বলা হয়েছিল জোর দেওয়া হবে উন্নত মানের শিক্ষা, অপুষ্টি দূরীকরণ, উত্কৃষ্ট চিকিত্সার সুযোগ, শিশু সুরক্ষা, শিশুশ্রম নিবারণ প্রভৃতি বিষয়ে। অথচ লক্ষণীয়, উল্লেখিত প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রেই এ বারের বাজেটে বরাদ্দ কাটছাঁট হয়েছে, এমনকী গত বছরের তুলনায়ও। গত বাজেটে শিশুদের জন্য বরাদ্দের পরিমাণ ধার্য হয়েছিল মোট সরকারি ব্যয়ের ৪ .৫২ শতাংশ। এ বার তা এক ধাক্কায় নামিয়ে আনা হয়েছে অনেকটাই। টাকার পরিমাণের নিরিখে দেখতে গেলে, ’১৪-’১৫-র বাজেটে যা ছিল ৬৯,৮৮৮ কোটি টাকা, এ বার তা কমে হয়েছে ৫৭,৯১৯ কোটি। যদিও কেন্দ্রীয় অর্থদপ্তরের সাফাই, বাজেটে সাদা চোখে যাকে বরাদ্দ-সংকোচ বলে মনে হচ্ছে, তা রাজ্য বাজেট থেকে আসা সংস্থানের সঙ্গে যুক্ত করে দেখলে বোঝা যাবে যে, পরিস্থিতির বিশেষ পরিবর্তন হয়নি।
যদি বৃহত্তর পরিপ্রেক্ষিতে দেখা যায়, শিশুদের জন্য গত কয়েক বছরে কার্যকর হওয়া আইনগুলির সম্যক রূপায়ণের জন্যই বাজেটে যথাযথ সংস্থান জরুরি ছিল। কিন্তু সে পথে না হেঁটে বস্তুত দেশের ভবিষ্যতের প্রতি অমনোযোগ ও সদিচ্ছার অভাবের অভিযোগটিকেই সত্য প্রতিপন্ন করল কেন্দ্রীয় সরকার। হতে পারে আমার সামর্থ্য কম, হতে পারে আমার আরও নানা অগ্রাধিকার রয়েছে, কিন্তু হাতে যা পুঁজি রয়েছে তার যথাযথ ও বিবেচনাশীল প্রয়োগ না করার পক্ষে কোনও যুক্তিই খাড়া করা চলতে পারে না। বিশেষত তা যখন দেশের শিশুদের ভবিষ্যৎ গড়ে তোলার মতো গুরুতর বিষয়ের সঙ্গে জড়িত ? এই প্রসঙ্গে আমাদের দুই প্রতিবেশী দেশের দৃষ্টান্ত মনে এল। বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মতো দেশ, ভারতের তুলনায় আর্থিক সঙ্গতি যাদের নিতান্তই অকিঞ্চিত্কর, তারাও তাদের শিশুদের জন্য আমাদের তুলনায় অনেক বেশি খরচ করে। পাকিস্তানের ক্ষেত্রে (২০১০ থেকে ২০১৩-র হিসেব অনুযায়ী) পরিমাণটা তাদের নিজেদের জাতীয় বাজেটের ছ’ শতাংশ (আমাদের ক্ষেত্রে এ বার যেটা ৩.২৬)। আর বাংলাদেশের ক্ষেত্রে (২০১১, ২০১২-র পরিসংখ্যান অনুযায়ী) সেটা ১১ থেকে ১২ শতাংশ। সব শেষে আরও একটা কৌতূহলজনক তথ্য। অন্যান্য বড় দেশগুলোর কথা তো ছেড়েই দিলাম, এমনকী ত্রিনিদাদ-টোবাগো, ধনী দেশ বলে অপবাদ যাদের কেউ কোনও দিন দেয়নি, তারাও শিশুদের উন্নয়নে খরচ করে গড়ে ২২ শতাংশ (২০০৯ -’১০)।
আমরা স্বচ্ছ ভারত, সবুজ ভারত, সুদক্ষ ভারত, সুরক্ষিত ভারত ইত্যাদি নিয়ে ভেবে মরি, অথচ শিশুদের ভারত বরাবর আমাদের দৃষ্টিসীমার বাইরেই থেকে যায়!
সূত্র : এই সময়, ১২ মার্চ, ২০১৫
সর্বশেষ সংশোধন করা : 5/11/2020