এক, হাসপাতাল থেকে বিনামূল্যের ওষুধ পাওয়া যাচ্ছে বেশি। ২০১৩ সালে ৩৩ শতাংশ ওষুধ ফ্রি মিলছিল, ২০১৪ সালে মিলছে প্রায় ৪৭ শতাংশ। এই নিরিখে সবার পিছনে এসএসকেএম। সেখানে ভর্তি রোগীরা মাত্র ১০ শতাংশ ওষুধ ফ্রি পাচ্ছে।
দুই, গড়ে ৬০ শতাংশ ওষুধ জেনেরিক নামে লিখছেন ডাক্তাররা। অর্ধেকের বেশি জেনেরিক ওষুধ হলেই যথেষ্ট ভাল বলতে হবে। এই নিরিখে সবার উপরে বালুরঘাট জেলা হাসপাতাল। সেখানে প্রায় ৮০ শতাংশ ওষুধই জেনেরিক নামে লেখা হচ্ছে।
তিন, রোগীর পকেট খরচ কমছে। ‘ইমপ্যাক্ট অ্যাসেসমেন্ট মেথডলজি’ ব্যবহার করে দেখা যাচ্ছে, হাসপাতালে ভর্তি রোগীদের মধ্যে যাঁরা ন্যায্যমূল্যের ওষুধের দোকানে যাচ্ছেন, তাঁদের খরচ যাঁরা যাচ্ছেন না তাঁদের চেয়ে গড়ে ৩০ শতাংশ কম হচ্ছে।
কিন্তু দেখা যাচ্ছে, বেশ কিছু রোগী (ভর্তি রোগীর ৪৩ শতাংশ, আউটডোর রোগীর ৪৭ শতাংশ) এখনও ন্যায্যমূল্যের দোকানে যাচ্ছেন না। তার তিনটি প্রধান কারণ পাওয়া যাচ্ছে। এক, অনেকে এ সম্পর্কে জানেন না। দুই, আগে কখনও এই দোকানে ওষুধ কিনতে গিয়ে নির্দিষ্ট ওষুধ পাননি, তাই আর যাচ্ছেন না। তিন, ওষুধের মান সম্পর্কে সন্দেহ। দেখা যাচ্ছে, যাঁরা অনেক দিন হাসপাতালে আছে, যাঁরা গুরুতর অসুখে ভুগছেন, এবং যাঁদের প্রেসক্রিপশনে জেনেরিক লেখা হচ্ছে বেশি, তাঁরাই এই দোকানগুলিতে বেশি যাচ্ছেন।
সমস্যা থাকছে হাসপাতালের দিক থেকেও। বেশ কিছু হাসপাতালে রোগীরা জানিয়েছেন, ডাক্তার সাদা চিরকুটে ব্র্যান্ডেড ওষুধের নাম লিখে দিচ্ছেন, সেই সব ওষুধের উল্লেখ পাওয়া যাচ্ছে না বেডহেড টিকিটে। আরও ভয়ঙ্কর সমস্যা, ডাক্তার ও নার্সদের একাংশ (অধিকাংশ নয়) রোগীদের ন্যায্যমূল্যের ওষুধের দোকানে যেতে বারণ করছেন।
ন্যায্য মূল্যের ওষুধের মান কেমন? ফার্মাকোলজিক্যাল পরীক্ষার নির্দিষ্ট পদ্ধতি রয়েছে। তেমন পরীক্ষা হয়ে থাকলে তার ফল অবশ্যই জনসমক্ষে আনা উচিত সরকারের। কিন্তু এ প্রশ্নটা এখনই এত বড় হয়ে উঠছে কেন, সে কথাটাও ভাবা দরকার। ওষুধ নির্মাতা সংস্থাগুলি বহু দিন ধরে ‘ব্র্যান্ডেড জেনেরিক’ ওষুধ উৎপাদন করছে, প্রধানত হাসপাতালে জোগানের জন্য। এত দিন চিকিৎসকরা কেন সেই সব ওষুধের মান নিয়ে প্রশ্ন তোলেননি? দাম কমার পরেই মান নিয়ে এত সংশয় কেন? আশঙ্কা হয়, রোগীর নিরাময়ের চাইতেও কমিশনে টান পড়ার চিন্তায় চিকিৎসকদের একাংশ বেশি উদ্বিগ্ন।
সূত্র : অরিজিতা দত্ত, আনন্দবাজার পত্রিকা, ৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৫
সর্বশেষ সংশোধন করা : 11/14/2019