ক্যানসার শল্যচিকিৎসক গৌতম মুখোপাধ্যায় বলছেন, যাঁরাই পানের নেশা করেন, সাধারণত মুখের কোনও এক পাশে পান গুঁজে রাখেন। দীর্ঘদিন ধরে এ ভাবে চলতে চলতে এক সময় মুখের ভিতর, গালের যে পাশে তিনি পান রেখে দেন, সেখানে সাদা-কালো দাগ হতে থাকে। সাদা দাগগুলোকে বলে লিউকোপ্লেকিয়া। আর কালো দাগগুলো মেলানোপ্লেকিয়া। এগুলোই ক্যানসারের সুনির্দিষ্ট পূর্বলক্ষণ।
এর পরেই ধীরে ধীরে ঘা হতে শুরু করে মুখে। মুখের ভিতরের গোলাপি অংশ ক্রমশ শক্ত হয়ে যায়। একে বলে সাবমিউকোসাল ফাইব্রোসিস। দুর্গন্ধ বেরোতে থাকে। সেই সঙ্গে অসহ্য যন্ত্রণা। ক্যানসার চিকিৎসক সুবীর গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, “ঘা হয়ে গিয়ে মুখের হাঁ ক্রমশ ছোট হয়ে যায়। ফলে আক্রান্ত ব্যক্তি ঠিক মতো মুখ খুলতে পারেন না। খাবার জমতে জমতে ঘা আরওই বাড়তে থাকে।” ক্রমে মুখের বাইরেও ঘা হয়ে যায়। তার পর ক্যানসার নামতে থাকে গলায়। ক্রমশ ছড়াতে থাকে শ্বাসনালী, ফুসফুস, শরীরে অন্য অংশে।
চিকিৎসকদের বক্তব্য, রোগ মুখেই সীমাবদ্ধ থাকলে বিপদ তুলনামূলক কম। মৃত্যুভয় সে অর্থে থাকে না। তবে অঙ্গহানি ঘটে। ডাক্তাররা অস্ত্রোপচার করে মুখের আক্রান্ত অংশ বাদ দিয়ে দেন। দেহের অন্য অংশ থেকে মাংস নিয়ে প্রতিস্থাপন করা হয় মুখে। পুনর্গঠিত চেহারা অবশ্য একেবারে আগের মতো হয় না। চেহারার বিকৃতি ছাড়াও চলে যেতে পারে গলার স্বর।
এই অবস্থায় পান খাওয়ার নেশা যাঁদের রয়েছে, কী করা উচিত তাঁদের? চিকিৎসকমহলের জবাব “নেশা ছাড়ুন।” তাঁরা জানাচ্ছেন, নিজেরাই মুখের ভিতরটা পরীক্ষা করে দেখুন, সাদা-কালো দাগ রয়েছে কি না। মুখ ঠিকমতো হা করতে পারছেন কি না, সেটাও দেখার। বিপদ আন্দাজ করলেই, ফেলে না রেখে বিশেষজ্ঞ-পরামর্শ নিতে বলছেন ডাক্তাররা।
কিন্তু বহু ক্ষেত্রেই লোকে বলেন, ‘পান পাতার তো গুণও রয়েছে’! তবে কেউ যদি শুধু পান পাতা খান? ‘ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব বায়োমেডিক্যাল জিনোমিকস’-এর অধিকর্তা পার্থপ্রতিম মজুমদারের দাবি, “শুধু পান পাতা কেউ খেতেই পারেন। তার থেকে ক্যানসার হয় বলে জানা নেই। তবে জর্দা তামাকজাত। তাতে মারাত্মক ক্ষতি।” বাস্তবিক। এ যাবৎ বিষয়টি নিয়ে যা গবেষণা হয়েছে, তার সবেতেই পান-সুপুরি-জর্দা এক সঙ্গে খেলে ক্যানসার হতে পারে, সেই আশঙ্কার কথা রয়েছে। কিন্তু কেউ যদি শুধু পাতা খান, তারও কি ক্যানসার হবে? উল্লেখ নেই অতীত গবেষণায়। তবে গৌতমবাবু বলছেন, পুরো বিষয়টাই এড়িয়ে যাওয়া ভাল। তা ছাড়া, শুধু পান পাতা খাওয়ার নেশা কে-ই বা করেন! সুবীর গঙ্গোপাধ্যায় যেমন জানাচ্ছেন, পান চিবোলেই, একটা গাল ক্ষয়ে যাওয়া অনুভূতি হয়। এর অর্থ, গালের ভিতরের পর্দা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। চিকিৎসক মহলের বক্তব্য, সচেতনতা তৈরি না হলে মানুষকে এ সব বোঝানো অসম্ভব। “দরকার হলে জিভের স্বাদ বদলাতে সাময়িক ভাবে মুখে জোয়ান, মৌরী রাখুন। কিন্তু যে ভাবে হোক, নেশা ত্যাগ করুন।” বলছেন ডাক্তাররা। যাঁরা মাঝেমধ্যে পান খেয়ে থাকেন, তাঁদের জন্যও ডাক্তারদের সাবধানবাণী কখনওই মাসে একটা-দু’টোর বেশি নয়।
তাই ফিল্মে যতই বলা হোক না কেন, ‘অকল’ থাকলে ‘পান বানারসওয়ালা’ এড়ানোই ভাল।
সূত্র : সায়ন্তনী ভট্টাচার্য, আনন্দবাজার পত্রিকা, ২৩ ফেব্রুয়ারি
সর্বশেষ সংশোধন করা : 2/14/2020