বৃষ্টির জল সংরক্ষণ ও ভূগর্ভে জল রিচার্জ করার মাধ্যমে কী ভাবে পানীয় জলের ব্যবস্থা করা যায় তার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হামিরপুর।
উল্টোপাল্টা বৃষ্টিপাতের জন্য মধ্যপ্রদেশের বুন্দেলখন্ড এলাকাভুক্ত দাতিয়া জেলার দাতিয়া ব্লকের হামিরপুর গ্রামের অধিবাসীরা প্রায়শই খরাজনিত পরিস্থিতির সামনে পড়েন। ৬৪১ জন গ্রামবাসীর বেশির ভাগই তফশিলি জাতি বা উপজাতিভুক্ত। বৃষ্টিপাতের পরিমাণ এখানে ক্রমশ কমছে। দু’ দশক আগে বছরে গড়পড়তা ১০০ দিন বৃষ্টি হত। মোট ৭৪০ মিমি বৃষ্টি হত। এখন হামিরপুর বছরে ৪০ দিন বৃষ্টির মুখ দেখতে পায়। গড়পড়তা বৃষ্টির পরিমাণ কমে হয়েছে ৩৪০ মিমি।
সরকারের ‘সজলধারা’ কর্মসূচি অনুসারে গ্রামে জল আনার জন্য স্থানীয় গ্রামবাসীদের নিয়ে তৈরি হল গ্রামের জল ও স্বাস্থ্যবিধি কমিটি যা পায়জল সমিতি নামে পরিচিত হল। জল সমস্যা মোটানোর জন্য কমিটি ৪০ হাজার টাকা সংগ্রহ করল, কিন্তু তা সত্ত্বেও তাদের পরিকল্পনার অনুমোদন পাওয়া যাচ্ছিল না। বোঝা যাচ্ছিল পানীয় জলের সমস্যার সুচারু সমাধান না হলে গ্রামের অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নতি হবে না, কারণ জল আনতে অনেকটা সময় নষ্ট হত। জল আনতে হত বেশ কিছুটা দূর থেকে।
গ্রামবাসীরা সবাই মিলে নিজস্ব উদ্যোগে সুসংহত জলীয় উৎস ব্যবস্থাপনা নীতি গ্রহণ করলেন, যাতে ভূগর্ভস্থ জলের স্তরের উন্নতি ঘটানো সম্ভব হয় এবং ভবিষ্যতে গ্রামে জল সরবরাহ সুচারু ভাবে করা সম্ভব হয়। বৃষ্টির জল সংরক্ষণের জন্য একটি পরিকল্পনাও গ্রহণ করা হল যাতে একই সঙ্গে সংরক্ষণ ও ভূগর্ভে জল পাঠানো সম্ভব হয়। প্রতিটি বাড়িতে বৃষ্টির জল ধরে রাখার জন্য কাঠামো নির্মাণ করা হল। গোষ্ঠীর পরিত্যক্ত কুয়ো এবং টিউবওয়েলের মাধ্যমে জল ভূগর্ভে রিচার্জ করার ব্যবস্থা করা হল। এ ছাড়া চেক ড্যামও তৈরি করা হল।
গ্রামবাসীরা গ্রামের বাইরে একটি জায়গা খুঁজে বের করলেন। সেখান থেকে বাড়ি ও রাস্তা তৈরি করার জন্য প্রচুর মাটি তোলা হয়। ফলে সেখানে একটি বড় পুকুর তৈরি হল। এর ফলে সহজেই সেখানকার জল হ্যান্ডপাম্পগুলিকে ও ভূগর্ভের জলস্তরকে রিচার্জ করল। জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতর সেখানে একটি ডাইক কাম বোল্ডার বাঁধ নির্মাণ করল এবং আশেপাশের গ্রামের নালাগুলিতে চেক ড্যাম তৈরি করল। সেখান থেকে প্রচুর সংখ্যক হ্যান্ডপাম্পে জল রিচার্জ করা সম্ভব হল। গ্রামের পায়জল সমিতি ছাদের উপর বৃষ্টির জল ধরে রাখার জন্য কাঠামো নির্মাণেও নজর দিল। ছাদের সঙ্গে প্লাস্টিকের পাইপের সংযোগ করে সেই জল পিটে ধরে রাখার ব্যবস্থা করা হল। ৭৫টি বাড়ি, স্কুল ও অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে এই ধরনের ব্যবস্থা তৈরি হল। এর জন্য ‘পরহিত’ নামে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা প্রতি বাড়িপিছু ৫০০ টাকা করে দিয়েছে বাকি ১০০০-১২০০ টাকা প্রতিটি উপভোক্তা পরিবার দিয়েছে।
হামিরপুরের যাত্রা শুরু হয়েছিল প্রতিটি বাড়িতে যাতে ন্যূনতম নিরাপদ পানীয় জল পাওয়া যায় সেই লক্ষ্য নিয়ে। এই কারণেই সুসংহত জলসম্পদ ব্যবস্থাপনা নীতি গ্রহণ করা হয়। কালেক্রমে সেখানে জল রিচার্জিংয়ের বড় মাপের কাঠামো গঠন করা সম্ভব হল। এটি একটি দৃষ্টান্তস্বরূপ উদ্যোগ যাতে করে এক সঙ্গে অনেক মানুষের উপকার করা সম্ভব হয়েছে।
সূত্র : পিআইবি, ভারত সরকার
সূত্র : CGWB
সর্বশেষ সংশোধন করা : 2/14/2020
যেখানে ভূস্তরের মাটি অভেদ্য এবং যেখানে এক সঙ্গে প্...