১৯৩০ সালে ডেট্রয়েট পুলিশ যখন তাদের গাড়িতে মোবাইল রেডিও বসিয়েছিল, সেগুলো জাতে ছিল সাধারণ রেডিওই - তফাত শুধু একটু মজবুত করে তৈরি আর বিশেষ ফ্রিকোয়েন্সিতে বাঁধা। এই রেডিও মারফত কন্ট্রোল রুম পুলিশদের নানা নির্দেশ দিত। পুলিশদের কোনও প্রশ্ন থাকলে কাছাকাছি পাবলিক টেলিফোন বুথে গিয়ে কন্ট্রোল রুমের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করত। এর কয়েক বছর বাদে অবশ্য আমেরিকায় নিউ জার্সি স্টেটের বেয়োন শহরে পুলিশরা দ্বিমুখী মোবাইল রেডিও ব্যবহার আরম্ভ করল। কিন্তু এটি ছিল পুশ-টু-টক (হাফ-ডুপ্লে) প্রযুক্তি। অর্থাৎ কথা বলতে হলে বোতাম টিপে রেখে কথা বলতে হত। সেই সময়ে ট্র্যান্সমিটারটা কাজ করত, কিন্তু রিসিভার বন্ধ থাকত। এটি করার উদ্দেশ্য যাতে পাশের ট্র্যান্সমিটারের শক্তির দাপটে রিসিভার ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। বেয়োন পুলিশদের জন্য তৈরি এই রেডিওগুলি ছিল বিশাল - পুলিশগাড়ির পুরো ট্রাঙ্ক বা ডিকি-ই লেগে যেত এগুলোকে রাখার জন্যে।
১৯৩৫ সালে এডউইন আর্মস্ট্রং এফএম রেডিও উদ্ভাবন করলেন। এর আগে যে সব রেডিও ব্যবহার করা হত সেগুলি ছিল এএম। এ দু’টি প্রযুক্তির তফাৎ হল মডুলেশন পদ্ধতির। এএম রেডিওতে নানা রকমের বিরক্তিকর শব্দ (স্ট্যাটিক) এসে হাজির হত। এফএম রেডিও-র উন্নততর প্রযুক্তিতে সেগুলো প্রায় পুরোটাই দূর হল। তার থেকেও বড় কথা এফএম রেডিওতে অনেক কম-শক্তির ট্র্যান্সমিটার লাগে। সুতরাং ট্র্যান্সমিটার ও রিসিভার পাশাপাশি রাখা এবং এক সঙ্গে তাদের ব্যবহার করা অবশেষে সম্ভব হল। এ ছাড়া চলমান অবস্থার জন্য রেডিও তরঙ্গের যে সব সমস্যা হয়, যেমন ‘ফাস্ট ফেডিং’, এফএম রেডিওতে সেগুলি দেখা গেল অনেক কম। আর্মস্ট্রং-এর এই উদ্ভাবন খুবই কাজে লাগল দ্বিতীয় মহাযুদ্ধে। বিভিন্ন সৈন্যদলের মধ্যে সমন্বয়ের জন্য এফএম প্রযুক্তির দুমুখী রেডিও কাজে লাগাল মিত্রশক্তি। প্রযুক্তিটিকে উন্নততর করার জন্যও সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে প্রচুর গবেষণা আরম্ভ হল ।
সূত্র : মোবাইল ফোন খুঁটিনাটি, মোজাহিদুল ইসলাম ঢেউ, সিসটেক পাবলিকেশন্স, ঢাকা
সর্বশেষ সংশোধন করা : 6/27/2020