অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর সাগরতীর্থ সরকার বলেন, একটি আনুবীক্ষণিক মাপের ষড়ভূজ বাহন তৈরি করা হয়েছে। যা অনেকটা ড্রোনের মতোই তার তিনটি পায়ে কার্ডিও মায়োপ্যাথির একটি ওষুধ এবং তিনটি পায়ে দেহের মধ্যে পি-৫৩ জিনের (এই জিনের জন্য কোষ বিভাজন নিয়ন্ত্রিত থাকে। তার ফলে টিউমার তৈরি হয় না) কাজ বন্ধ করার রাসায়নিক দেওয়া রয়েছে। ওই বাহনের সামনে রয়েছে একটি বিশেষ রাসায়নিক। যেটি বাহনটিকে সরাসরি হৃৎপিণ্ডে পৌঁছে দেবে। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকদের দাবি, এর ফলে দেহের অন্য জায়গায় ওই ওষুধ বা জিনটি বন্ধ হওয়ার কোনও প্রতিক্রিয়া পড়বে না। প্রাথমিক ভাবে সাগরতীর্থবাবুরা ইঁদুরের উপরে এই পরীক্ষা করেছেন।
কিন্তু মানুষের উপরে এই প্রক্রিয়া সফল হবে কি? সাগরতীর্থবাবুর ব্যাখ্যা, প্রাথমিক ভাবে ইঁদুরের উপরে পরীক্ষা হয়েছে। পরবর্তী কালে মানবদেহেও এই পরীক্ষা করা হবে। সাধারণত যে কোনও রোগের কোনও নতুন ওষুধ, নতুন প্রযুক্তি এবং জিনতত্ত্বের পরীক্ষা সাদা ইঁদুরের উপরেই হয়। কারণ শারীরবৃত্তীয় ভাবে মানুষের সঙ্গে সাদা ইঁদুর একই গোত্রীয়। শারীরবিজ্ঞানীরা বলছেন, ইঁদুরের উপরেই এ ধরনের পরীক্ষা চালানোটা দস্তুর। চিকিৎসকদের একাংশ বলছেন, সাগরতীর্থবাবুরা যে ভাবে এই চিকিৎসা পদ্ধতি বাতলেছেন, তাতে পরীক্ষা সফল না হলেও ক্ষতির আশঙ্কা কম। কারণ, কার্ভিডিলল গোত্রের ওষুধ এমনিতেই কার্ডিও মায়োপ্যাথিতে কাজ করে। তার উপরে হৃৎপিণ্ডে যে টিউমার হয় না, সেটাও প্রমাণিত। তার ফলে পি-৫৩ জিন বন্ধ করে দিলে হৃৎপিণ্ডে টিউমার হবে না। ফলে ক্ষতির তেমন সম্ভাবনা নেই। সাগরতীর্থবাবুরা চান, এ দেশেই কোনও শিল্পসংস্থার সাহায্য নিয়ে তাঁদের প্রযুক্তির হিউম্যান ট্রায়াল সম্পন্ন করতে।
কার্ডিও মায়োপ্যাথির নতুন এই চিকিৎসা পদ্ধতি নিয়ে কী বলছেন চিকিৎসকেরা?
কার্ডিওথোরাসিক সার্জন সত্যজিত্ বসু বলছেন, এটা এক ধরনের স্টেম সেল চিকিৎসা। হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে কোষগুলি বিকল হয়ে পড়লে এই চিকিৎসায় তা সারিয়ে তোলা সম্ভব হবে। এ নিয়ে দেশ-বিদেশে নানা গবেষণা চলছে। যদি সত্যিই এই গবেষণা সফল হয়, তা হলে চিকিৎসা ক্ষেত্রে যুগান্তকারী সাফল্য আসবে বলেই মনে করেন তিনি। শহরের আর এক কার্ডিওথোরাসিক সার্জন সুশান মুখোপাধ্যায় বলছেন, এই ধরনের গবেষণা ভারতের মতো উন্নয়নশীল দেশে সত্যিই প্রয়োজনীয়। কার্ডিও মায়োপ্যাথির ক্ষেত্রে এই ধরনের চিকিৎসাও অত্যন্ত উপযোগী।
হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ বিশ্বকেশ মজুমদার বলছেন, কার্ডিও মায়োপ্যাথি দু’ধরনের। হাইপারট্রফিক ও ইস্কিমিক ডায়ালেটেড। হাইপারট্রফিকের ক্ষেত্রে এই ব্যবস্থা কার্যকর হতে পারে। কিন্তু ইস্কিমিক ডায়ালেটেড কার্ডিও মায়োপ্যাথির ক্ষেত্রে এই চিকিৎসা কার্যকর হবে না বলেই তিনি মনে করেন।
সূত্র : কুন্তক চট্টোপাধ্যায়, আনন্দবাজার পত্রিকা, ৫ এপ্রিল ২০১৫
সর্বশেষ সংশোধন করা : 4/16/2020