মাসের পার্শ্ব একাদশীতে কখনও কখনও অগ্রহায়ণের পূর্ণিমা কিংবা ‘সহরায়’ উত্সবের আগে শস্যবীজের বন্দনা উত্সব হিসাবে একটু অন্য রকম উত্সব ‘জাওয়া করম’ অনুষ্ঠিত হয়। একাদশীর পাঁচ বা সাত দিন আগে অবিবাহিত মেয়েরা বাঁশের বোনা ছোট ছোট ডালায় (করম ডালা) বালি নিয়ে মুগ, কলাই, কুরথি প্রভৃতির দানা রোপন করেন। দু’ একদিনের মধ্যেই অঙ্কুরের উদগম হয়। একেই বলে জাওয়া। ব্রতীরা নানা আচারেরর মাধ্যমেও জাওয়ার চার পাশে ঘুরে ঘুরে গান গেয়ে জাওয়া জাগান। পঞ্চম দিনে নেচে নেচে এক গ্রাম থেকে আর এক গ্রামে জাওয়া ঘোরানো হয়। এক জন অবিবাহিত যুবককে নির্বাচিত করা হয় করম ডাল কাটার জন্য। সন্ধেবেলায় করম ডাল কাটা হয়। নতুন ডালাতে সলতে দেওয়া প্রদীপ নিয়ে মেয়েরা জমা হয় জাওয়া বেদীর কাছে। ভাইয়েরা বোনেদের সেই প্রদীপ জ্বেলে দেয়। এর পরই গ্রামের লায়া বা পুরোহিত অথবা লায়া-পত্নী করমপূজা করেন।
করমের পরের দিন পালিত হয় ইঁদ। এই দিন জাগুয়াকে জলে ভাসানোর মাধ্যমে করম গোঁসাই বিদায় নেন। জাওয়া করম এর সময় হয় দ্যাঁড় নাচ ও ভাদরিয়া ঝুমুর।
ছোটনাগপুর অঞ্চলের আদিবাসীদের কাছে অত্যন্ত আনন্দের উত্সব সারহুল বা বাহা উত্সব। বসন্তকালে ফাল্গুনী পূর্ণিমায় এই উত্সব পালিত হয়। আদিবাসী সম্প্রদায়ের জীবনে শালগাছ বিশেষ তাত্পর্যপূর্ণ। কথিত আছে অত্যাচারী মাধো সিং-এর হাতে অত্যাচারিত হয়ে বনে বনে পাহাড়ে পাহাড়ে অসহায় ভাবে ঘুরতে ঘুরতে সাঁওতালরা ফাল্গুনী পূর্ণিমার দিন আকাশের দিকে একটি তীর ছোড়েন। তীরটি পড়ে এক শালগাছের নীচে। সেখানটাই হয় তাদের স্থায়ী বাসস্থান আর তখন থেকেই তাদের ধর্ম ‘সারনা ধরম’। শালগাছ তাদের আশ্রয় দিয়েছিল বলে শালগাছকে বলা হয় ‘সারি সারজম (সত্য শাল)। ফাল্গুনী পূর্ণিমার ওই চাঁদের নাম হয় ‘বাহাচাঁদ’। সাধারণ বাহা উত্সব তিন দিন ধরে চলে। প্রথম দিনকে বলা হয় ‘উম’; দ্বিতীয় দিনকে বলা হয় ‘সার্দি’ আর তৃতীয় দিনকে বলা হয় ‘সেঁন্দরা’।
সুত্রঃ পোর্টাল কন্টেন্ট টিম
সর্বশেষ সংশোধন করা : 4/29/2020