ভগবান বুদ্ধের বা বুদ্ধদেবের জন্ম, বোধি লাভ এবং মহাপরিনির্বাণ — এই তিনটি ঘটনাই ঘটেছিল বৈশাখী পূর্ণিমাতে। আবার বৌদ্ধ সূত্র অনুযায়ী বুদ্ধদেবের স্ত্রী যশোধরা, সারথী চন্ন, শিষ্য আনন্দ এবং ঘোড়া কণ্টকও এই একই তিথিতে জন্মেছিলেন। বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের কাছে তাই বৈশাখী পূর্ণিমা বা বুদ্ধ পূর্ণিমা সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ উত্সব। বুদ্ধের জন্মদিন পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন দেশে পালিত হয় চিনা চান্দ্রবছরের চতুর্থ মাসের অষ্টম দিনে। হিসেব মতো সেটি কখনও এপ্রিলে, কখনও বা মে মাসে পড়ে। তবে লিপ ইয়ার হলে জুন মাসে পড়ে এই দিনটি। একমাত্র জাপানে এই দিনটি পালিত হয় প্রতি বছর এপ্রিল মাসের আট তারিখে। হংকং এবং ম্যাকাওয়ের মতো দক্ষিণ কোরিয়াতে বুদ্ধজয়ন্তী জাতীয় ছুটির দিন।
বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের নববর্ষ উৎসব লোসার নামে পরিচিতি। নববর্ষের প্রথম দিনের আগে পুরনো বছরের শেষ সাত দিন লোসার পালন করা হয়। সিকিমের রাজা সিগমে নমগিয়াল সিকিমে লোসার পালনের প্রথা এক মাস এগিয়ে আনেন। সিকিমে তাই ভারতের অন্যান্য জায়গার থেকে এক মাস আগে লোসার পালিত হয়। এই উত্সব সেখানে ‘সোনাম লোসার’ নামে পরিচিত। ‘লোসার’-এর সময় বাড়িঘর আলপনায় সজ্জিত হয়, রাতে বাড়িতে একটি প্রদীপ জ্বালানো হয়।
বৌদ্ধ সপ্তম চান্দ্র মাসের পঞ্চদশতম দিনে এই উত্সবটি পালিত হয়। কথিত আছে বুদ্ধের শিষ্য মউদগোল্যায়ন বা মোগিনলিন বা মোগগানাললা ও বুদ্ধের পরামর্শমতো তাঁর মা পূর্বপুরুষদের যাবতীয় পাপস্খালনের জন্য ও মুক্তির জন্য পাঁচ রকমের ফল, ধূপ, তেল প্রদীপ ইত্যাদি উত্সর্গ করেছিলেন। এই উত্সর্গের দিনটিই বৌদ্ধরা উললাম বানা হিসেবে পালন করেন। পূর্ব পুরুষদের ও বয়:জ্যেষ্ঠদের চিরমুক্তির কামনায় বিভিন্ন মনাস্ট্রিতে খাদ্য, ওষুধ, বস্ত্র দান করা হয়।
লাদাখের হেমিস মনাস্ট্রিতে ঘটা করে পালিত হয় বৌদ্ধ ধর্মগুরু পদ্মসম্ভবের আবির্ভাব দিবস। শুধুমাত্র লাদাখেই নয় ভারতের প্রায় সব মনাস্ট্রিতেই এই উত্সব পালিত হয়। পদ্মসম্ভব তিব্বতে বৌদ্ধ ধর্মের প্রচার করেছিলেন। এই দিন ‘দাদমোকারপো’ বা ‘রিমপোচে’–র ছবি বা মূর্তিকে পূজা করা হয়। সেই সঙ্গে বৌদ্ধসন্ন্যাসীরা ধর্মীয় মন্ত্রোচ্চারণ করেন। ড্রাম, করতাল, দীর্ঘকায় সানাইয়ের মতো বাঁশি সহযোগে মুখোশ নৃত্য এই উত্সবের অন্যতম অঙ্গ।
সুত্রঃ পোর্টাল কন্টেন্ট টিম
সর্বশেষ সংশোধন করা : 11/14/2019