মানসিক স্বাস্থ্য আইনের ৪৩ নম্বর ধারায় বলা আছে, রোগী যদি আবেদন করেন এবং মেডিক্যাল বোর্ড যদি বিচার করে দেখে যে, তিনি সম্পূর্ণ সুস্থ, তা হলে তাঁকে নিজের দায়িত্বেই ছেড়ে দেওয়া যেতে পারে। কিন্তু এত দিন এই আইন প্রয়োগে উদ্যোগী হতে দেখা যায়নি স্বাস্থ্য দফতরকে। অবশেষে বিজয়গড়ের মীরা বিশ্বাসের ক্ষেত্রে ঠুঁটো জগন্নাথের ভূমিকা ভেঙে বেরিয়ে আসতে পেরেছে স্বাস্থ্য দফতর। সুস্থ হয়ে যাওয়া সত্ত্বেও তাঁর পরিবার দীর্ঘদিন তাঁকে বাড়ি ফিরিয়ে নিয়ে যেতে চায়নি। মীরাদেবীর ব্যক্তিগত আবেদনের ভিত্তিতেই তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হল মঙ্গলবার। রাজ্যের স্বাস্থ্য অধিকর্তা বিশ্বরঞ্জন শতপথী বলেন, “আমি লিখিত ভাবে সব মানসিক হাসপাতালে জানিয়ে দিয়েছি, এ বার থেকে এই নিয়ম মেনে চলতে হবে।” তাঁর বক্তব্য, সুস্থ হয়ে যাওয়া মানুষগুলিকে মানসিক ভাবে অসুস্থদের মধ্যে ফেলে রাখা যায় না। এটা অমানবিক। বাড়ির লোক হয়তো দায়িত্ব নিতে চাইছেন না। অন্য কেউ সেই মানুষটির ভার নিতে চাইলে এবং তিনি নিজে আবেদন করলে তাঁকে ছেড়ে দিতে হবে।
স্বামী নরেন্দ্র বিশ্বাসের আচমকা মৃত্যুর পরে মানসিক ভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ায় ১৯৯৫ সালে মীরাদেবীকে পিকনিক গার্ডেনের লুম্বিনী পার্ক মানসিক হাসপাতালে ভর্তি করিয়ে দেন বাড়ির লোকজন। তিন-চার বছর পরে অর্থাৎ ২০০০ সাল নাগাদ তিনি সুস্থ হয়ে যান। তা সত্ত্বেও পরিবারের তরফে তাঁকে বাড়ি ফেরাতে কেউ আগ্রহ দেখাননি বলে অভিযোগ। অজয়নগরে থাকেন তাঁর ছেলে মৃদুল বিশ্বাস। লুম্বিনীর সুপার তপন টিকাদার জানান, মৃদুলবাবুকে দীর্ঘদিন ধরে অনুরোধ করা হয়েছিল। কিন্তু তিনি অনুমতিপত্রে স্বাক্ষর করতে অস্বীকার করেন।
সুস্থ হয়ে যাওয়ার পরেও দীর্ঘ ১৪ বছর হাসপাতালে পড়ে থাকাটা ক্রমে অসহ্য হয়ে উঠছিল বছর পঁয়ষট্টির মীরাদেবীর কাছে। শেষ পর্যন্ত ২৪ ডিসেম্বর স্বাস্থ্য অধিকর্তার কাছে নিজেই চিঠি লিখে মুক্তি চান তিনি। এত দিন এই ধরনের আবেদন পেলে চুপ করে থাকত স্বাস্থ্য দফতর। এ বার ব্যতিক্রমী হয়ে উঠে ইতিবাচক ভূমিকা নেয় তারা। ২৬ ডিসেম্বর লুম্বিনীর সুপার তপন টিকাদার, চিকিৎসক গৌতম বন্দ্যোপাধ্যায়, অশোক মল্লিক, সুব্রত মল্লিককে নিয়ে মেডিক্যাল বোর্ড বসে। তারা মীরাদেবীর চিকিৎসার ইতিহাস ও কাগজপত্র খতিয়ে দেখে রায় দেয়, তিনি সম্পূর্ণ সুস্থ। তার পরেই বিশ্বাস পরিবারের অনুমতির অপেক্ষা না-করে তাঁকে ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে নেয় স্বাস্থ্য দফতর।
সূত্র : আনন্দবাজার পত্রিকা, ৩১ ডিসেম্বর ২০১৪।
সর্বশেষ সংশোধন করা : 2/14/2020