ডোনার কার্ড দেখিয়ে বিনামূল্যে রক্ত নিয়ে তা চড়া দরে বিক্রি চলছে। রক্ত নিয়ে এমন বেআইনি কারবারে রীতিমতো উদ্বিগ্ন রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতর। বেনিয়ম রুখতে রক্তদান শিবিরে ডোনার কার্ড ইস্যু করার ক্ষেত্রে নয়া নির্দেশ জারি করেছে তারা। এ ছাড়াও ব্লাড ব্যাঙ্ক থেকে রক্তের ইউনিট ইস্যু হওয়ার পর তা কোন হাসপাতাল, নার্সিংহোমে কোন রোগীকে দেওয়া হচ্ছে, তা-ও খতিয়ে দেখার নির্দেশ জারি করেছেন রক্ত সঞ্চালনা সংক্রান্ত স্বাস্থ্য দফতরের প্রজেক্ট ডিরেক্টর ওঙ্কার সিং মিনা। সম্প্রতি স্বাস্থ্য ভবনে স্টেট ব্লাড ট্রান্সফিউশন কাউন্সিলের বৈঠক হয়। ওই কাউন্সিলের শীর্ষে রয়েছেন খোদ স্বাস্থ্যসচিব মলয় দে। বৈঠকে তাঁর উপস্থিতিতেই রক্ত সঞ্চালনায় অনিয়ম নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। সংশ্লিষ্ট বিভাগের এক অফিসারের কথায়, ‘রাজ্যে স্বেচ্ছা রক্তদানের প্রবণতা যথেষ্ট হলেও প্রয়োজনের তুলনায় তা অনেকটাই কম। এরই মধ্যে জানা যাচ্ছে, শিবির থেকে পাওয়া রক্ত ডোনার কার্ড মারফত তুলে মোটা টাকায় বিক্রি করা চলছে। অভিজ্ঞতা থেকে দেখা গিয়েছে, রক্তদান শিবিরের উদ্যোক্তা এবং ব্লাড ব্যাঙ্কের লোকজনের একাংশের সঙ্গে বোঝাপড়া করেই এই চক্র সক্রিয়।’ অনিয়ম রুখতে স্বাস্থ্য ভবন যে নির্দেশিকা জারি করেছে, তাতে এই বোঝাপড়া খর্বেরই চেষ্টা হয়েছে। যেমন, ডোনার কার্ডের পিছনে রক্তদাতা সম্পর্কে যাবতীয় তথ্যের সঙ্গেই তাঁর স্বাক্ষর অথবা আঙুলের ছাপ থাকা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। রক্তদাতার সই বা আঙুলের ছাপ না থাকলে সেই কার্ডের বিনিময়ে রক্ত না দেওয়ার নির্দেশ জারি করেছে স্বাস্থ্য দফতর। রক্তদানের বেশ কিছু দিন পর সাধারণত ডোনার কার্ড রক্তদাতার হাতে তুলে দেওয়া হয়। সাধারণত, উদ্যোক্তাদের হাতেই ডোনার কার্ড তুলে দেন ব্লাড ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ। নয়া নির্দেশে বলা হয়েছে, যিনি রক্ত দিয়েছেন, ডোনার কার্ড তাঁর হাতে পৌঁছেছে, এই মর্মে লিখিত বয়ান দিতে হবে উদ্যোক্তাদের। তাতেও রক্তদাতার সই থাকা বাধ্যতামূলক। ব্লাড ব্যাঙ্কগুলিকে বলা হয়েছে, ডোনার কার্ডের বিনিময়ে রক্ত দিলে রোগীর নাম, ঠিকানা ছাড়াও যিনি রক্ত গ্রহণ করছেন, তাঁরও নাম, ঠিকানা এবং সই সংশ্লিষ্ট নথিতে রাখতে হবে। জেলা স্বাস্থ্য দফতর এবং ব্লাড ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষকে বলা হয়েছে, ডোনার কার্ডের বিনিময়ে যত ব্লাড ইউনিট ইস্যু হবে, তার অন্তত এক শতাংশ ক্ষেত্রে অডিট বাধ্যতামূলক। খতিয়ে দেখতে হবে যাঁর জন্য রক্ত নেওয়া হয়েছিল, তা তাঁর জন্যই ব্যবহৃত হয়েছে কি না। রক্তদান আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত মানুষেরা স্বাস্থ্যভবনের নয়া নির্দেশিকাকে স্বাগত জানালেও একটি বিষয়ে তাঁরা পুনর্বিবেচনা চাইছেন। তাঁদের বক্তব্য, ডোনার কার্ড রক্তদাতার হাতে তুলে দেওয়া বাধ্যতামূলক করলে গুরুতর প্রয়োজনের সময়ে তা পাওয়া কঠিন হতে পারে। সে ক্ষেত্রে ডোনার কার্ডের উদ্দেশ্যই ব্যর্থ হবে। বর্তমানে চালু ব্যবস্থা হল, উদ্যোক্তাদের কয়েক জনের কাছে ডোনার কার্ড জমা থাকে। মানুষ প্রয়োজনে তাঁদের সঙ্গেই যোগাযোগ করেন। এই ব্যবস্থা বজায় রাখার আর্জি জানিয়েছেন রক্তদান আন্দোলনের কর্মীরা।
সূত্র : এই সময়, ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৫
সর্বশেষ সংশোধন করা : 2/14/2020