একটা কথা বলা হয়নি। ১৯৪৬ সাল থেকেই বেল ল্যাবোরেটরিজের কিছু বিজ্ঞানী খাতায় কলমে নতুন ভাবে মোবাইল টেলিফোনের গঠনপ্রণালী নিয়ে ভাবনাচিন্তা করছিলেন। তাঁরা বুঝতে পেরেছিলেন সাধারণ রেডিও পরিষেবায় যে ভাবে ট্রান্সমিটার ব্যবহার করা হয় অর্থাৎ বিশাল শক্তিসম্পন্ন ট্র্যান্সমিটার যার প্রেরিত রেডিও বার্তা মাইলের পর মাইল গিয়ে পৌঁছয়, সেটা মোবাইল ফোনের পক্ষে উপযুক্ত নয়। মোবাইল ফোনের পরিষেবা দিতে হবে খুব অল্প-শক্তিশালী ট্র্যান্সমিটার ব্যবহার করে - যাতে সেই ট্র্যান্সমিটারের বার্তা পাঠাবার ক্ষমতা এক-আধ মাইলের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে। তাতে সুবিধা কী ? সুবিধা হল, সেই ট্র্যান্সমিটারের এক দেড় মাইল দূরে আবার সেই একই ফ্রিকোয়েন্সি ব্যবহার করা যাবে (ফ্রিকোয়েন্সি রিইউজ) -- প্রথম ট্র্যান্সমিটারের প্রেরিত বার্তায় কোনও রকম বিঘ্ন বা ইন্টারফিয়ারেন্স না ঘটিয়ে। এতে লাভ হচ্ছে দু’টো। যে হেতু একই ফ্রিকোয়েন্সি (বা চ্যানেল) বার বার ব্যবহার করা যাবে, অজস্র চ্যানেলের প্রয়োজন হবে না, আর যে হেতু ট্রান্সমিটারের শক্তি খুব কম হবে তাই ট্র্যান্সমিটার-রিসিভার তৈরি করতে এবং এক সঙ্গে তাদের কাজ করতে কোনও অসুবিধা হবে না ।
এ বার তাঁরা পরিষেবা দেওয়ার জন্য একটা শহরকে বহু ছোট ছোট সেল-এ ভাগ করলেন। প্রত্যেক সেলেই একটা করে ছোট ট্র্যান্সমিটার-রিসিভার টাওয়ার থাকবে এবং সেই সেলের জন্য নির্দিষ্ট কতগুলি চ্যানেল থাকবে - যেগুলো আবার দূরে অন্য সেল-এ ব্যবহার করা হবে। মোবাইল টেলিফোন যেই সেলের মধ্যে থাকবে সেই সেলের জন্য নির্দিষ্ট যে কোনও একটি চ্যানেল দিয়ে সেলের টাওয়ার মারফত তার টেলিফোন সংযোগ ঘটবে। এক সেল থেকে মোবাইল ফোন যখন অন্য সেল-এ যাবে, ঠিক তার আগে প্রথম টাওয়ার পাশের টাওয়ারকে বলবে আগন্তুক মোবাইল-এর জন্য একটা চ্যানেল-এর বন্দোবস্ত করতে, যাতে সেখানে ঢোকা মাত্র কানেকশনটা না কেটে আগের চ্যানেল থেকে নতুন চ্যানেল-এ মোবাইল ‘কল’-টা হস্তান্তরিত (হ্যান্ড অফ) হয়। এই প্রযুক্তিকে বলা হয় সেলুলার প্রযুক্তি। এই জন্যই বহু দেশে ‘মোবাইল ফোন’-এর বদলে বলা হয় সেল-ফোন, আর পরিষেবাকে বলা হয় সেলুলার পরিষেবা।
খাতায় কলমে এটি চমৎকার হলেও বহু দিন এ নিয়ে কেউ মাথা ঘামায়নি। তার কারণ এটি ব্যবহার করতে গেলে সেল থেকে সেলে যাওয়ার সময়ে রেডিও রিসিভারকে স্বয়ংক্রিয় ভাবে মুহূর্তের মধ্যে নিজেকে টিউন করতে হবে নতুন ফ্রিকোয়েন্সিতে; দরকার হবে শক্তিশালী কম্পিউটার ও জটিল সফটওয়্যার-এর। কিন্তু সব কিছুই ধীরে ধীরে গড়ে উঠল। প্রথম সেলুলার পরিষেবা চালু হল ১৯৮৩ সালে শিকাগোতে। এই প্রযুক্তির নাম দেওয়া হল অ্যাডভান্সড মোবাইল ফোন সার্ভিস (অ্যাম্পস)।
সূত্র : মোবাইল ফোন খুঁটিনাটি, মোজাহিদুল ইসলাম ঢেউ, সিসটেক পাবলিকেশন্স, ঢাকা
সর্বশেষ সংশোধন করা : 12/25/2019