ভারতীয়দের কাছে অতি গর্বের এক নাম হল হোমি ভাবা। সাধারণ ভাবে হোমি ভাবার পরিচয় হল তিনি এক জন পরমাণু বিজ্ঞানী। তবে ভারতীয়দের কাছে তাঁর নামটি আরও যে কারণে বিশেষ গুরুত্ব বহন করে তা হল, মূলত ভাবাই ভারতের পরমাণু গবেষণার ক্ষেত্রে অগ্রদূত হিসেবে কাজ করেছেন। ১৯০৯ সালের ৩০ অক্টোবর মুম্বইয়ের সম্ভ্রান্ত এক পরিবারে ভাবার জন্ম। ওই সময়ে আইনস্টাইনের থিওরি অব রিলেটিভিটি আবিষ্কারের ফলে বিশ্বজগৎ সম্পর্কে মানুষের চিন্তাধারায় আসছিল বড় ধরনের পরিবর্তন। শিশুকাল থেকেই ভাবা ছিলেন মেধাবী। তার পরও তাঁকে নিয়ে বেশ খানিকটা দুশ্চিন্তায় ভুগতে হয়েছিল তাঁর মা-বাবাকে। এর কারণ ছিল তাঁর ঘুম। শিশুকাল থেকেই তাঁর ঘুম ছিল একেবারে কম। পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে চিকিৎসক বলেছিলেন, তাঁর শারীরিক কোনও সমস্যা নেই। ছোটকাল থেকে ভাবা খুব সুন্দর ছবিও আঁকতেন। লেখাপড়া করেছেন মুম্বইয়ের রয়্যাল ইনস্টিটিউট অব সায়েন্সে। তার পর কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে। কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই তিনি পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন। ১৯৩৬ সালে কোপেনহাগেন বোর ইনস্টিটিউটে ডব্লিউ নাইট বোরের সহযোগিতায় 'ক্যাসকেড থিওরি অব কসমিক রে শাওয়ার' নামে নতুন একটি বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব আবিষ্কার করেন। এ তত্ত্ব আবিষ্কারের ফলেই গোটা ইউরোপে পরিচিতি পেয়ে যান ভাবা। আবিষ্কারের স্বীকৃতিস্বরূপ পরের বছর জিতে নেন অ্যাডামস পুরস্কার। ১৯৪১ সালে ইংল্যান্ডে রয়্যাল সোসাইটির ফেলো নির্বাচিত হন ভারতীয় এই পরমাণুবিজ্ঞানী। ১৯৪৫ সালে মূলত তাঁর প্রচেষ্টায়ই মুম্বইয়ে প্রতিষ্ঠিত হয় ‘টাটা ইনস্টিটিউট অব ফান্ডামেন্টাল রিসার্চ’ নামের একটি পরমাণু গবেষণা কেন্দ্র। এর কিছু দিন পরই ভারত সরকারের পক্ষ থেকে তাঁকে একটি পারমাণবিক শক্তি উৎপাদন কেন্দ্র প্রতিষ্ঠার দায়িত্ব নিতে অনুরোধ করা হয়। সঙ্গে সঙ্গেই তিনি রাজি হয়ে যান। এ ছাড়াও ভারতে থোরিয়াম প্ল্যান্ট, ইউরেনিয়াম প্ল্যান্ট, ফুয়েল এলিমেন্ট ফেব্রিকেশন ফ্যাসিলিটি, হেভিওয়াটার প্ল্যান্ট ইত্যাদি প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন তিনি। ১৯৬৬ সালের ২৪ জানুয়ারি এক বিমান দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান হোমি ভাবা।
সূত্র : বিশ্বের সেরা ১০১ বিজ্ঞানীর জীবনী, আ. ন. ম. মিজানুর রহমান পাটওয়ারি, মিজান পাবলিশার্স, ঢাকা
সর্বশেষ সংশোধন করা : 6/5/2020