এই সমীক্ষায় এও জানা গিয়েছে, রাজস্থান, মধ্যপ্রদেশ, হরিয়ানা, উত্তরপ্রদেশ এবং বিহারে বহু মানুষ জানিয়েছেন যে, বাড়িতে শৌচাগার তৈরি করা খরচসাপেক্ষ তাই তাঁরা মাঠেই বা খোলা জায়গায় মলত্যাগ করে থাকেন। শতকরা ৪০টি ক্ষেত্রে বাড়িতে শৌচাগার থাকলেও পরিবারের অন্তত ১ জন সদস্য মাঠেই যেতে পছন্দ করেন। সব থেকে আশ্চর্যের বিষয় হল, যত মানুষের উপর সমীক্ষা করা হয়েছিল, তাদের মধ্যে অর্ধেকই জানিয়েছেন, যে খোলা জায়গায় মলত্যাগ করতে তাঁরা বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন, পুরো ব্যাপারটা তাদের কাছে বেশ উপভোগ্য। শহরে প্রায় ৬৩.৯ শতাংশ পরিবারের শৌচাগার আছে, কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রে সেই শৌচাগারগুলি ঠিকমতো ব্যবহৃত হয় না। খুব সঙ্গত কারণেই এটা বলা যায় যে, শৌচাগারের ঠিকমতো ব্যবহার ও পরিষ্কার করার মতো ন্যূনতম জ্ঞান না থাকার কারণে সেগুলি সংক্রমণ ছড়ানোর উৎস হয়ে ওঠে। ডিন স্পিয়ার্সের মতে, খোলা জায়গায় মলত্যাগ করা সবার সমস্যাই ডেকে আনছে। কেন না ঘন জনবসতিপূর্ণ এলাকায় এই অভ্যাস সামগ্রিক ভাবে এলাকায় পরিবেশদূষণ ছড়াচ্ছে। সব থেকে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে ছোট শিশুরা। এই বিষয়টি স্পিয়ার্স ‘পাবলিক ব্যাড’ হিসেবে অভিহিত করেছেন। স্পিয়ার্সের গবেষণায় আর একটি তথ্য উঠে এসেছে। ভারতে শহরাঞ্চলে ধনী পরিবারের ২.৫ শতাংশ শিশু, যারা শৌচাগার ব্যবহার করে তারাও কম উচ্চতার সমস্যায় আক্রান্ত। তাদের গড় উচ্চতা অন্যান্য দেশের শিশুরা, যারা খোলা মাঠে শৌচকার্য করে তাদেরই মতো। অর্থাৎ এরা সামগ্রিক দূষণের ‘স্পিল ওভার এফেক্টের’ শিকার। তবে শুধুমাত্র অনাময় ব্যবস্থাই নয়, সঙ্গে দূষিত পানীয় জল পানও অপুষ্টির গুরুত্বপূর্ণ কারণ। যদিও ২০১২ সালের জাতীয় নমুনা সমীক্ষার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গ্রামে ৮৮.৫ শতাংশ পরিবারে ও শহরে ৮৯.৫ শতাংশ পরিবারে পর্যাপ্ত পানীয় জলের জোগান রয়েছে। কিন্তু জোগান এক ব্যাপার, ও সেই জল কতটা নিরাপদ সেটা আলাদা বিষয়। ল্যান্সেটের একটি প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, ভারতে গ্রামাঞ্চলে ৬০ শতাংশ ও শহরাঞ্চলে ৪১ শতাংশ বাড়িই জল দূষিত। অপরিশ্রুত বা অশোধিত জল পান, অপ্রতুল স্যানিটেশন ব্যবস্থা – এ সবই শিশুর উচ্চতা বৃদ্ধির অন্তরায় হয়ে দাঁড়াচ্ছে।
সূত্র : যোজনা, জানুয়ারি ২০১৫
সর্বশেষ সংশোধন করা : 1/28/2020