সরকারি হাসপাতালের বেহাল পরিকাঠামোগত নানা সমস্যা রয়েছে মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে। তারই মধ্যে এখানে ‘হুইপলস’ বা ‘প্যানক্রিয়াটিকো ডুয়োডিরেকটমি’-র মতো জটিল অস্ত্রোপচার হল। এবং সফল ভাবেই হল। অস্ত্রোপচারের পরে রোগী শ্যামাপদ দাস অবশ্য ফ্যালসিপেরাম ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হয়েছেন। তবে ম্যালেরিয়া সেরে গেলে আর কোনও সমস্যা থাকবে না বলেই জানালেন শল্য বিভাগের চিকিৎসক অমিত রায়। তাঁর কথায়, “এই ধরনের অস্ত্রোপচার একটু বড় মাপের। তাই সাধারণ হাসপাতালে চিকিৎসকেরা ঝুঁকি নেন না। গরিব রোগীকে বাইরে রেফার করলে আরও বিপাকে পড়বেন। তা বুঝেই আমরা অস্ত্রোপচারের সিদ্ধান্ত নিই।”
খড়্গপুর লোকাল থানার খেলাড় পঞ্চায়েত এলাকার বাসিন্দা শ্যামাপদ দাস বহু দিন থেকেই নানা জায়গায় ঘুরে বেড়িয়েছেন। সকলেই জন্ডিস হয়েছিল বলে জানিয়েছিলেন। তবে চিকিৎসায় ফল পাননি শ্যামাপদবাবু। শেষে তিনি মেদিনীপুর মেডিক্যালের মেডিসিন বিভাগে ভর্তি হন। পরে তাঁকে শল্য বিভাগে স্থানান্তরিত করা হয়। পরীক্ষায় দেখা যায়, শ্যামাপদবাবুর পিত্তনালীর নীচে টিউমার হয়েছে। পিত্তনালী কাজ করতে না পারায় দেখা দিয়েছে জন্ডিস। দেখা দিয়েছে ক্যান্সারও।
সব দেখেশুনে গত ১২ ডিসেম্বর অমিত রায়ের নেতৃত্বে কুণাল সান্যাল, প্রসেনজিৎ ভট্টাচার্য, সৌমিত্র চক্রবর্তী, বাণী হেমব্রম, কৌশিক দত্ত-সহ চিকিৎসকদের একটি দল অস্ত্রোপচারের সিদ্ধান্ত নেন। পাকস্থলির এক তৃতীয়াংশ, পিত্তথলি ও পিত্তনালীর নীচের কিছুটা অংশ, ক্ষুদ্রান্ত, ডুয়োডেনাম, গল ব্লাডারের কিছুটা করে অংশও বাদ দিতে হয়। নতুন তিনটি চ্যানেলও করা হয়েছে শ্যামাপদবাবুর শরীরে। দীর্ঘ ৯ ঘন্টার অস্ত্রোপচার সফল হওয়ায় খুশি শ্যামাপদবাবুর ছেলে উত্তম। তিনি বলেন, “সামান্য জমি রয়েছে। চাষ করে কষ্টে সংসার চলে। বাইরে বাবার চিকিৎসা করাতে হলে ন্যূনতম ৩ লক্ষ টাকা খরচ হতই। চিকিৎসকদের অনুরোধ করেছিলাম। তাঁরা অনুরোধ রাখায় কৃতজ্ঞ।”
সূত্র : আনন্দবাজার পত্রিকা, ২২ ডিসেম্বর ২০১৪।
সর্বশেষ সংশোধন করা : 5/24/2020