বায়োফুয়েল বা জৈব জ্বালানি এমন এক জ্বালানি যার শক্তি জৈবিক কার্বন স্থায়ীকরণ থেকে উদ্ভূত । দিনে দিনে জৈববস্তু রূপান্তরের মাধ্যমে উদ্ভূত এই জ্বালানির দিকে সাধারণ মানুষ ও বিজ্ঞানীদের মনোযোগ বৃদ্ধি পাচ্ছে। ক্রমাগত তেলের মুল্যবৃদ্ধি , জ্বালানি নিরাপত্তা বৃদ্ধির প্রয়োজনীয়তা ও গ্রিনহাউস গ্যাস যা খনিজ তেল থেকে নির্গত হয় তা সম্পর্কে উদ্বেগ এই মনোযোগ বৃদ্ধির কারণ। তাত্ত্বিক ভাবে জৈব জ্বালানি যে কোনও জৈবিক কার্বন উৎস হতে তৈরি করা যায়। তবে এখনও পর্যন্ত মূলত গাছপালা বা এ থেকে উদ্ভূত পদার্থ থেকে জৈব জ্বালানি উৎপাদন করা হয় আর এর উৎপাদনের জন্য যে পদ্ধতি ব্যবহার করা হয় তা হল পাইরোলাইসিস । পাইরোলাইসিস একটি তাপ-রাসায়নিক প্রক্রিয়া, যা অক্সিজেনের অনুপস্থিতিতে উচ্চ তাপমাত্রায় কঠিন জৈববস্তুকে তরলে পরিণত করে। অনেক ক্ষেত্রে পাইরোলাইসিস বর্জ্য নিষ্কাশনের সহজ উপায় হিসেবে বিবেচিত হতে পারে এবং যার মাধ্যমে জৈব জ্বালানি শক্তি পাওয়া যায়। আমাদের চার পাশে ফেলে দেওয়া বর্জ্য থেকে খুব সহজেই জ্বালানি উৎপাদন সম্ভব।
আহছানুল্লাহ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরকৌশল বিভাগের ছাত্ররা ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষার মাধ্যমে বর্জ্য থেকে সর্বোচ্চ পরিমাণের জ্বালানিযোগ্য তেল ও গ্যাস উৎপাদন করার চেষ্টা করছে। যেখানে ফেলে দেওয়া কাঠের গুঁড়ো বা কুচি বর্জ্য কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।
পরীক্ষাগারে বায়ুশূন্য চুল্লিতে ২৭০º -৩০০º সে. তাপমাত্রায় বর্জ্য উপাদান যেমন কাঠের গুঁড়ো বা কুচিকে অবিরত তাপ প্রদান করলে জৈব তেল এবং জৈব গ্যাস উৎপন্ন হয়। এ জন্য চুল্লিতে ক্রমাগত ১৫º সে./মিনিট হারে তাপমাত্রা বজায় রাখতে হয়। স্থানীয় ভাবে তৈরি করা স্টিলের বায়ুশূন্য চুল্লিটি লম্বায় ১২” ও চওড়ায় ৯”। চুল্লিটির সাথে কনডেনসর বা শীতলীকারক ব্যবহার করলে জৈব তেলের তুলনায় বেশি পরিমাণে জৈব গ্যাস পাওয়া যায়। যদি চুল্লিতে তাপমাত্রা আরও বৃদ্ধি করা যায় তবে প্রাপ্ত তরলের পরিমাণ আরও বৃদ্ধি পাবে। আমরা প্রাপ্ত জৈব তেলকে পাতন প্রক্রিয়ায় জলীয় বাষ্পশূ্ন্য করে ২য় স্তরের তেল পাই যা যে কোনও যান্ত্রিক যান বা যন্ত্রকে চালু রাখতে সক্ষম। পাশাপাশি প্রাপ্ত জৈব গ্যাসকে সরাসরি জ্বালানি গ্যাস হিসেবে ব্যবহার করা যায়। যদিও ধীরগতির এই প্রক্রিয়ায় ৬০০º সে. এর বেশি তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয় এবং এটি একটি উচ্চ বিনিয়োগের পদ্ধতি। তবুও তুলনামূলক সহজ এই পদ্ধতিতে ভালমানের জৈব জ্বালানি পাওয়া সম্ভব যা প্রকৃতিবান্ধব ।
বাংলাদেশের অভ্যন্তরে বিশাল পরিমাণের জৈববস্তু বর্জ্যে পরিণত হয়। এর কারণ শুধুমাত্র সাধারণ মানুষের অসচেতনতা এবং এই জৈববস্তুর সঠিক ব্যবহারের জায়গার অভাব। বাংলাদেশে প্রতি বছর প্রায় ১৫০ লক্ষ টন ধান উৎপাদিত হয়। এই ধানের কুঁড়ো থেকে পাইরোলাইসিসের মাধ্যমে ভোজ্যতেল উৎপাদন সম্ভব। বর্তমানে “ সফলা রাইস বার্ন অয়েল ” নামে বাজারে প্রাপ্ত তেলটি এই পদ্ধতিতেই উৎপাদিত। সারা দেশে অসংখ্য কাঠের কলে বর্জ্য হিসেবে ফেলে দেওয়া কাঠের গুঁড়া থেকে জ্বালানিযোগ্য তেল ও গ্যাস পাইরোলাইসিস প্রক্রিয়ায় পাওয়া সম্ভব। যা আমাদের জন্য একটি বিরাট সুযোগ। এ ভাবে বাণিজ্যিক ভাবে তেল ও গ্যাস উৎপাদন করতে পারলে আমাদের দেশের জ্বালানি খাতের সংকট অনেকাংশে কমে যেত। সে দিন আর বেশি দূরে নয় যখন আমরা পাইরোলাইসিস পদ্ধতিতে নবায়নযোগ্য জ্বালানি সরবরাহ করে দেশের অর্থনীতিতে বিরাট অবদান রাখব।
সূত্র : বাঁধ ভাঙার আওয়াজ ব্লগ, ৩ আগস্ট ২০১২
সর্বশেষ সংশোধন করা : 2/14/2020