আঘাত প্রতিরোধ ব্যবস্থা গ্রহন করা উচিত কেন?
- প্রতি বছর প্রায় ৭৫০,০০০ শিশু বিভিন্ন ধরনের আঘাতের ফলে প্রান হারায়। এছাড়াও ৪০০ মিলিয়ন শিশু এর আঘাত বেশ গুরুতর এবং এর ফলে অনেকেই সারা জীবনের জন্য শরীরের কোন অংশকে হারিয়েছে বা তাদের মাথার সমস্যা দেখা দিয়েছে। বর্তমানে বিভিন্ন আঘাত মৃত্যু বা পঙ্গু হয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে একটি বিশেষ কারন।
- বেশীর ভাগ আঘাতই আসে সাধারনত পড়ে যাওয়া, পুড়ে যাওয়া, জলে ডুবে যাওয়া বা পথ দূর্ঘটনা থেকে। এবং সাধারনত এগুলি বাড়ির মধ্যে বা তার আশে পাশে ঘটে থাকে। একটু সর্তক থাকলেই এগুলি প্রতিরোধ করা যায়।
প্রতিটি পরিবার এবং প্রতিবেশী প্রত্যেকেরই কি কি জানা উচিত আঘাত প্রতিরোধ এর জন্যঃ
- ১।শিশুদের অধিকাংশ দূর্ঘটনাই প্রতিরোধ করা যায় যদি তাদের বাবা-মা এবং চারপাশের লোকজন একটু যত্ন সহকারে তাদের দেখাশোনা করেন।
- ২।শিশুদের আগুন, রান্নার জিনিস, ইলেকট্রিক্যাল জিনিস পত্রের থেকে দূরে রাখা উচিত।
- ৩।শিশুরা যাতে খেলতে গিয়ে কোন উঁচু জায়গা যেমন ছাদ,জানালা, বা বারান্দা থেকে পড়ে না যায় সেদিকে দেখতে হবে।
- ৪।ছুরি,কাঁচি, বা কাঁচের গ্লাস যেগুলি বিপদের সম্ভবনা আছে, সেগুলি থেকে শিশুকে দূরে রাখা উচিত।
- ৫।শিশু যাতে কোন ছোট জিনিস মুখে না দেয় সেদিকে দেখা উচিত কারন এর ফলে তার গলায় ঐ জিনিসটি আটকে শ্বাসকষ্ট হতে পারে।
- ৬।বিভিন্ন ক্ষতিকারক বিষ,ওষধ,কেরোসিন প্রভৃতি শিশুর আয়ত্তের বাইরে রাখা উচিত যাতে সে এগুলি খেয়ে না ফেলে।
- ৭।শিশুদের জলের কাছাকাছি একা ছাড়া উচিত নয়। কারন তারা খুব কম জলেও দু মিনিটে ডুবে যেতে পারে।
- ৮।পাঁচ বছরের কম বয়সী বাচ্ছাদের রাস্তায় একা ছাড়া উচিত নয় , সব সময় তাদের সাথে কার ও থাকা উচিত এবং রাস্থায় চলা উচিত তা তাকে শেখান উচিত।
সহায়ক তথ্য
প্রধান তথ্য ১: অনেক বড়ো দূর্ঘটনা প্রতিরোধ সম্ভব যদি শিশুদের যত্ন সহকারে দেখাশোনা করা হয়
বাচ্চাদের ১৮ মাস থেকে চার বছর পর্যন্ত সব দূর্ঘটনাই বাড়িতে ঘটে। একটু সতর্ক থাকলে এগুলি আর ঘটে না।
বাড়িতে যে কারনে দূর্ঘটনা ঘটে তা হলঃ-
- স্টোভ,গ্যাস,রান্নার জিনিস, ইলেকট্রিকের জিনিস পত্র প্রভৃতি থেকে আগুনে পুড়ে যাওয়ার সম্ভবনা থাকে।
- বিভিন্ন ধারালো জিনিস যেমন ছুরি,কাঁচি, ভাঙা কাঁচের গ্লাস প্রভৃতি থেকে কেটে যেতে পারে।
- সিঁড়ি, জ়ানালা বা টেবিল থেকে পড়ে যেতে পারে।
- ছোট জিনিস মুখে দেওয়া ও গিলে ফেলার সম্ভবনা থাকে।
- বিভিন্ন পোকা মারার ওষধ,সাবান, কেরোসিন থেকে বিপদের সম্ভবনা থাকে।
- ইলেকট্রিক্যাল জিনিস থেকে বিপদের সম্ভবনা থাকে।
এই সব জিনিস যেগুলি থেকে বিপদ হতে পারে সেগুলি দূরে কোন ভালো জায়গায় রাখা উচিত যেখনে শিশু পৌছতে পারবে না।
শিশুকে অনেকক্ষন কোন ভারী কাজের মধ্যে রাখা উচিত নয়। তাকে সমস্থ্ররকম ক্ষতিকারক জিনিস থেকে দূরে রাখা প্রয়োজন।
প্রধান তথ্য ২ : বাচ্চাদের আগুন, রান্নার স্টোভ, লম্ফ এবং বৈদ্যুতিক যন্ত্র থেকে দূরে রাখা উচিত
বাচ্ছাদের আঘাতের একটা বড়ো অংশই অগুন থেকে আসে। তাই শিশুদের অগুন থেকে দূরে রাখা উচিত। যেমনঃ- রান্নার স্টোভ,গরম জল,গরম খাবার এগুলি থেকে দূরে রাখলে সহজেই এই বিপদ থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। তা না হলে বড়ো কোন বিপদ ঘটে যেতে পারে।
আগুনে পুড়ে যাওয়ার থেকে বাঁচার উপায় গুলি হলঃ-
- বিভিন্ন দাহ্যবস্তু থেকে বাচ্ছাদের দূরে রাখা।
- রান্নার স্টোভ বা গ্যাস উঁচু কোন জায়গায় রাখা।
- রান্নার গরম পাত্রগুলিকে শিশুর নাগালের বাইরে রাখা।
- পেট্রল,মোমবাতি,গরম আয়রন এগুলোকে শিশুর থেকে দূরে রাখা।
কোন ইলেকট্রিক্যাল জিনিসে শিশু হাত দিলে গুরুতর ভাবে আহত হতে পারে, তাই পাওয়ার সকেট গুল আবরণ যুক্ত হওয়া উচিত। ইলেকট্রিকের তার-এ শিশুকে হাত না দিতে দেওয়া। কারন এগুলি বিপদজনক।
প্রধান তথ্য ৩ : শিশুদের পছন্দের খেলার জায়গা যেমন ছাদ,জানালা,বা বারান্দা তাই এগুলিকে বিপদমুক্ত করে রাখা যাতে পড়ে না যায়।
পড়ে গিয়ে হাত পা ভাঙতে পারে, মাথায় আঘাত লাগতে পারে অথবা মৃত্যুও ঘটতে পারে।
এগুলি প্রতিরোধের উপায় হলঃ-
- শিশুকে উঁচ জায়গায় উঠতে উত’সাহিত না করা।
- বাড়ির সিঁড়িতে রেলিং লাগানো
- বাড়ি কে পরিস্কার পরিচ্ছন্ন রাখা।
প্রধান তথ্য ৪ :ছুরি,কাঁচি, ভাঙা কাঁচ বা কোন ধারালো জিনিস কোনো বড় দূর্ঘটনা ঘটাতে পারে, তাই এগুলি কে শিশুর আয়ত্তের বাইরে রাখা উচিত।
ভাঙা কাঁচ থেকে বিপদ হতে পারে। কেটে যেতে পারে। তাই শিশুকে এগুলি থেকে দূরে রাখা উচিত এবং শিশুর খেলার জয়গায় যাতে এগুলি না থাকে তা দেখা উচিত।
ছুরি,কাঁচি,ব্লেড ইত্যাদি থেকে শিশুকে সাবধান রাখা উচিত।এবং এগুলির ব্যবহার ঠিকঠাক শেখানো উচিত।
ধারাল ধাতুর বস্তু, বা জংধরা জিনিস থেকে ক্ষত সৃষ্টি হয়। তাই শিশুকে এগুলি থেকে সাবধানে রাখা উচিত।
শিশুকে ঠিকঠাক শিক্ষার মাধ্যমে আঘাতের হাত থেকে বাঁচানো সম্ভব। পাথর ছোঁড়া বা ধারালো জিনিস ব্যবহারের থেকে দূরে রাখা উচিত।
প্রধান তথ্য ৫ : শিশুরা ছোট জিনিস মুখে দিয়ে যাতে গিলে না ফেলে সেদিকে দেখা উচিত। এতে শ্বাসকষ্ট হতে পারে।
খেলার এবং ঘুমানোর জায়গায় ছোট জিনিস ফেলে রাখা উচিত নয়।
বাচ্চাদের কোন শক্ত খাবার বা কোন বীজযুক্ত জিনিস দেওয়া উচিত নয়।
বাচ্চাদের খাওয়ার সময় তাদের কাছে থাকা উচিত। এবং খবার গুলি ছোট ছোট করে দেওয়া উচিত।
কাশি,জোরে নিশ্বাস নেওয়া বা শ্বাস রুদ্ধ হয়ে যাওয়া খুব বিপদজ্জনক। এই ধরনের অসুবিধা হলে তাড়াতাড়ি ব্যবস্থা নেওয়া উচিত এবং শিশুর মুখে কিছু আছে কিনা দেখা উচিত।
প্রধান তথ্য ৬ :বিষাক্ত জিনিসপত্র , ঔষধ, অ্যাসিড এবং কেরোসিন জ়াতীয় জ়িনিস কখনো খাওয়ার জ়লের বোতলের মধ্যে রাখা উচিত নয়। এগুলো শিশুর নাগালের বাইরে রাখা উচিত।
পোকা মারার ওষধ,কেরোসিন,এছাড়া অন্যান বিষাক্ত জিনিস শিশুর প্রানহানি ঘটতে পারে বা পঙ্গু করে দিতে পারে।
কিছু কিছু বিষাক্ত জিনিস আছে যেগুলি শিশুর চোখে বা গায়ে পড়লে বা তার জামাকাপড়ের মধ্যে থাকলে ক্ষতিকারক হতে পারে। এতে শিশুর মৃত্যু বা মাথার গণ্ডগোল দেখা দিতে পারে।
শিশু যেন ভুল করে কোন মাদক দ্রব্য খেয়ে না ফেলে সেদিকে দেখা উচিত।
রাসয়নিক দ্রব্য বা ক্ষতিকারক ওষুধ শিশুর আয়ত্তের বাইরে কোন জায়গায় তালাবদ্ধ করে রাখা উচিত। যাতে শিশু সেখানে পৌঁছতে না পারে।
বড়দের ব্যবহৃত ওষুধ শিশুদের পক্ষে ক্ষতিকারক। তাই শিশুর জন্য নিদ্দিষ্ট ওষুধ-ই দেওয়া উচিত।
বেশী পরিমান বা অপ্রয়োজনীয় ওষুধ শিশুর পক্ষে ক্ষতিকারক।
অ্যাসপিরিন একটা বিপদজ্জনক জিনিস। এটা শিশুর থেকে দূরে রাখা উচিত।
প্রধান তথ্য ৭ : কোন জলের জায়গায় শিশুকে একা ছাড়া উচিত নয়। তাতে শিশুর ডুবে যাওয়ার ভয় থাকে। কোনো শিশু খুব সামান্য জ়লে ও ২ মিনিটের মধ্যে ডুবে মারা যেতে পারে।
- বিভিন্ন জলের পাত্র সর্বদা ঢেকে রাখা উচিত।
- সব শিশুকে সাঁতার শেখানো উচিত।
- শিশুকে একা সাঁতার কাটতে দেওয়া উচিত নয় বা দ্রুত সাঁতার কাটতে দেওয়াও ভালো নয়।
প্রধান তথ্য ৮ :পাঁচ বছরের নীচে বাচ্ছাদের একা রাস্তায় ছাড়া উচিত নয়, একাকী রাস্তায় তারা খুব বিপদজ়নক হয়। কিভাবে রাস্থায় চলতে হয় এটা শিশুদের শেখানো উচিত।
শিশুরা রাস্থায় দৌড়ানোর আগে ভাবে না। তাই পরিবারের উচিত শিশুদের প্রতি নজ়র রাখা।
রাস্তার ধারে শিশুদের বল খেলানো উচিত নয়।
রাস্থার ট্রাফিক আইন মেনে ফুটপাত দিয়ে চলা শেখানো উচিত।
রাস্থা পার হওয়ার সময় শিশুদের যেগুলি দেখা উচিত তা হলঃ-
- রাস্থার ধারে দাঁড়িয়ে
- দুদিক দেখে
- কোন যানবাহন আসছে কিনা লক্ষ্য করে
- অন্য কারো হাত ধরে
- রাস্থা পেরোনো।
একটু বড়োদের ক্ষেত্রে বাই-সাইকেল অ্যাকসিডেন্টে খুব সাধারন ব্যাপার।তাই বাবা-মায়ের উচিত তাদের বাচ্ছা ঠকঠাক বাই-সাইকেল চলতে পারে কিনা তা দেখা।
শিশুরা যদি গাড়ির সামনের আসনে বসে তা তাদের পক্ষে বিপদ হতে পারে।
সুত্রঃ UNICEF