উন্নিকৃষ্ণন মামলার রায় এবং শিক্ষার অধিকারের জন্য জনগণের দাবি, এই দুই ঘটনায় উৎসাহিত হয়ে ১৯৯৩ সাল থেকে পরপর সবকটি সরকার সংবিধান সংশোধন করে শিক্ষাকে মৌলিক অধিকারে পরিণত করার ব্যাপারে উদ্যোগী হয়। তার জেরেই ২০০২ সালে ৮৬ তম সংবিধান সংশোধনী হয়, যাতে নিম্নলিখিত অনুচ্ছেদগুলি সংবিধানে যুক্ত হয়-
১. নতুন অনুচ্ছেদ ২১ক যুক্ত হল --- সংবিধানের ২১ অনুচ্ছেদের নিম্নলিখিত অনুচ্ছেদ যুক্ত হবে :
“২১ক। রাষ্ট্র ৬ থেকে ১৪ বছর বয়সি সব শিশুর বিনামূল্যে বাধ্যতামূলক শিক্ষার ব্যবস্থা করবে, এমন ভাবে যা রাষ্ট্র আইন প্রণয়ন করে স্থির করবে।”
২. ৪৫ নং অনুচ্ছেদের জায়গায় নতুন বিকল্প অনুচ্ছেদ --- সংবিধানের ৪৫ নং অনুচ্ছেদের জায়গায় নিম্নোক্ত অনুচ্ছেদটি বসবে :
৬ বছরের নীচের শিশুদের যত্ন ও শিক্ষার ব্যবস্থা।
“৪৫। ৬ বছর পূর্ণ হওয়া পর্যন্ত সব শিশুর যত্ন ও শিক্ষার জন্য রাষ্ট্র প্রয়াসী হবে।”
৩. ৫১ক অনুচ্ছেদের সংশোধনী --- সংবিধানের ৫ক অনুচ্ছেদের (ঞ) ধারার পর নিম্নলিখিত ধারাটি যুক্ত করা হবে :
“(ট) ৬-১৪ বছর বয়সি শিশুর বাবা-মা বা অভিভাবককে শিশুর পড়াশোনার সুযোগ তৈরি করে দিতে হবে।”
নির্দেশমূলক নীতির ৪৫ নং অনুচ্ছেদে বলা ছিল ‘১৪ বছর বয়স পর্যন্ত’ এবং উন্নিকৃষ্ণন মামলার রায়ে বলা হয়েছে ‘যত দিন না সে ১৪ বছর বয়স পূর্ণ করছে’। এই দুই সংজ্ঞাতেই ০-৬ বছর বয়ঃসীমাকে ধরা হয়েছে। ২১ক অনুচ্ছেদে বয়ঃসীমাকে ৬-১৪ করা হয়েছে। এর দ্বারা ০-৬ বছরকে বাদ দেওয়া হয়েছে এবং একেই নির্দেশাত্মক নীতির নতুন অনুচ্ছেদে পরিবর্তিত করা হয়েছে। উন্নিকৃষ্ণন মামলার রায়ের আরও পর্যবেক্ষণ ছিল, ১৪ বছর বয়স পর্যন্ত শিক্ষার অধিকার রয়েছে এবং তাকে রাষ্ট্রের আর্থিক ক্ষমতার ঊপর নির্ভরশীল করে দেওয়া উচিত নয়। ২১ক অনুচ্ছেদ বলছে, এই আইন এমন ভাবে প্রযুক্ত হবে যা ‘রাষ্ট্র আইন প্রণয়ণ করে স্থির করবে’। অর্থাৎ এটা একটা আইনের ঊপর নির্ভরশীল, যা রাষ্ট্র চাইলে প্রণয়ণ করতে পারে। এই আইনটি হল, সেই আইন যা প্রণয়ণ হতে ৮৬ তম সংশোধনী পাস হওয়ার পর ৮ বছর লেগে গিয়েছিল। অতএব এই অধিকার প্রযুক্ত হতে, উন্নিকৃষ্ণন মামলার রায় ঘোষণার পর ১৭ বছর লেগে গেছে, তা-ও সেটা ৬ থেকে ১৪ বছর বয়সিদের জন্য। এটা মনে রাখা দরকার, যে সংসদের শিক্ষা বিষয়ক স্থায়ী কমিটির সুপারিশেই ৮৬ তম সংবিধান সংশোধনীকে ৬-১৪ বছরের মধ্যে সীমায়িত রাখা হয়েছিল, যার জেরে শেষ পর্যন্ত বয়ঃসীমা সীমাবদ্ধই থেকে যায়।
সর্বশেষ সংশোধন করা : 10/19/2019