‘আমি নিম্নোক্ত প্রস্তাবগুলি বিবেচনার জন্য পরিষদের সামনে পেশ করতে চাই...বেশির ভাগ সভ্য দেশের সরকার গণ শিক্ষার প্রসারের ক্ষেত্রে যে দায়িত্ব পালন করে থাকে আমাদের দেশের সরকারেরও সেই একই দায়িত্ব পালন করা উচিত। এর জন্য একটি সুবিবেচিত প্রকল্প গঠন করা এবং সেটা সম্পূর্ণ রূপায়িত না হওয়া অবধি চালিয়ে যাওয়া দরকার...দেশের লক্ষ লক্ষ শিশুর সুন্দর জীবন নির্ভর করছে এর ঊপর। সেই শিশুরা শিক্ষার সুযোগ পাওয়ার জন্য অপেক্ষা করছে...’
ভারতে ‘বিনামূল্যে বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষা’ চালু করার লক্ষ্যে ১৯১০ সালের ১৮ মার্চ গোপাল কৃষ্ণ গোখলে ইমপেরিয়াল লেজিসলেটিভ কাউন্সিল তথা রাজকীয় পরিষদীয় পরিষদের কাছে যে প্রস্তাবটি পেশ করেছিলেন, উপরোক্ত বক্তব্যটি তারই অংশ। নিম্নোক্ত ধারাবাহিক ঘটনাবলির প্রেক্ষিতেই এই উদ্যোগকে দেখতে হবে ---
১৮৭০- ব্রিটেনে পাস হল বাধ্যতামূলক শিক্ষা আইন
১৮৮২- ভারতীয় শিক্ষা কমিশন: ভারতীয় নেতৃত্ব গণ শিক্ষা ও বাধ্যতামূলক শিক্ষা আইনের দাবি তুলল।
১৮৯৩- বরোদার মহারাজা আমরেলি তালুকে ছেলেদের জন্য বাধ্যতামূলক শিক্ষা চালু করলেন।
১৯০৬- বরোদার মহারাজা বাকি রাজ্যেও বাধ্যতামূলক শিক্ষা চালু করলেন।
১৯০৬- ইমপেরিয়াল লেজিসলেটিভ কাউন্সিলের কাছে গোপাল কৃষ্ণ গোখলে বিনামূল্যে বাধ্যতামূলক শিক্ষা চালু করার আবেদন করলেন।
১৯১০- গোখলে প্রাইভেট মেম্বারস বিল আনলেন (প্রত্যাখ্যাত)।
১৯১৭- বিঠলভাই প্যাটেল বিলটি পাস করাতে সমর্থ হলেন -- বাধ্যতামূলক শিক্ষা সংক্রান্ত প্রথম আইনটি পাস হল (প্যাটেল আইন নামে পরিচিত)।
১৯১৮- ব্রিটিশ ভারতের প্রতিটি রাজ্যের আইন বইয়ে বাধ্যতামূলক শিক্ষা আইন স্থান পেল।
১৯৩০- উন্নত মানের শিক্ষার (পরিমাণের ঊপর গুরুত্ব কম দিয়ে) জন্য সুপারিশ করল হারটগ কমিটি। এতে প্রাথমিক শিক্ষার প্রসার ও উন্নয়নে বাধার সৃষ্টি হল।
অর্থের অভাব এবং আইন প্রচলনের ক্ষেত্রে দুর্বলতার জন্য এই ধরনের বহু উদ্যোগ গুরুত্ব দিয়ে কার্যকর করা হয়নি।
বছরের পর বছর ধরে পরিস্থিতি খারাপ হতে থাকায় ১৯৩৭ সালে মহাত্মা গান্ধী সর্বজনীন শিক্ষার জন্য এক সাড়া জাগানো আহ্বান জানান। তিনি সর্বজনীন শিক্ষার জন্য পর্যাপ্ত অর্থের সংস্থানের আবেদন করলে, সরকার জানায়, যদি আদৌ তা করা হয় তবে মদ বিক্রির রাজস্ব থেকেই করতে হবে। এর অর্থ হল, হয় তাঁকে মদ্যপান নিষিদ্ধ করার অবস্থান থেকে সরে আসতে হবে অথবা রাষ্ট্রের সাহায্যে সর্বজনীন শিক্ষার আবেদন ফিরিয়ে নিতে হবে। বিষয়টা তিনি খোলাখুলি ভাবে প্রকাশও করেছিলেন --- ‘নতুন সংস্কারের নিষ্ঠুর রূপটি হল, আমাদের ছেলেমেয়েদের শিক্ষা দেওয়ার জন্য আমাদের মদ বিক্রির রাজস্বের ঊপর নির্ভর করা ছাড়া গত্যন্তর নেই’ (হরিজন ৫,২২২)। তাঁর কথায় এই ‘শিক্ষার ধাঁধা’-র তিনি সমাধান করেন নিজেদের অর্থে শিক্ষার প্রস্তাব দিয়ে। যা পরবর্তীকালে ‘নই তালিম’ বলে পরিচিত হয়।
সর্বশেষ সংশোধন করা : 6/25/2020