসাময়িক বিজ্ঞানীরা কেউ স্বীকার করেনি। মার্কোনি বসুর তৈরি কোহেরারটি সামান্য পরিবর্তন করেছিলেন। বসুর কোহেরারটি ছিল ‘ইউ’ আকৃতির আর মার্কোনিরটি ছিল সোজা।
১৮৯৬ সালে জগদীশচন্দ্র বসু অদৃশ্য আলোক সম্পর্কে লিভারপুলের ব্রিটিশ অ্যাসোসিয়েশনে বক্তৃতা দেন। ঐ সময় যদি তিনি নিজের নামে বেতারযন্ত্র পেটেন্ট করতেন, তা হলে মার্কোনি না, তিনিই হতেন বেতারযন্ত্রের সর্ব প্রথম আবিষ্কারক। এর পর লন্ডনে রয়্যাল ইনস্টিটিউটে তাঁকে বক্তৃতা দেওয়ার জন্য আহ্বান করা হয়। তিনি তাঁর কোহেরারটি নিয়ে একটি নিবন্ধ রয়্যাল সোসাইটিতে পড়েছিলেন। তাঁর এই কোহেরারটি দিয়ে তিনি প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে এক মাইল দূরের বাসভবনে সাংকেতিক চিহ্ন প্রেরণ করেছিলেন। ১৮৯৬ সালে লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয় মৌলিক গবেষণার জন্য তাঁকে ডিএসসি ডিগ্রি প্রদান করে।
এখন প্রশ্ন হল জগদীশচন্দ্র বসু নিজের নামে পেটেন্ট করেননি কেন ? ১৯০১ সালে রবীন্দ্রনাথকে লেখা একটি চিঠিতে বলেন যে, “আমি যদি এক বার টাকার মোহে পড়ে যাই তা হলে আর কোনও দিন বের হতে পারব না।” টাকার প্রতি তাঁর লোভ ছিল না বলেই তিনি পেটেন্ট নিজের নামে করেননি।
১৯৩৭ সালের ২৩ নভেম্বর জগদীশচন্দ্র বসু তাঁর কর্মময় জীবন থেকে চিরবিদায় নিলেন। আমরা তাঁর পরবর্তী প্রজন্ম উত্তরাধিকার সূত্রে পেলাম ‘বসু বিজ্ঞান মন্দির।’ তিনি এক জন সাহিত্যিকও ছিলেন। তাঁর লেখা ‘অব্যক্ত’ বাংলা ভাষায় একটি উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ। এ ছাড়াও আমরা যে সায়েন্স ফিকশনগুলো পড়ে বিজ্ঞানকে নিয়ে প্রতিনিয়ত নতুন ভাবে চিন্তা করি, তার জনক হলেন জগদীশচন্দ্র বসু। ১৮৯৬ সালে তাঁর লেখা প্রথম সায়েন্স ফিকশনটির নাম ছিল ‘নিরুদ্দেশের কাহিনী’।
সূত্র : বিশ্বের সেরা ১০১ বিজ্ঞানীর জীবনী, আ. ন. ম. মিজানুর রহমান পাটওয়ারি, মিজান পাবলিশার্স, ঢাকা
সর্বশেষ সংশোধন করা : 1/28/2020