নৃত্য ও সঙ্গীত সব সময়ই ভারতীয় চলচ্চিত্রের অন্যতম মুখ্য উপাদান হলেও বিবর্তনের পথ ধরে কাহিনির গণ্ডি ছাপিয়ে বর্তমানে তা পরিণত হয়েছে নাচে-গানে ভরপুর মসালা ছবিতে। ভারতে নাচ-গান র্নিভর ছবির চলটা মূলত শুরু হয় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর। ১৯৪০-১৯৬০ সময়কালে রোমান্টিক চলচ্চিত্র প্রাধান্য পেলেও সামাজিক বিভিন্ন অসংগতি, শ্রেণি বৈষম্য ও রাজনৈতিক বিষয়গুলোও উঠে আসতে শুরু করে। এই সময়ে আগমন ঘটে ভারতীয় সিনেমার দুই বরপুত্রের। রাজ কাপুর আর গুরু দত্ত। পরিচালনা, প্রযোজনা, অভিনয়সহ চলচ্চিত্রে বহুমুখী ভূমিকা পালন করে তাঁরা দর্শকদের উপহার দিতে থাকেন একের পর এক অসাধারণ সব ছবি। এর মধ্যে গুরু দত্ত-ওয়াহিদা রহমান জুটির পেয়াসা (১৯৫৭), কাগজ কী ফুল (১৯৫৯), সাহেব বিবি গোলাম (১৯৬২), রাজ কাপুরের আগ (১৯৪৮), আওয়ারা (১৯৫১), শ্রী ৪২০ (১৯৫৫), জিস দেশ মে গঙ্গা বহতি হ্যায় (১৯৬০) বিশেষ ভাবে উল্লেখযোগ্য। তাঁদের হাত ধরেই ভারতীয় চলচ্চিত্রগুলো মূলত আন্তর্জাতিক ভাবে পরিচিতি পেতে শুরু করে। রাজ কাপুর-নার্গিস জুটি অভিনীত চলচ্চিত্রগুলো বলিউডে জুটি প্রথার প্রচলন করে দেয়। রাজ কাপুর তাঁর চলচ্চিত্রগুলো দিয়ে দেশের বাইরেও জনপ্রিয়তা লাভ করতে শুরু করেন। তাঁর নিজস্ব প্রোডাকশন হাউস আরকে প্রোডাকশন থেকে আশির দশক পর্যন্ত প্রচুর হিট ছবি উপহার দেন যার মধ্যে রয়েছে মেরা নাম জোকার, সঙ্গম, সত্যম শিবম সুন্দরম-এর মতো ছবি। এ ছবিগুলো একই সঙ্গে দর্শক ও বোদ্ধামহলের দারুণ প্রশংসা কুড়ায়। তিনি পরিণত হন ভারতীয় চলচ্চিত্রের কিংবদন্তিতে।
এ দিকে দুই ভাই চেতন আনন্দ আর দেব আনন্দ বলিউডকে নতুন ধারার ছবি দেখাতে শুরু করেন। হলিউড কায়দা-কানুন প্রবেশ করে বলিউডে আর দেব আনন্দ পরিণত হন বলিউডের সর্ব কালের অন্যতম এভারগ্রিন স্টাইলিশ আইকনে। দেব আনন্দের উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্রগুলো হল কালাপানি (১৯৫৮), কালা বাজার (১৯৬০), রূপ কি রানি চোর কা রাজা (১৯৬১), হম দোনো (১৯৬২), গাইড (১৯৬৫)।
প্রায় একই সময়ে ভারতীয় চলচ্চিত্র সন্ধান পায় আরেক কিংবদন্তির, দিলীপ কুমার। দেবদাস (১৯৫৫) ও মুঘল-ই-আযম (১৯৬০) ছবিতে অভিনয় করে তখন তিনি তারকাখ্যাতি উপেভোগ করছেন। ১৯৬০ সালে কে আসিফ দিলীপ কুমার, মধুবালা আর পৃথ্বীরাজ কাপুরকে নিয়ে তৈরি করেন বলিউডের সর্ব কালের অন্যতম সেরা ছবি ‘মুঘল-ই-আযম’। বলিউডের অন্যতম ব্যয়বহুল ছবি হিসেবেও ‘মুঘল-ই-আযম’ স্বীকৃত। তুমুল জনপ্রিয় সাদাকালো এই ছবিটিকে রঙিন করে পুনরায় ২০০৪ সালে মুক্তি দেওয়া হয়। দিলীপ কুমার-মীনাকুমারী জুটির ছবিগুলোও দারুণ ব্যবসা সফল হয়।
সূত্র : নাট্যচিন্তা, শতোত্তরবর্ষে বাংলা চলচ্চিত্র, নভেম্বর ২০১৩-এপ্রিল ২০১৪ সংখ্যা থেকে সংকলিত
সর্বশেষ সংশোধন করা : 1/28/2020