কখনও বরাদ্দ অর্থের অভাব, কখনও অভাব পর্যান্ত কর্মীর। কখনও রক্ত পরীক্ষার রাসায়নিকের অভাব, আবার কখনও কিটের অভাব। এ সব কারণে মাঝেমধ্যেই রাজ্যের বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালের ব্লাড ব্যাঙ্কের কাজকর্ম থমকে যাওয়ার জোগাড় হয়। এতে রোগী পরিষেবা ব্যাহত হলেও কারও তেমন হেলদোল দেখা যায় না। সমস্যা নিয়ে স্বাস্থ্য ভবনের কর্তাদের দ্বারস্থ হলেও, তাঁরা অধিকাংশ সময় সংকটের জন্য দায়ী করেন কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রককে। সরকারি হাসপাতালের অন্তর্গত ব্লাড ব্যাঙ্কগুলির প্রতি কর্তৃপক্ষের বিমাতৃসুলভ আচরণ নিয়ে একাধিক বার সরব হয়েছেন সংশ্লিষ্ট ব্লাড ব্যাঙ্কের কর্তারা। এই চিরাচরিত বিমাতৃসুলভ আচরণে পরিবর্তন আনতে নয়া পদক্ষেপ করল স্বাস্থ্য দফতর।
নয়া নির্দেশিকা অনুযায়ী সরকারি হাসপাতালের ব্লাড ব্যাঙ্ককে এখন থেকে একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ চিকিত্সা বিভাগের মতো গণ্য করা হবে। সেই বিভাগের নিয়ন্ত্রণ থাকবে হাসপাতালের প্রধানের হাতে। ফলে সরকারি হাসপাতাল কিংবা মেডিক্যাল কলেজ চত্বরে থাকা ব্লাড ব্যাঙ্কগুলির কাজকর্ম মসৃণ রাখার দায়িত্ব বর্তাবে সংশ্লিষ্ট সরকারি হাসপাতাল এবং মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষের উপর। পুরনো ব্যবস্থায় কোনও সরকারি হাসপাতালের ব্লাড ব্যাঙ্কে কিটের অভাব, রাসায়নিকের অভাব কিংবা রক্তদান শিবিরের জন্য ভাড়া গাড়ির অভাবের জন্য স্বাস্থ্য ভবনের দ্বারস্থ হতে হত। ব্লাড ব্যাঙ্কের কোনও সামগ্রী কেনাকাটার জন্য হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কোনও বিশেষ ক্ষমতা ছিল না। স্বাস্থ্য ভবনে আবেদন পাঠানোর পর তা অনুমোদন হলে তবে কিট কিংবা রাসায়নিক কেনার কাজ শুরু হত। অনুমোদনে দেরি হলে কাঠগড়ায় তোলা হত ন্যাশনাল এইডস কন্ট্রোল অর্গানাইজেশন (ন্যাকো)-কে।
নয়া নিয়মে হাসপাতালের ব্লাড ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ এখন আর অর্থ বরাদ্দের জন্য স্বাস্থ্য ভবন কিংবা ন্যাকোর মুখাপেক্ষী হয়ে বসে থাকবে না। যদি কোনও নির্দিষ্ট রক্ত পরীক্ষার রিএজেন্ট শেষ হয়ে যায় তা হলে নতুন করে রাসায়নিক কিনতে স্বাস্থ্য ভবনের অনুমতির জন্য অপেক্ষা করতে হবে না। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ নিজেই সেই সামগ্রী কিনে নিতে পারবেন। প্রাথমিক ভাবে ৫০ হাজার টাকার পরীক্ষা নিরীক্ষার সামগ্রী এক লপ্তে কেনার ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে সংশ্লিষ্ট হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে। এর বেশি মূল্যে ক্রয় করতে হলে প্রত্যেক হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের প্রধান অর্থাৎ সুপারিনটেন্ডেন্টকে একটি বিশেষ ওয়েব সাইট অ্যাকাউন্টের ইউজার আইডি ও পাসওয়ার্ড দেওয়া হবে। সেই অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে বাড়তি কেনাকাটার আবেদন করতে পারবেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। এতে ব্লাড ব্যাঙ্কের কাজকর্ম কম ব্যাহত হবে বলেই আশা করছে স্বাস্থ্য ভবন।
এ ছাড়াও নয়া নির্দেশিকার বলা হয়েছে, ব্লাড ব্যাঙ্কে টেকনিশিয়ানের অভাব হলে হাসপাতালের অন্যান্য বিভাগে যুক্ত টেকনিশিয়ানদের সেখানে সাময়িক ভাবে নিয়োগ করা যাবে। কর্মী সংকটের জন্য রক্ত পরীক্ষার গতি শ্লথ হওয়ার অভিযোগ নানা সময় শোনা যায়৷ এমনকী নানা সময় বহু গুরুত্বপূর্ণ বাধ্যতামূলক পরীক্ষা করা সম্ভব হয় না বলেও অভিযোগ ওঠে। এই পদক্ষেপের সাহায্যে এক ধাক্কায় সরকারি হাসপাতালে ল্যাব টেকনিশিয়ানদের অভাব অনেকটা দূর করা যাবে বলে আশা স্বাস্থ্যকর্তাদের। নয়া নির্দেশিকা মেনে স্বাস্থ্য দফতর ল্যাব টেকনিশিয়ানদের সমস্ত পরীক্ষার বিষয়েই পারদর্শী করে তুলতে বিশেষ প্রশিক্ষণ কর্মশালার আয়োজন করাও হচ্ছে।
সূত্র : এই সময় ১৭ ডিসেম্বর ২০১৪।
সর্বশেষ সংশোধন করা : 3/3/2020