গত ৬ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় কৈচর ১ পঞ্চায়েতের এই গ্রামে বাসিন্দাদের সঙ্গে বৈঠক করতে যান বর্ধমানের অতিরিক্ত জেলাশাসক (সাধারণ) উৎপল বিশ্বাস। সঙ্গে ছিলেন চার জন অতিরিক্ত জেলাশাসক, মহকুমাশাসক (কাটোয়া) মৃদুল হালদার-সহ কয়েক জন প্রশাসনের কর্তা। সভায় রাস্তা, জল, স্বাস্থ্য পরিষেবার নানা সমস্যা নিয়ে আলোচনা চলছিল। তখনই বছর চল্লিশের ওই রোগিণী উঠে দাঁড়িয়ে খোলাখুলি বলেন, “আমি এইচআইভি আক্রান্ত বিধবা। চিকিৎসা করাতে গিয়ে সর্বস্বান্ত। গ্রামের মানুষের কাছে আর কত সাহায্য চাইব? এ বার আপনারা সাহায্য না করলে আর চলবে না।”
প্রথমটা থমকে যান আধিকারিকরা। কয়েক মুহূর্ত পর নীরবতা ভেঙে এক জন বলে ওঠেন, “আপনি যে সাহস করে এই রোগের কথা বললেন, তা অত্যন্ত প্রশংসনীয়।” এর পরেই কথার সূত্রে বেরিয়ে আসে, কী ভাবে তিন বছর যাবৎ ওই মহিলাকে সাহায্য করে আসছেন গ্রামবাসীরা। বলরামপুরের বাসিন্দাদের কথা থেকেই জানা যায়, ওই মহিলার স্বামী হাওড়া-নিমতা রুটে বাসচালক ছিলেন। বছর চারেক আগে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। শুরুতে ব্রেন টিউমারের চিকিৎসা হয়। কিন্তু তাতে ফল না হওয়ায় গ্রামের কয়েক জনই তাঁকে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে রক্ত পরীক্ষা করে জানা যায়, তিনি এইচআইভি আক্রান্ত। যাঁরা তাঁকে চিকিৎসা করাতে নিয়ে গিয়েছিলেন, সেই গ্রামবাসীর মাধ্যমে গ্রামের বাকিরা এই খবর জানতে পারেন। মহিলার স্বামীকে প্রথমে বর্ধমান, পরে কলকাতার আরজিকর হাসপাতালে চিকিৎসা করান তাঁরা। বছরতিনেক আগে সেখানেই তাঁর মৃত্যু হয়। এর পরে তাঁর স্ত্রী বর্ধমান মেডিক্যালে রক্ত পরীক্ষা করালে তাঁরও এইচআইভি পজিটিভ ধরা পড়ে।
বলরামপুর এর আগে কখনও এইচআইভি আক্রান্তকে দেখেনি। কিন্তু টেলিভিশন দেখে, গ্রামে আসা ‘আশা’ স্বাস্থ্য কর্মীদের থেকে শুনে গ্রামবাসীরা জেনেছিলেন, এ রোগ সহজে সংক্রামক নয়। রক্ত, লালা, দেহরসের সংযোগ ছাড়া কারও দেহে এ রোগ বাহিত হয় না। বর্ধমান মেডিক্যালের চিকিৎসক সুব্রত দত্তের অভিজ্ঞতাও বলছে, “সরকারি প্রচারের জেরে গ্রামের মানুষ এখন যথেষ্ট সচেতন।”
সর্বশেষ সংশোধন করা : 4/3/2020