ভারতবর্ষ প্রাকৃতিক সম্পদে পরিপূর্ণ, তার মধ্যে হিমালয় পর্বত থেকে কন্যাকুমারিকা পর্যন্ত ব্যাপক ভাবে বিস্তৃত রয়েছে নানা বনৌষধি। এই বনৌষধি প্রাচীন কাল থেকে ব্যবহৃত হয়ে আসছে জীবের মঙ্গলার্থে বিশেষ করে রোগ যন্ত্রণার উপশমের জন্য। বিশ্ববাসীর হিতার্থে ভারতবর্ষ এই অতিমূল্যবান সম্পদ সারা বিশ্বে ছড়িয়ে দিয়েছে। কিন্তু পাশ্চাত্য ঔষধির প্রভাবে ভারতবাসী তাদের নিজের দেশের বনৌষধির যথার্থ মূল্য দিতে পারেনি এবং তার ফলে বনৌষধির যথার্থ প্রয়োগ দ্বারা ভারতীয় আয়ুর্বেদ চিকিৎসা পদ্ধতি সারা বিশ্বে যে সুনাম অর্জন করেছিল তা প্রায় লুপ্ত হতে বসেছে।
সুপ্রাচীন কাল থেকে ভারতের বেদজ্ঞ ঋষিগণ ভারতীয় ভেষজের গুণাগুণ সম্পর্কে অভিজ্ঞ ছিলেন। আয়ুর্বেদে এক শ্রেণির আয়ুর্বেদ-বিশেষজ্ঞের সন্ধান পাওয়া যায় যাঁরা সন্ন্যাসী বেশে দেশ বিদেশ ভ্রমণকালে জনসাধারণের মধ্যে ভেষজের প্রয়োগ করতেন। প্রাক বৌদ্ধযুগের বা তৎপরবর্তী কালের আয়ুর্বেদতন্ত্রে ও সংহিতাগ্রন্থে নানা প্রকার বনৌষধির উল্লেখ আছে। এ ছাড়া চরক, সুশ্রুত ও অষ্টাঙ্গহৃদয় সংহিতাতেও বনৌষধির সদ্বব্যবহার সম্পর্কে বিশদ আলোচনা রয়েছে।
আনুমানিক ৪৫০০-১৬০০ খ্রিস্টপূর্বে লিখিত ঋকবেদে ৬৭টি ভেষজ উদ্ভিদের উল্লেখ আছে। এর পর ২০০০-১৫০০ খ্রিস্টপূর্বে লেখা অথর্ববেদে ২৯০টি ভেষজ উদ্ভিদের কথা বলা আছে। এর থেকে বোঝা যায় যে ঋকবেদে লেখার আগেই মানুষ ভেষজ গাছগাছড়া ব্যবহার করত এবং পরবর্তীকালে তা বেদে লিপিবদ্ধ হয়। সময়ের পরিবর্তনের সঙ্গে ভেষজ গাছগাছড়ার ব্যবহার ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে এবং ১০০০-৮০০ খ্রিস্টপূর্বে লিখিত চরক-সংহিতা ও সুশ্রুত-সংহিতায় প্রায় ৭০০ ভেষজ গাছগাছড়ার উল্লেখ পাওয়া যায়। গৌতম বুদ্ধের চিকিৎসক মহর্ষি জীবক এই সময় ভেষজ গাছগাছড়া সম্পর্কে অধ্যয়ন করতে তক্ষশিলায় আসেন। শিক্ষান্তে মহর্ষি আত্রেয়র (জীবকের শিক্ষাগুরু) আদেশে জীবক, মানুষের খাদ্য ও ভেষজ ওষুধ হিসেবে কাজে লাগে এই রকম গাছের তালিকা তৈরি করার জন্য দেশের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে ঘুরে বেড়াতে থাকেন। কিন্তু তিনি নিরাশ হয়ে ফিরে এসে মহর্ষি আত্রেয়কে বলেন যে এমন কোনও গাছ তিনি খুঁজে পাননি যার কোনও ভেষজ গুণ নেই।
সূত্র : বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সংসদ ও দফতর, পশ্চিমবঙ্গ সরকার
সর্বশেষ সংশোধন করা : 4/28/2020