প্রথমেই বলি মানুষ বলামাত্র যে ছবি আমাদের মানসপটে ফুটে ওঠে তার সাথে আদি মানুষের মিলের চাইতে অমিলই বেশি। এই প্রসঙ্গে বিখ্যাত ইংরেজ বিজ্ঞানী চার্লস ডারউইনের বহু আলোচিত বই ‘দ্য অরিজিন অফ স্পেসিস’ (The Origin of Species) [প্রজাতির উদ্ভব] এবং ‘দ্য ডিসেন্ট অফ ম্যান’ (The Descent of man) [মানুষের ক্রমোন্নয়ন] আমাদের বিজ্ঞানমনস্ক ভাবনাকে প্রসারিত করে। তিনিই সর্বপ্রথম প্রত্যক্ষ পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে বিবর্তনবাদের ধারণা দেন। তাঁর তত্ত্ব অনুযায়ী সকল প্রকার প্রজাতি কিছু সাধারণ পূর্বপুরুষ থেকে উদ্ভূত। সৃষ্টির এই ক্রমবিবর্তনে ডারউইনের কাজ জীববৈচিত্রের ব্যাখ্যা প্রদান করা।
ডারউইনের তত্ত্ব অনুযায়ী বর্তমান মানুষ, গোরিলা এবং শিম্পাঞ্জিরা একই আফ্রিকান বনমানুষের থেকে উদ্ভূত। এই সকল প্রজাতিকে একত্রে ‘হোমিনাইডি’ (Hominidae) পরিবার বলা হয়। প্রত্যেক প্রজাতিকে ‘হোমোনিড’ (Homonid) বলা হয়।
আজ থেকে আনুমানিক ৪০ থেকে ৫০ লক্ষ বছর আগে পৃথিবীতে প্রথম ‘হোমোনিড (আর্ডিপিথিকাস রামিডাস, Ardipithicus ramidus) বাস করত। জীবাশ্ম থেকে জানা যায়, তারা দ্বিপদ, প্রায় চার ফুট লম্বা ছিল এবং জঙ্গলে বাস করত।
১৯৯৫ সালে নতুন এক প্রজাতি, অস্ট্রালোপিথিকাস অ্যানামেনসিস (Australopithecus anamensis) আবিষ্কৃত হল। এদের করোটির সঙ্গে প্রাচীন বনমানুষের সাদৃশ্য পাওয়া যায়। এরা প্রধানত কেনিয়া এবং ইথিওপিয়া অঞ্চলে বাস করত। এদের বৃহৎ পেষক দেখে অনুমান করা যায় যে তার দানাশস্য, বাদাম জাতীয় খাদ্য এবং শক্ত ফল খেত। তারা নদী তীরবর্তী বনে অথবা শুষ্ক জায়গায় বাস করত। এর পর সাড়ে তিন ফুট থেকে পাঁচ ফুট লম্বা অস্ট্রালোপিথিকাস অ্যাফারেনসিস-দের (Australopithecus afarensis) আবির্ভাব হয়। এদের বাসস্থান ইথিওপিয়া এবং তানজেনিয়া অঞ্চলে ছিল। অস্ট্রালোপিথিকাস অ্যাফারেনসিস-এর উল্লেখযোগ্য উদাহরণ হল লুসি (Lucy)। ১৯৭৪ সালে ইথিওপিয়ার হাদার নামক স্থানে লুসির ৭৪টি হাড় আবিষ্কার করা হয়। লুসির খুলি ও মুখ ছিল এপ আকৃতির। সদ্য কৈশোর প্রাপ্ত বালিকা লুসির ছিল ছোট ক্যানাইন দাঁত, বৃহত্তর পোস্ট ক্যানাইন দাঁত এবং বোঁচা নাক।
সূত্র : বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সংসদ ও দফতর, পশ্চিমবঙ্গ সরকার
সর্বশেষ সংশোধন করা : 9/4/2019