চিরায়ত জ্ঞান এক ধরনের গোষ্ঠী–জ্ঞান, যে গোষ্ঠী প্রকৃত অর্থে কোনও একটি অঞ্চলের আদি জনগোষ্ঠী। এই সব আদি জনগোষ্ঠীর প্রাত্যহিক জীবনযাত্রায় প্রকৃতির বুক থেকেই তারা খুঁজে পেতে জোগাড় করে তাদের জীবনযাত্রার রসদ, খাদ্য থেকে ওষুধ পর্যন্ত, সব কিছু। আর এই যে জ্ঞান তারা তাদের দীর্ঘ জীবনচর্যার মাধ্যমে অর্জন করে তা প্রজন্ম পরম্পরায় প্রবাহিত হয় এই ভাবে শ্রুতিবাহিত হয়েই।
এই ভাবে বংশপরম্পরায় প্রবাহিত হতে হতেই এই সব জ্ঞান আরও সমৃদ্ধ হয়, মানুষের আরও কাজে লাগে এবং এই ভাবে বংশ পরম্পরায় প্রবাহিত হতে হতেই, এই সব জ্ঞান এক দিন সংশ্লিষ্ট গোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক পরিচয় চিহ্নের মতো হয়ে ওঠে।
চিরায়ত জ্ঞানগুলি অতএব আদি জনগোষ্ঠীগুলির প্রাত্যাহিক জীবনযাপনের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। আর সে কারেণই জীবনযাপনের প্রতিটি ধাপের সঙ্গেই জড়িত থাকে একটা না একটা জ্ঞানের চর্চা। কৃষির উত্পাদন কৌশল থেকে শুরু করে হস্ত শিল্পেরর চর্চা, গাছগাছড়ার ঔষধি গুণ সংক্রান্ত জ্ঞান থেকে শস্যবীজের মানোন্নয়ন ও সংরক্ষণ সংক্রান্ত অধিবিদ্যা, লোকনৃত্যের চর্চা থেকে পরিবেশ সুরক্ষার কৌশল — এই সবই চিরায়ত জ্ঞান ভাণ্ডারের সম্পদ। বিশ্ব মেধাসম্পদ সংগঠনের প্রদত্ত সংজ্ঞা অনুযায়ী, ‘কোনও জনগোষ্ঠীর জীবন যাপনের চিরাচরিত রীতিনীতির সঙ্গে জড়িত উত্পাদন কৌশল, দক্ষতা, আবিষ্কার, চর্চা — এই সব নিয়েই গড়ে ওঠে চিরায়ত জ্ঞানের ভাণ্ডার যা প্রজন্ম ক্রমে প্রবাহিত হয় ওই জনগোষ্ঠীর মধ্যেই।’ কোনও জনগোষ্ঠীর জ্ঞানের এই ভাণ্ডার তাই ধীরে ধীরে এক রকম ওই জনগোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যস্বরূপও হয়ে ওঠে।
অর্থাৎ সব মিলিয়ে কোনও জনগোষ্ঠীর জীবন ও জীবিকার ক্ষেত্রে চিরায়ত জ্ঞানের ভূমিকাটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অথচ এই জ্ঞান ভাণ্ডারই চুরি হয়ে যাচ্ছে অবাধে। এই সব জ্ঞানের কোনও লিখিত নথি না থাকাতেই সম্ভবপর হচ্ছে এই অবাধ লুণ্ঠন। চিরায়ত জ্ঞানের সুরক্ষার প্রশ্নটি তাই এই মুহূর্তে সারা পৃথিবী জুড়েই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে, বিশেষত সেই সব দেশের কাছে যাদের এই জ্ঞানের ভাণ্ডারটি অত্যন্ত সমৃদ্ধ।
সর্বশেষ সংশোধন করা : 1/15/2020