তখনও ঠিকমতো ভোরের আলো ফোটেনি। অভ্যাস মতো পুকুর পাড়ে গিয়ে গুছিয়ে বসেছেন এক যুবক। বেশ কিছুটা তফাতে একটা ছোটখাটো জটলা নজরে এল। দ্রুত কাজ সেরে সবে পুকুরে নেমেছেন, জটলাটি এগিয়ে এল কাছে।
“এ কি খোলা জায়গায় মলত্যাগ করছেন কেন ? বাড়িতে শৌচাগার নেই ?” প্রশ্নকর্তা স্বয়ং বিডিও সঙ্গী যুগ্ম বিডিও এবং ব্লকের অন্য আধিকারিক ও কর্মীরা। খোলা জায়গায় মলত্যাগ করার কুফল নিয়ে মিনিট দুয়েকের একটি ক্লাস নেওয়ার পরে একটি কোদাল ধরিয়ে দেওয়া হল যুবককে।
|
|
চলো কোদাল চালাই, ভুলে মানের বালাই! বিডিও নির্দেশ দিলেন, “যান, মাটি দিয়ে ওটা ঢেকে দিয়ে আসুন।”
ঠিক একই অভিজ্ঞতা হল এক বধূরও। প্রাতঃকৃত্য সেরে সবে পুকুর থেকে উঠে আসছেন। কোদাল হাতে এগিয়ে গেলেন পঞ্চায়েত সমিতির মহিলা সভাপতি ও তাঁর দলবল। অধিকাংশই বিভিন্ন মহিলা স্বনির্ভর গোষ্ঠীর সদস্য। এ ছাড়াও উপস্থিত ব্লকের মহিলা কর্মীরাও। লজ্জায় বধূর মাথা কাটা যাওয়ার জোগাড়।
শুক্রবার ভোরে খয়রাশোল গ্রামের গোষ্ঠডাঙাল এলাকার আশপাশে পুকুরপাড় বা খোলা মাঠে প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিয়েছেন যাঁরা, সকলের জন্যই বরাদ্দ ছিল স্বাস্থ্যশিক্ষার এই অভিনব আয়োজন।
শৌচাগার থাকা সত্ত্বেও উন্মুক্ত জায়গায় মলত্যাগের প্রবণতা রুখতে এ দিন ভোর ৫টা থেকে পাক্কা দেড় ঘণ্টা এলাকার লোকজনকে কার্যত তাড়িয়ে বেড়ালেন খয়রাশোলের বিডিও তারকনাথ চন্দ্র, যুগ্ম বিডিও অভিষেক মিশ্র, পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি অসীমা ধীবর এবং তাঁদের দলবল।
তবে সকালবেলার খোলা হাওয়ায় দীর্ঘদিনের অভ্যাস বজায় রাখতে এসে বাধা পেয়ে ক্ষুব্ধও অনেকে। মহিলাদের অনেকে স্বনির্ভর দলের সদস্য বা সভাপতিকে ঝাঁঝিয়েও উঠেছেন। কেউ বলছেন, “আমার বাড়িতে জল নেই। পুকুর থেকে জল নিয়ে গিয়ে শৌচকর্ম করা সম্ভব নয়।” কেউ বলেছেন, “আমার বাবার নামে শৌচাগার। আমাকে এখানেই আসতে হবে।” কেউ আবার বলছেন, “আমার বাড়িতে শৌচাগার নেই তো কী করব!” আবার অনেকেই ভুলটা মেনে নিয়ে বলেছেন, “অন্যায় হয়েছে। এ বার থেকে বাড়ির শৌচাগারই ব্যবহার করব।”
সূত্র : দয়াল সেনগুপ্ত, আনন্দবাজার পত্রিকা, ২১ মার্চ ২০১৫
সর্বশেষ সংশোধন করা : 12/10/2019