বাজারচলতি বেশ কিছু নামীদামি অ্যান্টিবায়োটিকের প্রয়োজনীয়তা এবং কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন তুলল কেন্দ্রীয় ড্রাগ কন্ট্রোলের বিশেষজ্ঞ কমিটি। বেশ কিছু দিন ধরেই এই কমিটি ওষুধের যুক্তিসঙ্গত ব্যবহার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে কাজ করে আসছে। সেই সূত্রেই তারা এই ওষুধগুলি কতটা যুক্তিসঙ্গত, তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করল। আর শুরুতেই জনপ্রিয়তম অ্যান্টিবায়োটিক অ্যামক্সিসিলিনের একগুচ্ছ কম্বিনেশনকে অযৌক্তিক (ইর্যাশনাল) আখ্যা দিল কেন্দ্রীয় ওই বিশেষজ্ঞ কমিটি। মামুলি সর্দিকাশি থেকে শুরু করে শ্বাসনালী কিংবা ত্বকের সংক্রমণ অথবা পেটের সমস্যায় এই ওষুধগুলি হরদম প্রেসক্রিপশনে লেখেন চিকিত্সকরা।
আগামী দিনে হয়তো এই ওষুধ লেখা বন্ধই করতে হবে ডাক্তারবাবুদের। কেননা, ভারতীয় প্রেক্ষাপটে অ্যামক্সিসিলিনের ওই সব ‘ফিক্সড -ডোজ কম্বিনেশন’-এর আদৌ তেমন বিজ্ঞানসম্মত প্রাসঙ্গিকতা নেই বলে সম্প্রতি উল্লেখ করেছে সেন্ট্রাল ড্রাগ স্ট্যান্ডার্ড কন্ট্রোল অর্গানাইজেশন (সিডিএসসিও)-এর এক্সপার্ট কমিটি। তাদের নিদান --- জীবাণু নিধনে শুধু অ্যামক্সিসিলিনের যা ভূমিকা, তা কোনও অংশে কম নয় অ্যামক্সিসিলিনের সঙ্গে নানা যৌগের (ক্লোক্সাসিলিন, ডাইক্লোক্সাসিলিন ইত্যাদি) কম্বিনেশনের তুলনায়। এমনকী, বেশ কিছু ক্ষেত্রে ওই কম্বিনেশনগুলি শুধুমাত্র অপ্রয়োজনীয়ই নয়, ক্ষতিকারকও বটে। তা হলে শুধু (সিঙ্গল) অ্যামক্সিসিলিনের বদলে অযথা কেন রোগীরা বেশি দামে কিনবেন ওই কম্বিনেশনের ওষুধ? সিডিএসসিও-র ওই এক্সপার্ট কমিটির সদস্যরা জানিয়েছেন, যে কম্বিনেশনগুলি ভারতীয় বাজারে বিক্রি হয়, সেগুলিকে ‘শুধু অ্যামক্সিসিলিনের চেয়ে বেশি কার্যকর’ বলে সংশ্লিষ্ট কোম্পানিগুলি দাবি জানালেও তার সপক্ষে কোনও প্রমাণ তারা দাখিল করতে পারেনি। এক সিডিএসসিও কর্তা বলেন, ‘ওই সংস্থাদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, অবিলম্বে তারা যেন এই কম্বিনেশনের সপক্ষে প্রমাণ দাখিল করে। অন্যথায় এই কম্বিনেশনকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে কোম্পানিগুলির সংশ্লিষ্ট ড্রাগ লাইসেন্স বাজেয়াপ্ত করা হতে পারে।’ কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের অধীন ‘র্যাশনাল ড্রাগ ইউজ কমিটি’র উপদেষ্টা রঞ্জিৎ রায়চৌধুরীর কথায়, ‘অ্যান্টিবায়োটিক প্রোটোকল-সহ ওষুধের যুক্তিসঙ্গত প্রয়োগ নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই নানা ভাবনাচিন্তা চলছে। এই পদক্ষেপ তারই অন্যতম। আগামী দিনেও ধাপে ধাপে বিভিন্ন অ্যান্টিবায়োটিকের অপপ্রয়োগ রুখতে আরও কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ ওষুধ বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, দেশের যে ১৮০টি ওষুধ কোম্পানি অন্তত ২৬৮টি ব্র্যান্ডনেমে অ্যামক্সিসিলিনের এই সব অযৌক্তিক কম্বিনেশনগুলি বিক্রি করে প্রচুর মুনাফা করছে, তারা আদৌ এর সপক্ষে কোনও যুক্তিসঙ্গত প্রমাণ পেশ করতে পারবে না। ফলে আগামী দিনে নিষিদ্ধই হতে চলেছে ওই কম্বিনেশনগুলি।
সূত্র : অনির্বাণ ঘোষ, এই সময়, ২ এপ্রিল ২০১৫
সর্বশেষ সংশোধন করা : 7/13/2020