১৯৪৬- গণপরিষদ কাজ শুরু করে।
১৯৪৭- কম খরচে ১০ বছরের মধ্যে সর্বজনীন প্রাথমিক শিক্ষার পথ ও উপায় খোঁজার জন্য (খের) কমিটি তৈরি হয়।
১৯৪৭- গণপরিষদের মৌলিক অধিকার সংক্রান্ত সাব কমিটি বিনামূল্যে বাধ্যতামূলক শিক্ষাকে মৌলিক অধিকারের তালিকায় যুক্ত করে। “২৩ নং ধারা - প্রতিটি নাগরিক বিনামূল্যে প্রাথমিক শিক্ষা পাওয়ার অধিকারী। রাষ্ট্রের দায়িত্ব হবে এই সংবিধান কার্যকর হওয়ার ১০ বছরের মধ্যে সব শিশুকে বিনামূল্যে বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষা দেওয়া তত দিন পর্যন্ত, যত দিন না তাদের বয়স ১৪ বছর হচ্ছে”।
১৯৪৭ (এপ্রিল)-গণপরিষদের উপদেষ্টামণ্ডলী বিনামূল্যে বাধ্যতামূলক শিক্ষার মৌলিক অধিকারকে বাতিল করে (খরচের কারণে)। এই ধারাটিকে ‘ন্যায়সম্মত নয়, এমন মৌলিক অধিকার’-এর তালিকায় যুক্ত করে (এই তালিকাকে পরবর্তীকালে ‘রাষ্ট্র পরিচালনার নির্দেশাত্মক নীতি’ নামাঙ্কিত করা হয়)।
১৯৪৯- গণপরিষদে বিতর্কের কারণে ৩৬ নং অনুচ্ছেদের প্রথম বাক্যটি বাদ দেওয়া হয়... ‘প্রতিটি নাগরিক বিনামূল্যে প্রাথমিক শিক্ষা পাওয়ার অধিকারী। রাষ্ট্রের দায়িত্ব...’-র পরিবর্তে বলা হয় ‘রাষ্ট্র চেষ্টা করবে...’। ‘প্রাথমিক’ শিক্ষা শব্দটি কেন বাদ দেওয়া হয় ? ... ‘১৪ বছরের নীচে কোনও শিশু যাতে কাজে যুক্ত না হয়, তাঁর জন্য ১৮ নং অনুচ্ছেদে ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। যদি কোনও শিশু ১৪ বছরের নীচে কোনও কাজে নিযুক্ত না হয়, তা হলে সে অবশ্যই কোনও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেরই আওতায় থাকবে। সেটাই ৩৬ নং অনুচ্ছেদের উদ্দেশ্য’ -- বি আর আম্বেদকর, ২৩ নভেম্বর, ১৯৪৯।
১৯৫০- শেষ পর্যন্ত ‘রাষ্ট্র পরিচালনার নির্দেশাত্মক নীতি’ র ৪৫ নং অনুচ্ছেদ গৃহীত হয় :
‘এই সংবিধান কার্যকর হওয়ার ১০ বছরের মধ্যে সব শিশুকে বিনামূল্যে বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষা দিতে রাষ্ট্র প্রয়াসী হবে, তত দিন পর্যন্ত, যত দিন না তাদের বয়স ১৪ হচ্ছে’।
এতে একটি ন্যায্য অধিকার মানা হল না। ৪৫ নং অনুচ্ছেদ যে অপর্যাপ্ত, তা উপলব্ধি করেছিলেন কে টি শাহ। ১৯৪৭ সালে তিনি এর বিরোধিতা করে যে নোট দেন তাতে বলেন :
‘এই ন্যায়সম্মত অধিকারের দ্ব্যর্থহীন ঘোষণা যদি এক বার করা যায়, তা হলে যাঁদের দায়িত্ব তাঁরা এটা কার্যকর করার পথ ও উপায় খুঁজবেন। যদি তাঁদের তেমন কোনও বাধ্যবাধকতা না থাকে, তা হলে তাঁরা তাঁদের নিষ্ক্রিয়তা, ঔদাসীন্য এবং অন্যান্য বিষয়কে ন্যায্যতা দেওয়ার জন্য নানা রকম অজুহাত দেবেন।’
যেন ভবিষ্যৎবাণী করেছিলেন কে টি শাহ। স্বাধীনতার পরবর্তী কালে ৪৫ নং অনুচ্ছেদের নিয়তি সম্পর্কে বলতে গিয়ে বিখ্যাত গান্ধীবাদী অর্থনীতিবিদ এল সি জৈন বলেছিলেন, ওই অনুচ্ছেদে যে সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছিল, সংবিধান কার্যকর হওয়ার পরবর্তী সেই ১০ বছরের মধ্যে একটিও বাজেট বক্তৃতায় শিক্ষা সম্পর্কে কিছু বলাই হয়নি। এর থেকেই স্পষ্ট হয় কেন অর্থের অভাবের কথা চিন্তা করে গান্ধী পর্যন্ত বিকল্প পথ নিয়ে ভাবতে শুরু করেন এবং বাবাসাহেব আম্বেদকরকে চূড়ান্ত সংবিধান থেকে ৩৬ নং অনুচ্ছেদের খসড়াটি তুলে নিতে হয়। ২০০৯-এর আইনের অনেকগুলি সীমাবদ্ধতা (যার মধ্যে রয়েছে ০-৬ এবং ১৪-১৮ বছর বয়সিদের আইনের বাইরে রাখা) সেই অর্থের অভাব সংক্রান্ত বিতর্ক থেকেই তৈরি হয়েছে। এমনকী এই আইন কার্যকর হওয়ার ভাগ্যটিও নির্ভর করছে পর্যাপ্ত অর্থ পাওয়া এবং তার যথাযথ ব্যবহারের ঊপর। এই পরিপ্রেক্ষিতে আশার আলো দেখাচ্ছে ২০১০ সালের ১ এপ্রিল জাতির উদ্দেশে দেওয়া প্রধানমন্ত্রীর অভূতপূর্ব ভাষণ, যেখানে তিনি বলেন -- এই আইন কার্যকর করতে অর্থের জোগানকে কখনও বাধা হয়ে দাঁড়াতে দেওয়া হবে না। আশা করাই যায়, জাতিকে দেওয়া প্রধানমন্ত্রীর এই প্রতিশ্রুতি, আগামী দিনে রাষ্ট্রীয় নীতিকেও পরিচালিত করবে।
সুপ্রিম কোর্ট ১৯৯৩ সালে বলে (উন্নিকৃষ্ণন ও অন্যান্য বনাম অন্ধ্র প্রদেশ রাজ্য ও অন্যান্য) বিনামূল্যে শিক্ষা ১৪ বছর বয়স না হওয়া পর্যন্ত যে কোনও শিশুর অধিকার। আদালতের পর্যবেক্ষণ ছিল, “এই দেশের নাগরিকদের শিক্ষা পাওয়ার মৌলিক অধিকার আছে। এই অধিকার ২১ নং অনুচ্ছেদের অন্তর্গত। যদিও এই অধিকার চূড়ান্ত নয়, এর বিষয়বস্তু ও মাপকাঠি ৪৫ ও ৪১ নং অনুচ্ছেদের সাপেক্ষে নির্দিষ্ট করতে হবে। অন্য কথায়, দেশের প্রত্যেক শিশু/নাগরিকের ১৪ বছর বয়স না হওয়া পর্যন্ত বিনামূল্যে শিক্ষা পাওয়ার অধিকার রয়েছে। তার পর তার শিক্ষার অধিকার রাষ্ট্রের আর্থিক ক্ষমতা ও বিকাশের সঙ্গে সম্পর্কিত।”
সর্বশেষ সংশোধন করা : 5/2/2020