নতুন সরকার ক্ষমতায় আসার পর দ্বিতীয় সাধারণ বাজেট, আরও সঠিক ভাবে বলতে গেলে বিজেপি-সরকারের প্রথম পূর্ণাঙ্গ বাজেট… সংসদে প্রবল গরিষ্ঠতা… সংস্কার কর্মসূচির ওপর জোর… স্বচ্ছতা ও দুর্নীতিমুক্ত ভবিষ্যতের দিকে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার পল্লবিত প্রতিশ্রুতি --- এ বারের বাজেট নিয়ে তাই সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা ছিল বিস্তর। মাত্র ন’মাস আগে ক্ষমতায় এসে নতুন সরকারের ঘোষিত অঙ্গীকার ছিল, দেশের ভবিষ্যৎ গড়ে তোলাই হবে প্রাথমিকতম কাজ। অথচ উন্নয়নের সেই মহাযজ্ঞে দেশের প্রায় ৪০ কোটি শিশুকে সামিল করার বিষয়ে সরকারের কোনও সচেতন উদ্যোগ এ বারের বাজেটে চোখে পড়ল না।
১২০ কোটির দেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় এক-তৃতীয়াংশকে হিসেবের বাইরে রেখে আদৌ সামগ্রিক উন্নয়নের পথে এগোন সম্ভব কি না, বা সে উন্নয়ন কত দূর ফলপ্রসূ হতে পারে, সে প্রশ্নও রইল। পাশাপাশি রইল এ তথ্যও যে, শিশুদের জন্য ব্যয়বরাদ্দের নিরিখে গত পাঁচ বছরের মধ্যে এ বারের বাজেট, সহজ পাটিগণিতের হিসেবেই, নিকৃষ্টতম--- মোট বাজেট-বরাদ্দের মাত্রই ৩ .২৬ শতাংশ!
সহজ কথায়, প্রতি ১০০ টাকার উন্নয়নযজ্ঞে শিশুদের জন্য সরকারি সংস্থান কুল্যে ৩ টাকা ২৬ পয়সা! কার্পণ্য এতটাই যে, ‘হাতে রইল পেনসিল’ বললেও অত্যুক্তি শোনাতে পারে! অথচ গত সাধারণ নির্বাচনে বিপুল জনাদেশ নিয়ে ক্ষমতায় আসার আগে দলীয় ইস্তেহারে শিশুদের জন্য বিজেপি-র খুব সুনির্দিষ্ট কিছু আশ্বাস ছিল।
বলা হয়েছিল জোর দেওয়া হবে উন্নত মানের শিক্ষা, অপুষ্টি দূরীকরণ, উত্কৃষ্ট চিকিত্সার সুযোগ, শিশু সুরক্ষা, শিশুশ্রম নিবারণ প্রভৃতি বিষয়ে। অথচ লক্ষণীয়, উল্লেখিত প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রেই এ বারের বাজেটে বরাদ্দ কাটছাঁট হয়েছে, এমনকী গত বছরের তুলনায়ও। গত বাজেটে শিশুদের জন্য বরাদ্দের পরিমাণ ধার্য হয়েছিল মোট সরকারি ব্যয়ের ৪ .৫২ শতাংশ। এ বার তা এক ধাক্কায় নামিয়ে আনা হয়েছে অনেকটাই। টাকার পরিমাণের নিরিখে দেখতে গেলে, ’১৪-’১৫-র বাজেটে যা ছিল ৬৯,৮৮৮ কোটি টাকা, এ বার তা কমে হয়েছে ৫৭,৯১৯ কোটি। যদিও কেন্দ্রীয় অর্থদপ্তরের সাফাই, বাজেটে সাদা চোখে যাকে বরাদ্দ-সংকোচ বলে মনে হচ্ছে, তা রাজ্য বাজেট থেকে আসা সংস্থানের সঙ্গে যুক্ত করে দেখলে বোঝা যাবে যে, পরিস্থিতির বিশেষ পরিবর্তন হয়নি।
সূত্র : এই সময়, ১২ মার্চ, ২০১৫
সর্বশেষ সংশোধন করা : 4/29/2020