পরিকাঠামোগত হাজারো সমস্যা তো রয়েইছে। রয়েছে কর্মী সংকটও। তার সঙ্গে দিন দিন বেড়ে চলেছে রোগীর চাপ। এই ত্র্যহস্পর্শেই হিমশিম বাঁকুড়া সম্মিলনী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। পরিষেবা দিতে নিত্য নাকাল হচ্ছেন তাঁরা। হাসপাতালের স্ত্রী ও প্রসূতি বিভাগের অবস্থাও বেশ করুণ। শ’য়ে শ’য়ে প্রসূতির নিত্যদিন আসাযাওয়া। রোগী আসে ভিন্ জেলা থেকেও। বেডের অভাবে সদ্যোজাতকে কোলে আঁকড়ে কোনও রকমে মাটিতে পড়ে থাকতে হয় মা ’কে। তবে, এ বার হাল হয়তো কিছুটা ফিরতে পারে। কারণ মাদার অ্যান্ড চাইল্ড কেয়ার হাব অনেকটা আশার আলো দেখাচ্ছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে। আগামী দু’বছরের মধ্যেই প্রকল্পটি বাস্তব রূপ পাবে বলে আশা করছেন তাঁরা। এখন তারই কাজ চলছে জোরকদমে। রাজ্যে পরিবর্তনের পর মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঘোষণা করেছিলেন প্রকল্পটি। সেই মতো ২০১২ সালে এই মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মাদার অ্যান্ড চাইল্ড কেয়ার হাব -এর শিল্যান্যাসও করেন মুখ্যমন্ত্রী। গোটা প্রকল্পের জন্য বরাদ্দ হয় প্রায় ১৫ কোটি টাকা।
হাসপাতালের স্ত্রী ও প্রসূতি বিভাগের পিছনের দিকেই বছরখানেক হল শুরু হয়েছে প্রকল্পের কাজ। এক তলার ঢালাইয়ের কাজ শেষ হয়ে সবে শুরু হয়েছে দোতলার কাজ। আপাতত চার তলা পর্যন্ত ওঠার পরই চিকিত্সা শুরু হবে। হাসপাতালের সুপার তথা ভাইস প্রিন্সিপ্যাল পঞ্চানন কুণ্ডুর দাবি, “আগামিদিনে বাড়িটি দশতলা পর্যন্ত করার পরিকল্পনা রয়েছে। মাদার অ্যান্ড চাইল্ড কেয়ার হাব হলে এই সমস্যা অনেকটাই মিটবে। প্রসূতি এবং সদ্যোজাতকে কোনও পরিষেবা দিতেই অসুবিধে হবে না।’ তবে হাবটিতে কতগুলি বেড থাকবে তা নিশ্চিত করে জানাতে পারেননি তিনি। বাঁকুড়া সম্মিলনী মেডিক্যাল কলেজের প্রসূতি বিভাগে বর্তমানে সব মিলিয়ে বেডের সংখ্যা ২৫০। প্রতিদিন শ’য়ে শ’য়ে রোগী ভর্তি হন। গড়ে রোজ ৬০ থেকে ৭০টি শিশুর জন্ম হয়। বেডের অভাবে সদ্যোজাতকে নিয়ে মাটিতে ঠাঁই হয় অনেক প্রসূতি মায়ের। তবে কর্তৃপক্ষের আশা, ২০১৬ -র ডিসেম্বর মাস নাগাদ চার তলার কাজ শেষ করে হাবটি চালু করে দেওয়া যাবে। অন্য দিকে, হাসপাতালে আরও একটি প্রকল্প বাস্তবায়িত হওয়ার কথা আগামী ৪ থেকে ৫ বছরের মধ্যে। সেটি হল প্রধানমন্ত্রী স্বাস্থ্য সুরক্ষা যোজনার সুপার স্পেশ্যালিটি ব্লক। কেন্দ্রের ঘোষণার পর রাজ্যের কয়েকটি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মতোই এই প্রকল্পের আওতায় নাম উঠে আসে বাঁকুড়ারও। ২০১১ -১২ সালেই মেলে অনুমোদন। যদিও এখনও হাতে কোনও টাকা এসে পৌঁছয়নি। মোট ১৫০ কোটি টাকার এই প্রকল্পে কেন্দ্রের বরাদ্দ ১২০ কোটি টাকা এবং রাজ্যের বরাদ্দ ৩০ কোটি টাকা। নতুন এই বিভাগটি চালু করতে কাজ চলছে জোরকদমে। কথাবার্তা চলছে ইঞ্জিনিয়ারদের সঙ্গেও। সুপার স্পেশ্যালিটি ব্লকের বিল্ডিংয়ের মধ্যে থাকবে ৮টি বিভাগ। প্রতি বিভাগে থাকবে ৩০টি করে বেড। কার্ডিওলজি, সার্জারি, নিউরোলজি, প্লাস্টিক সার্জারি, নেফ্রোলজি, ডায়ালিসিস, অর্থোপেডিক, এন্ডোক্রিনোলজির মতো গুরুত্বপূর্ণ বিভাগগুলি এই ব্লকের আওতায় থাকবে বলে জানিয়েছেন হাসপাতাল সুপার পঞ্চানন কুণ্ডু।
এ ছাড়া স্বাস্থ্য দফতরে দরবার করে কয়েকটি বিভাগের পরিকাঠামো বাড়ানোর ক্ষেত্রে সবুজ সংকেত পেয়েছেন কর্তৃপক্ষ। যেমন এসএনসিইউ-এর ক্ষেত্রেও অনুমোদন মিলেছে ২৪টি বেডের। যদিও এর টাকা এখনও হাতে আসেনি। পিকু ও বার্ন ইউনিটের পরিকাঠামো বাড়াতেও অনুমোদন মিলেছে স্বাস্থ্য দফতরের। হাসপাতালে মাথাব্যথার অন্যতম কারণ কর্মী সংকটও। দীর্ঘদিন ধরে বেশ কয়েকটি শূন্যপদ পূরণ হয়নি। ঠিকঠিক পরিষেবা দিতে যেখানে ৪০০ চতুর্থ শ্রেণির কর্মী প্রয়োজন, সেখানে রয়েছে ঠিক অর্ধেক, ২০০। করণিকের পদ রয়েছে ৩৬টি। সেখানে গোটা হাসপাতাল সামাল দিচ্ছেন মাত্র ৬ জন। হাসপাতালে ১ হাজার বেড থাকলেও তা রোগী ভর্তির নিরিখে কিছুই নয়। অগত্যা রোগীদের পড়ে থাকতে হয় মেঝেতে। হাসপাতাল সুপারের মন্তব্য, “‘বেড বাড়ানোর জন্য রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে।”
সূত্র : দুর্গাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়, এই সময়, ৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৫
সর্বশেষ সংশোধন করা : 3/3/2020