ভারতের সর্ব প্রথম সবাক চলচ্চিত্রটি নির্মাণ করেন আরদেশির ইরানি। ভারতীয় চলচ্চিত্রকে সাদাকালোর বৃত্ত থেকে রঙিন দুনিয়ায় নিয়ে আসার কৃতিত্বটাও তাঁর। ১৯৩৭ সালে আরদেশির ইরানি প্রযোজিত ও মতি বি. গিদভানি পরিচালিত ‘কিষাণ কানাইয়া’ ভারতের প্রথম রঙিন চলচ্চিত্র। ছবিটির চিত্রনাট্য লেখেন প্রখ্যাত পাকিস্তানি লেখক সাদাত হাসান মান্টো। তবে ভারতে রঙিন ছবি জনপ্রিয়তা লাভ করে ১৯৫৫ সালের পর। ভারতীয় চলচ্চিত্রে প্রথম চুম্বন দৃশ্যে অভিনয় করে চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেন অভিনেত্রী দেবিকা রানি ও হিমাংশু রায়। ১৯৩৩ সালে ‘কর্ম’ ছবিতে চার মিনিটের একটি চুম্বন দৃশ্যে অভিনয় করেন তখনকার সময়ে বাস্তব জীবনের এই স্বামী-স্ত্রী। হিমাংশু রায় পরবর্তীতে জার্মান পরিচালক ফ্রানৎস অস্টেনের সঙ্গে বেশ কয়েকটি চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন।
শুরুর দিকে ভারতীয় চলচ্চিত্রে দেশপ্রেম বিষয়টি প্রাধান্য পেয়েছিল। দেড়শো বছরের বিদেশি শাসনের বিরুদ্ধে অন্যতম প্রতিবাদের ভাষা হয়ে উঠেছিল চলচ্চিত্র। উপমহাদেশের স্বাধীনতা অর্জনে চলচ্চিত্র সাংস্কৃতিক আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছিল। আর তাই উপমহাদেশে প্রথম সেন্সর বোর্ডের সৃষ্টি হয়েছিল চলচ্চিত্রে অশ্লীলতা রোধে নয়, বরং ‘রাজনৈতিক’ বিষয় সেন্সর করার জন্য। ১৯২১ সালের ‘ভক্ত বিধুর’ চলচ্চিত্রটি রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটের কারণে প্রথম বারের মতো সেন্সর করা হয় বলে আশিস রাজধ্যক্ষ ও পল উইলমেন এনসাইক্লোপিডিয়া অব ইন্ডিয়ান সিনেমায় উল্লেখ করেছেন।
সম্প্রতি ছবিতে ৩০ শব্দ ব্যবহার নিষিদ্ধ করে একটি নির্দেশনামা জারির মাধ্যমে সেন্সর বোর্ড তাদের অবস্থানের কথা পরিষ্কারভাবে জানিয়ে দিয়েছে। এ নিয়ে বেশ তোলপাড় শুরু হয়েছে বলিউডে। অবশ্য এ নির্দেশনামা কিংবা নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি অস্বীকার করেছেন সেন্সর বোর্ডের এক সদস্য অশোক পণ্ডিত। তিনি বলেছেন, ‘আমি নিজেও একজন নির্মাতা। ছবিতে একটি চরিত্র ফুটিয়ে তুলতে কোনো নিয়মকানুনের মধ্যে বাঁধা থাকা যায় না।’ তার মতে, একজন পতিতাকে প্রফেসরের ভাষায় কথা বলতে দিলে পতিতার চরিত্র সঠিকভাবে ফুটিয়ে তোলা সম্ভব নয়। মহেশ ভাটসহ আরও অনেকেই ভারতীয় সেন্সর বোর্ডের এমন নির্দেশনামার ব্যাপারে ব্যাপক আপত্তি জানিয়েছেন। তাদের মতে, ভারত সৌদি আরব কিংবা ইরান নয় যে, ছবি নির্মাণের ক্ষেত্রে হাজারো নিয়ম-কানুন বেঁধে দেয়া হবে।
সূত্র : নাট্যচিন্তা, শতোত্তরবর্ষে বাংলা চলচ্চিত্র, নভেম্বর ২০১৩-এপ্রিল ২০১৪ সংখ্যা থেকে সংকলিত
সর্বশেষ সংশোধন করা : 1/28/2020