শিশুদের জন্য বিনামূল্যে বাধ্যতামূলক শিক্ষা আইন, ২০০৯ পাস হওয়াটা ভারতের শিশুদের কাছে একটি ঐতিহাসিক মুহূর্ত।
এই আইন প্রতিটি শিশুর উন্নতমানের বুনিয়াদি শিক্ষার অধিকার নিশ্চিত করার ভিত্তি হিসেবে কাজ করবে এবং পরিবার ও সাধারণ মানুষের সহায়তায় রাষ্ট্র এই দায়িত্ব পালন করবে।
পৃথিবীর খুব কম দেশেই জাতীয় স্তরে এমন বিনামূল্যে ও শিশুকেন্দ্রিক, শিশু-বান্ধব শিক্ষার ব্যবস্থা রয়েছে।
৬-১৪ বছর বয়সি প্রতিটি শিশুর নিকটবর্তী কোনও স্কুলে বিনামূল্যে বাধ্যতামূলক বুনিয়াদি শিক্ষা পাওয়ার অধিকার রয়েছে।
বুনিয়াদি শিক্ষা পাওয়ার জন্য শিশু বা তার পরিবারকে কোনও প্রত্যক্ষ (স্কুলের মাইনে) বা পরোক্ষ (ইউনিফর্ম, বই, পরিবহণ, মিড ডে মিল) খরচ বহন করেত হবে না। বুনিয়াদি শিক্ষা শেষ না হওয়া পর্যন্ত সরকার স্কুলে পড়ার যাবতীয় খরচ বহন করবে।
আরটিই আইন, ২০০৯ স্কুলগুলিকে স্থানীয় সরকারি আধিকারিক, বাবা-মা, অভিভাবক এবং শিক্ষকদের নিয়ে স্কুল পরিচালন কমিটি তৈরি করতে বলেছে। এই কমিটি স্কুল উন্নয়ন পরিকল্পনা তৈরি করবে এবং সরকারি অনুদান যথাযথ ভাবে খরচ হচ্ছে কি না, সে দিকে নজরদারি করবে এবং স্কুলের পরিবেশের দিকে লক্ষ রাখবে।
আরটিই বলেছে, পিছিয়ে থাকা অংশের শিশুদের বাবা মা ও মহিলাদের ৫০ শতাংশ প্রতিনিধিত্ব কমিটিতে থাকতে হবে। ছেলে ও মেয়েদের আলাদা শৌচাগার, শিশুর স্বাস্থ্যের দিকে লক্ষ রাখা, পরিষ্কার জল প্রভৃতির মাধ্যমে স্কুলে শিশু-বান্ধব পরিবেশ বজায় রাখার জন্য কমিটিতে এই ধরনের প্রতিনিধিত্ব জরুরি।
শিক্ষার উপযুক্ত পরিবেশ বজায় রাখার জন্য প্রতিটি স্কুলকে অবশ্যই পরিকাঠামো ও শিক্ষক সংক্রান্ত নীতি মানতে হবে। প্রাথমিক স্তরে প্রতি ৬০ জন শিশুর জন্য ২ জন প্রশিক্ষিত শিক্ষক রাখতে হবে।
শিক্ষকদের নিয়মিত, নির্দিষ্ট সময়ে স্কুলে আসতে হবে, পাঠক্রম সংক্রান্ত নির্দেশিকা মানতে হবে, শেখার দক্ষতার মূল্যায়ন করতে হবে এবং অভিভাবক-শিক্ষক বৈঠক করতে হবে। স্কুলে কোন স্তর অবধি পড়ানো হয় তার ভিত্তিতে নয়, শিক্ষকের সংখ্যা নির্ভর করবে ছাত্রের সংখ্যার উপর।
শিশুর শেখার দক্ষতা বাড়ানোর জন্য রাষ্ট্র শিক্ষকদের সবরকম ভাবে সাহায্য করবে। স্কুলের গুণমান এবং সাম্য বজায় রাখার জন্য সাধারণ মানুষ ও নাগরিক সমাজ স্কুল পরিচালন কমিটির সঙ্গে যৌথ ভাবে কাজ করবে। আরটিই যাতে প্রতিটি শিশুর জীবনে সত্য হয়ে উঠতে পারে, সে জন্য রাষ্ট্র নীতি প্রণয়ন করবে ও উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করে দেবে।
আরটিই-র আর্থিক দায়িত্ব কেন্দ্র ও রাজ্য সরকার যৌথ ভাবে পালন করবে। কেন্দ্র খরচের হিসেব তৈরি করবে এবং রাজ্য তার প্রদেয় অংশ দেবে।
শিক্ষার অধিকার, যাদের কাছে পৌঁছনো সম্ভব হয়নি তাদের কাছে পৌঁছনোর একটি উপযুক্ত মঞ্চ। এর মধ্যে রয়েছে পিছিয়ে থাকে অংশ, যেমন শিশু শ্রমিক, অভিবাসী শিশু, বিশেষ প্রয়োজন আছে এমন শিশু এবং সামাজিক, সাংস্কৃতিক, অর্থনৈতিক, ভৌগোলিক, লিঙ্গগত, ভাষাগত এবং অন্যান্য কারণে পিছিয়ে রয়েছে এমন শিশু। আরটিই-র মূল লক্ষ্য উন্নত মানের শেখা ও শেখানো, এর জন্য প্রয়োজন ক্রমবর্দ্ধমান প্রচেষ্টা এবং যথাযথ সংস্কার।
দশ লক্ষেরও বেশি নব নিযু্ক্ত ও প্রশিক্ষণহীন শিক্ষককে আগামী ৫ বছরের মধ্যে প্রশিক্ষিত করা এবং চাকুরিরত শিক্ষকদের দক্ষতা বাড়িয়ে শিশু-বান্ধব শিক্ষা সুনিশ্চিত করার জন্য সৃজনশীল এবং ধারাবাহিক উদ্যোগের প্রয়োজন রয়েছে।
ভারতের যে ১৯ কোটি বালক বালিকা এই মুহূর্তে বুনিয়াদি শিক্ষায় যু্ক্ত রয়েছে, তাদের জন্য শিশু-বান্ধব শিক্ষা সুনিশ্চিত করতে সাধারণ মানুষ এবং পরিবারের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে।
গুণমান ও সাম্যতা বজায় রাখার জন্য বৈষম্য দূর করাটা জরুরি। এই লক্ষ্য পূরণের চাবিকাঠি হল জন্য প্রিস্কুলে বিনিয়োগ করা।
স্কুলের বাইরে থাকা ৮০ লক্ষ শিশুকে তাদের বয়স অনুযায়ী শ্রেণিতে নিয়ে আসা এবং তাদের স্কুলে রাখার ব্যাপারে সহায়তা করা এবং তাতে সফল হওয়ার জন্য নমনীয় ও সৃজনশীল পদ্ধতি গ্রহণ করাটা জরুরি।
এই আইনে শিশুর অধিকার সংক্রান্ত কী কী রক্ষাকবচ রয়েছে তা পর্যলোচনা করবে শিশুর অধিকার রক্ষা সংক্রান্ত জাতীয় কমিশন(এনসিপিসিআর), অভিযোগগুলির তদন্ত করবে এবং দেওয়ানি আদালতের সমান ক্ষমতাবলে মামলা চালাতে পারবে।
২০১০ সালের ১ এপ্রিলের পর ৬ মাসের মধ্যে শিশুর অধিকার রক্ষা সংক্রান্ত রাজ্য কমিশন (এসসিপিসিআর) বা শিক্ষার অধিকার রক্ষা কর্তৃপক্ষ (আরইপিএ) গঠন করার কথা রাজ্যগুলির। কোনও ব্যক্তি যদি অভিযোগ জানাতে চান, তা হলে স্থানীয় কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত ভাবে অভিযোগ জানাবেন।
এসসিপিসিআর বা আরইপিএ আবেদন সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নেবে। অপরাধ সংক্রান্ত মামলা চালাতে সংশ্লিষ্ট সরকারের ঠিক করে দেওয়া এক জন আধিকারিকের অনুমতি লাগবে।
সর্বশেষ সংশোধন করা : 4/29/2020
কী ভাবে প্রণীত হল আরটিই, তারই ইতিহাস এখানে।