শিখধর্ম[১] একটি একেশ্বরবাদী ধর্ম। খ্রিষ্টীয় পঞ্চদশ শতাব্দীতে পাঞ্জাব অঞ্চলে এই ধর্ম প্রবর্তিত হয়। এই ধর্মের মূল ভিত্তি গুরু নানক দেব ও তাঁর উত্তরসূরি দশ জন শিখ গুরুর (পবিত্র ধর্মগ্রন্থ গুরু গ্রন্থ সাহিব এঁদের মধ্যে দশম জন বলে বিবেচিত হন) ধর্মোপদেশ। শিখধর্ম বিশ্বের পঞ্চম বৃহত্তম ধর্মীয় গোষ্ঠী। শিখ ধর্মমত ও দর্শন গুরমত (অর্থাৎ, গুরুর উপদেশ) নামেও পরিচিত। শিখধর্ম কথাটির উৎস নিহিত রয়েছে শিখ শব্দটির মধ্যে; যেটি সংস্কৃত মূলশব্দ শিষ্য বা শিক্ষা থেকে আগত। শিখধর্মের প্রধান বক্তব্য হল ওয়াহেগুরু অর্থাৎ সর্বব্যাপী ঈশ্বরের প্রতীক এক ওঙ্কার-এর প্রতিভূ ওয়াহেগুরু-তে বিশ্বাস। এই ধর্ম ঈশ্বরের নাম ও বাণীর নিয়মবদ্ধ ও ব্যক্তিগত ধ্যানের মাধ্যমে মোক্ষলাভের কথা বলে। শিখধর্মের একটি বিশিষ্টতা হল এই যে, এই ধর্মে ঈশ্বরের অবতারতত্ত্ব স্বীকৃত নয়। বরং শিখেরা মনে করেন ঈশ্বরই এই ব্রহ্মাণ্ডের স্বরূপ। শিখেরা দশ জন শিখ গুরুর উপদেশ ও গুরু গ্রন্থ সাহিব নামক পবিত্র ধর্মগ্রন্থের অনুশাসন মেনে চলেন। উক্ত ধর্মগ্রন্থে দশ শিখ গুরুর ছয় জনের বাণী এবং নানান আর্থ-সামাজিক ও ধর্মীয় ব্যক্তিত্বদের বক্তব্য লিপিবদ্ধ রয়েছে। গুরু গোবিন্দ সিংহ এই গ্রন্থটিকে দশম গুরু বা খালসা পন্থের সর্বশেষ গুরু বলে ঘোষণা করে যান। পাঞ্জাবের ইতিহাস, সমাজ ও সংস্কৃতির সঙ্গে শিখধর্মের ঐতিহ্য ও শিক্ষা ওতোপ্রতোভাবে জড়িত। শিখধর্মের অনুগামীরা শিখ (অর্থাৎ, শিষ্য) নামে পরিচিত। সারা বিশ্বে শিখেদের সংখ্যা ২ কোটি ৬০ লক্ষের কাছাকাছি। শিখরা মূলত পাঞ্জাব ও ভারতের অন্যান্য রাজ্যে বাস করেন। অধুনা পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশেও ভারত বিভাগের পূর্বে লক্ষাধিক শিখ বসবাস করতেন।
১৬৯৯ সালে এই দিনেই শিখ সম্প্রদায়ের দশম গুরু গোবিন্দ সিং খালসা প্রতিষ্টা করেন। সাধারণত ১৩ এপ্রিল, প্রতি ছত্রিশ বছরে এক বার ১৪ এপ্রিল, বৈশাখী অনুষ্ঠিত হয়। প্রত্যেক গুরুদ্বারাতেই এই দিনে পবিত্র ‘গ্রন্থসাহেব’-এর অখণ্ড পাঠ করা হয়। গ্রন্থসাহেব নিয়ে শোভাযাত্রাও আয়োজন করা হয়। কৃপাণ হাতে পাঁচ জন ধর্মীয় নেতা (পঞ্চ্ পেয়ারে) শোভাযাত্রার নেতৃত্ব দেন। কীর্তন, তলোয়ার খেলা এবং ভাঙরা নাচের মাধ্যমে দিনটি আনন্ধময় হয়ে ওঠে।
শিখ সম্প্রদায় বছরে দশটি গরুপরব পালন করেন। প্রত্যেক পরবে দশ জন গুরুর এক একজনকে সম্মান জানানো হয়। অখণ্ড পাঠ, শোভাযাত্রা, পংক্তিভোজন, করসেবা সব গুরুপরব–এরই অঙ্গ।
প্রতিটি গুরুপরবই শিখদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ হলেও বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ হল গুরু নানকের জন্মদিন পালন। শিখ সম্প্রদায় একে ‘প্রকাশ উত্সব’ কিংবা ‘আলোর উত্সব’ও বলেন। কার্তিক মাসে গুরু নানকের জন্মদিনের একপক্ষ কাল আগে থেকেই অনুষ্ঠানের সূচনা হয়। নানকজয়ন্তীর দিন গুরুদ্বারায় অখণ্ড পাঠ আয়োজিত হয়। সকলেই সেদিন গুরুদ্বারায় যান। একটি বিশেষ ভক্তিগীতি ‘আসাজি দি বার’ গীত হয়। ‘আরদাস’ উচ্চারণের পর দুপুরে স্বেচ্ছাসেবকরা ‘গুরু কা লঙ্গর’-এর আয়োজন করেন। এই লঙ্গর-এ রান্না এবং পরিবেশনের দায়িত্ব নেন যাঁরা করসেবা করছেন তাঁরা। রাতে বাড়িতে বাড়িতে মোমবাতি/প্রদীপ জ্বালানো হয়।
সুত্রঃ পোর্টাল কন্টেন্ট টিম
সর্বশেষ সংশোধন করা : 6/28/2020