দরকার একটা ছোট্ট সইয়ের। নিজে করলে হবে না। চাই কোনও আত্মজনের সই। কিন্তু শুধু সেটুকুর অভাবে মনোরোগী সুস্থ হয়ে যাওয়ার পরেও নিজের ঠিকানায় ফিরতে পারেন না অনেক ক্ষেত্রেই। দিন পর দিন পড়ে থাকেন মানসিক হাসপাতালে। সুস্থ হয়ে আবারও অসুস্থ হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থেকে যায়। এই নয়া পদ্ধতিতে সেই সমস্যা এড়ানো সম্ভব হবে।
এত দিনে নিজের মুক্তির ছাড়পত্রে নিজে সই করার অধিকার পেলেন সুস্থ হয়ে যাওয়া ওই সব মানুষজন। সেই সইয়ের ভিত্তিতে মানসিক হাসপাতাল থেকে রোগীদের ছুটি দেওয়ার ব্যাপারে নজিরবিহীন সিদ্ধান্ত নিতে পারল রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতরও।
সুস্থ হওয়ার পরেও বেশির ভাগ ক্ষেত্রে মানসিক হাসপাতাল থেকে অনুমতিপত্রে সই করে নিকটজনকে ফিরিয়ে নিতে চান না অনেকে। সেই জন্য রোগীর মুক্তিপত্রে সইয়ের জন্য তাঁদের দেখা মেলে না। এত দিন সেই সইয়ের জন্য হাপিত্যেশ করে বসে থাকতে হত সুস্থ হয়ে যাওয়া মানুষটিকে। সই করার মতো আত্মীয়ের দেখা না-পেয়ে অসহায়ের মতো রোগীকে আটকে রাখতে বাধ্য হতেন হাসপাতাল-কর্তৃপক্ষও। সেই বাধা কাটানোর নজির হয়ে রইল কলকাতার লুম্বিনী পার্ক মানসিক হাসপাতাল। সেখানকার এক রোগিণীর আবেদনের ভিত্তিতে তাঁকে ছেড়ে দিয়ে। স্বাস্থ্য দফতরও এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছে। তারা জানিয়েছে, কবে আত্মীয়েরা দয়া করে এসে সই করে নিয়ে যাবেন, সেই অপেক্ষায় জীবন পার করার দিন শেষ। এ বার থেকে সব মানসিক হাসপাতালেই রোগীকে ছেড়ে দেওয়ার ক্ষেত্রে তাঁর নিজের সইয়ের নিয়মই মানা হবে।
এর ফলে একদিকে যেমন রোগীর ছুটি পাওয়ার সংক্রান্ত বাধা কাটবে তেমনি সুস্থ হয়ে যাওয়া রোগীর ভিড়ও কমবে হাসপাতালে। কারণ, অধিকাংশ ক্ষেত্রে সুস্থ হয়ে যাওয়া রোগী হাসপাতালেই থেকে যেতেন। ফলে, বাড়ত রোগীর সংখ্যা। রোগী ভর্তির ক্ষেত্রে সমস্যা দেখা দিত। নতুন এই ব্যবস্থায় সেই সমস্যা অনেকটাই মিটবে বলে মনে করছে, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
সূত্র : আনন্দবাজার পত্রিকা, ৩১ ডিসেম্বর ২০১৪।
সর্বশেষ সংশোধন করা : 7/6/2020