ডায়াবিটিস, স্ট্রোক, ক্যানসার, হৃদরোগের মতো অসংক্রামক রোগ রুখতে পশ্চিম মেদিনীপুরেও নতুন সেল খোলার তৎপরতা শুরু হয়েছে। নাম ‘নন কমিউনিক্যাবেল ডিজিজ (এনসিডি) সেল’ বা অসংক্রামক রোগের ক্লিনিক। কী ভাবে এই সেল খোলা হবে, কী ভাবেই বা কাজ করবে, তার নির্দেশিকাও চলে এসেছে জেলায়। জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক গিরীশচন্দ্র বেরা বলেন, “পশ্চিম মেদিনীপুরে এনসিডি সেল খোলা হবে। ইতিমধ্যে কিছু পদক্ষেপও করা হয়েছে।”
শুরুতে স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলবেন চিকিৎসকেরা। জানবেন, কে নেশা করেন, কে মদ্যপান করেন প্রভৃতি। পরে রক্তচাপ মাপা হবে। রক্তের নমুনা সংগ্রহ করে ব্লাড সুগার এবং কোলেস্টেরল মাপা হবে। শুরুতে প্রতিটি উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রে ব্লাড সুগার পরিমাপক যন্ত্র পৌঁছনো হচ্ছে।
নির্দেশিকা অনুযায়ী, জেলাস্তরে সেলে থাকবেন পাঁচ সদস্য। সেলের নোডাল অফিসার হবেন উপ মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক (২)। থাকবেন এক জন জেলা প্রোগ্রাম অফিসার, এক জন জেলা প্রোগ্রাম কো অর্ডিনেটর, এক জন ফিনান্স কাম লজিস্টিক অফিসার এবং এক জন ডাটা এন্ট্রি অপারেটর। এঁদের মধ্যে প্রথম তিন জন চিকিৎসক। চুক্তির ভিত্তিতে নিয়োগ হবে। ডায়াবেটিস, হৃদরোগ, ক্যানসার এবং স্ট্রোক মূলত এই চার ধরনের রোগের ক্ষেত্রে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। মহকুমাস্তরে থাকবে এনসিডি ক্লিনিক। গ্রামস্তর থেকেই শুরু হবে কাজ। এ জন্য চিকিৎসক এবং স্বাস্থ্যকর্মীদের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণও দেওয়া হবে। উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্র থেকে রোগীদের চিহ্নিত করে ব্লকস্তরে পাঠানো হবে। ব্লকস্তর থেকে রোগীদের মহকুমা হাসপাতালে পাঠানো হবে।
অনেক সময়ে ছোট থেকেই শরীরের মধ্যে নানা সমস্যা লুকনো থাকে। গোড়ায় চিকিৎসা শুরু না হওয়ায় পরে জটিল আকার নেয়। মৃত্যুও হয়। ছোঁয়াচে নয়, এমন অসুখে মৃত্যুর সংখ্যা গোটা পৃথিবীতেই বাড়ছে। রাজ্যেও সংখ্যাটা কম নয়। পরিস্থিতি দেখে একেবারে গ্রামস্তর থেকে রোগ নির্ণয়ের কাজ করতে চাইছে সরকার। জেলার উপ মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক (২) রবীন্দ্রনাথ প্রধান বলেন, “গোড়াতে অসুখ ধরা পড়লে সহজে তার চিকিৎসা করা সম্ভব হয়। না হলে পরবর্তী সময় ওই অসুখ জটিল আকার নেয়। তখন নানা সমস্যাও দেখা দেয়।”
ডায়াবেটিস যে আগামী দিনে বড় ধরনের সমস্যা হতে পারে, তার ইঙ্গিত মিলেছে একটি সমীক্ষায়। ওই সমীক্ষা বলছে, ১৯৭০ সালে শহরাঞ্চলে মাত্র ২.৩ শতাংশ এবং গ্রামাঞ্চলে মাত্র ১ শতাংশ মানুষ এই রোগে আক্রান্ত হতেন। ২০০০ সালে তা বেড়ে শহরাঞ্চলে হয়েছে ১২-১৯ শতাংশ এবং গ্রামাঞ্চলে ৪-১০ শতাংশ।
সূত্র : বরুণ দে, আনন্দবাজার পত্রিকা, ২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৫
সর্বশেষ সংশোধন করা : 11/14/2019