আগামী ৩১ মার্চের পর থেকে রান্নার গ্যাসের সব গ্রাহককেই বাজার দরে সিলিন্ডার কিনতে হবে। গ্যাস পাওয়ার পরে ভর্তুকির টাকা গ্রাহকের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে সরাসরি পাঠাবে তেল সংস্থাগুলি। কিন্তু এখনও পর্যন্ত পশ্চিমবঙ্গের প্রায় ২১ লক্ষ গ্রাহক সেই ব্যবস্থার বাইরে রয়েছেন। তেল সংস্থাগুলির অবশ্য দাবি, নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে রাজ্যের সব গ্রাহকই ওই ব্যবস্থার আওতায় চলে আসবেন।
পূর্বতন ইউপিএ সরকারের মতো বর্তমানে কেন্দ্রের বিজেপি সরকারও গ্রাহকদের কাছেই বছরে ১২টি সিলিন্ডারের ভর্তুকির টাকা বণ্টনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বিজেপি সরকার অবশ্য জানায়, শুধুমাত্র ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থাকলেই গ্রাহক সেই তথ্যের ভিত্তিতে ভর্তুকির টাকা পাবেন। আধার নম্বর না-থাকলেও চলবে। তবে যাঁদের আধার নম্বর রয়েছে, তাঁরা ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের সঙ্গে সেটিও তেল সংস্থার কাছে জমা দিতে পারবেন।
তেল সংস্থা সূত্রের খবর, রাজ্যে তিনটি রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার মোট প্রায় ৯৩ লক্ষ গ্রাহকের মধ্যে এখনও পর্যন্ত ৭২ লক্ষ (৭৭.১২%) গ্রাহক সরাসরি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে কোটা-র সিলিন্ডারের ভর্তুকির টাকা পাওয়ার উপযুক্ত হয়েছেন। বাকি রয়েছেন এখনও প্রায় ২১ লক্ষ গ্রাহক। ইন্ডেন-এর এক কর্তার দাবি, বাকি গ্রাহকেরা যদি ঠিক সময়ে তাঁদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট-সহ প্রয়োজনীয় তথ্য জমা দেন, তা হলে তাঁদেরও ওই ব্যবস্থায় অন্তর্ভুক্ত করতে সমস্যা হবে না। তিনি বলেন, ‘‘গত আড়াই মাসে প্রায় ৭১% গ্রাহকের তথ্য নথিভুক্ত হয়েছে। ইউপিএ সরকারের আমলে আরও ৬% গ্রাহকের তথ্য নথিভুক্ত হয়েছিল। ফলে বাকি পড়ে থাকা গ্রাহকেরা তথ্য জমা দিলে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে তাঁদেরও এই ব্যবস্থায় আনতে সমস্যা হবে না।’’
তাঁদের অবশ্য দাবি, রাজ্যের অন্য জেলায় গ্রাহকদের ওই সব তথ্য নথিভুক্তির হার অনেক বেশি হলেও পিছিয়ে কলকাতা (৬৯%), হাওড়া (৭৪%), উত্তর ২৪ পরগণা (৭৫%) ও দক্ষিণ ২৪ পরগনার (৭৭%) মতো জেলাগুলি। এগিয়ে বাঁকুড়া (৮৭%), আলিপুরদুয়ার (৮৪%), পুরুলিয়া (৮৪%), কোচবিহার (৮২%), বীরভূম (৮২%), দার্জিলিং (৮২%)-এর মতো জেলাগুলি। তেল সংস্থাগুলির বক্তব্য, শহরাঞ্চলে এই তথ্য জমা দেওয়ার ক্ষেত্রে আগ্রহ অনেক কম। সেখানকার গ্রাহকদের প্রতি তাদের আর্জি, দ্রুত তথ্য জমা দিন তাঁরা।
তবে গ্রাহকদের একাংশের অভিযোগ, ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট এবং আধার সংক্রান্ত তথ্য দেওয়ার ক্ষেত্রে অনেককেই সমস্যার মুখে পড়তে হচ্ছে। অনেকেই দীর্ঘদিন আগে তথ্য জমা দিলেও এখনও তা নথিভুক্ত হয়নি। আবার অনেকেরই নিজের নামে গ্যাসের সংযোগ নেই। সে ক্ষেত্রে নাম বদল করতে গিয়েও গ্যাসের দোকানে হয়রানির মুখে পড়তে হচ্ছে। বলা হচ্ছে, আবেদনপত্রের সঙ্গে হলফনামা জমা দিতে হবে। যদিও তেল সংস্থাগুলি স্পষ্ট জানিয়েছে, এখন আর হলফনামা জমা দেওয়ার প্রয়োজন নেই। গত অক্টোবর থেকেই আবেদনপত্রও সরল করা হয়েছে। তবে জমা দেওয়া তথ্যে কোনও ভুল থাকলে তার দায় গ্রাহকের উপরেই বর্তাবে।
নিয়ম অনুযায়ী, এখনও বাকি থাকা ২১ লক্ষ গ্রাহক পুরনো নিয়মেই ভর্তুকির দামেই (কলকাতায় যা ৪১৯ টাকা) ভর্তুকির সিলিন্ডার পাচ্ছেন। কিন্তু ৩১ মার্চের পরে সকলকেই বাজার দরে সিলিন্ডার কিনতে হবে। সে ক্ষেত্রে যে-সব গ্রাহকের তথ্য ৩১ মার্চের মধ্যে নথিভুক্ত হবে না, তাঁরা ৩০ জুনের মধ্যে এই ব্যবস্থার আওতায় এলে তত দিনের মধ্যে যে ক’টি ভর্তুকির সিলিন্ডার কিনবেন, সেগুলির টাকা তখন পাবেন। কিন্তু ৩০ জুনের পরে যদি কেউ অন্তর্ভুক্ত হন, তা হলে তিনি ১ এপ্রিল থেকে ৩০ জুনের মধ্যে কেনা সিলিন্ডারের ভর্তুকির টাকা পাবেন না। যে-দিন নথিভুক্ত হবেন, তার পর থেকে এই সুবিধা পাবেন।
সূত্র : আনন্দবাজার পত্রিকা, ৪ মার্চ ২০১৫
সর্বশেষ সংশোধন করা : 2/14/2020