অসমীয়া   বাংলা   बोड़ो   डोगरी   ગુજરાતી   ಕನ್ನಡ   كأشُر   कोंकणी   संथाली   মনিপুরি   नेपाली   ଓରିୟା   ਪੰਜਾਬੀ   संस्कृत   தமிழ்  తెలుగు   ردو

প্রতিদিন চুরি যাচ্ছে ইতিহাসের বাঁকা নদী

‘কালো জলে কুচলা তলে ডুবল সনাতনআজ সারানা কাল সারানা পাই যে দরশননদীর ধারে চাষে বঁধু মিছাই করো আশঝিরি ঝিরি বাঁকা নদী বইছে বারো মাস৷ ’গা ন বেঁধেছিলেন ঝুমুর শিল্পী৷ তবে আজ আর ঝিরি ঝিরি বইছে না বর্ধমানের বাঁকা নদী৷ বারো মাস বয়ে চলা তো দূরের কথা বর্ধমান শহরের উপকণ্ঠে তার অস্তিত্ব থাকলেও নদীর তকমা ঘুচেছে সেই কবেই৷ বর্ধমানবাসীর কাছে বাঁকা আজ শুধুই নালা৷ বয়সের ভারে নড়তে চড়তে না পারা বাঁকার উপর আরও বেশি করে চাপছে শহরের আবর্জনা৷ এঁকে বেঁকে চলা এই নদী শ্রী হারিয়ে আবর্জনার দুর্গন্ধে অতিষ্ঠ করে তুলেছে দু’পাড়ের মানুষদের৷ নদীকে বাঁচাতে উদ্যোগ নেওয়া তো দূরের কথা , নিস্তেজ হয়ে পড়া বাঁকার উপর এখনও সমান তালে চলছে ‘অত্যাচার ’৷ অর্থের বিনিময়ে ক্ষমতার রক্তচক্ষু দেখিয়ে বাঁকাকে ভরাট করে চলছে অবৈধ নির্মাণ৷ সম্প্রতি বর্ধমান ডেভেলপমেন্ট অথরিটি (বিডিএ ) এবং পুরসভা যৌথ ভাবে বাঁকা সংস্কারে উদ্যোগ নিলেও তা যে স্থায়ী সমাধান নয় তা বিলক্ষণ জানেন নদী বিশেষজ্ঞরা৷

অতীতের বঙ্কেশ্বরী

বর্ধমান জেলারই গলসি থানার রামগোপালপুর গ্রামে কাছে একটি জলাশয় থেকে বাঁকা নদীর উত্পত্তি৷ কারও কারও মতে আগে ওই জায়গাটি ছিল ধান খেত৷ সেখান থেকেই প্রস্রবণের জল বইতে শুরু করে৷ যদিও ১৭৭৯ খ্রিস্টাব্দে রেনেলের মানচিত্রে দেখা যায় বর্ধমান শহরের দক্ষিণ -পশ্চিমের দামোদর থেকে বাঁকা নির্গত হয়েছে৷ কেতকাদাস ক্ষেমানন্দ মৃত লখিন্দরকে ভেলায় চাপিয়ে বেহুলার যাত্রা বর্ণনা করতে গিয়ে লিখেছিলেন, ‘ভাসিয়া ভাসিয়া পাইল বাঁকা দামোদর৷’ বাস্তবে দেখা গিয়েছে গলসি থেকে বয়ে আসার পর বর্ধমান শহরের শুরুতে রথতলায় দামোদরের সঙ্গে বাঁকার যোগস্থাপন করা হয়েছে৷ দামোদরের জল পাস করার সুবিধার্থে ওই জায়গাতেই রয়েছে লকগেট৷ বর্ধমানের বাসিন্দারা বলেন , এই লকগেট তৈরি করে বাঁকার গতিপথ রোধ করার কারণেই এর উপনদীগুলি শুকিয়ে গিয়েছে৷ বাঁকার উত্পত্তি এবং মিলনস্থল দু’টিই বর্ধমান জেলায়৷ প্রবাহপথের মোট দৈর্ঘ্য প্রায় ১২৫ কিলোমিটার৷ এর মধ্যে বর্ধমান শহরে রয়েছে ৩৫ কিলোমিটার৷ এরপর মেমারি, মন্তেশ্বর, কালনা হয়ে পূর্বস্থলীতে প্রবেশ করেছে৷ সেখানে সমুদ্রগড়ের উত্তরে জালুইডাঙায় খড়ি নদীতে মিশেছে বাঁকা৷ খড়ি -বাঁকার মিলিত ধারা নন্দাইয়ের কাছে ভাগীরথীতে মিশেছে৷ বাঁকা নদীর গতিপথে রয়েছে অসংখ্য বাঁক৷ বর্ধমান শহরের যে কোনও জায়গা থেকে এই নদীকে দেখলে আনুমানিক ১০০ মিটারের বেশি দেখা যাবে না৷ কারণ সামান্য কিছুটা এগিয়েই বাঁক নিয়ে দু’পাড়ের ঘরবাড়ি বা গাছপালার মধ্যে হারিয়ে গিয়েছে বাঁকা৷ অতিরিক্ত এই বাঁকের জন্যই নদীর নাম বাঁকা বলে বর্ধমানের বাসিন্দাদের একাংশের দাবি৷ যদিও অনেকের মতে, অতীতে এই নদীর নাম ছিল বঙ্কেশ্বরী৷ জনশ্রীতি আছে বঙ্কা নামে কোনও এক বৌদ্ধ সন্ন্যাসী এই খালের ধারে সাধনা করেছিলেন৷ তাঁর নাম থেকেই এসেছে বঙ্কেশ্বরী৷ সেই বঙ্কেশ্বরী অপভ্রংশ হয়ে বর্তমানের বাঁকা৷ কিছুটা অবহেলারও৷

বর্তমানের বাঁকানালা

গলসি থেকে ক্ষীণ হয়ে বয়ে আসছে বাঁকা৷ বর্ধমান শহরের আগে পর্যন্ত জল বেশ স্বচ্ছ৷ কিন্ত্ত রথতলা কাঞ্চননগরের পর থেকে শহরের একের পর এক নর্দমা এসে মিশেছে বাঁকাতে৷ ফলে জল হয়েছে ঘোর কৃষ্ণ বর্ণের৷ কোথাও কোথাও আবার কিছুটা সবুজ৷ কোথাও কোথাও দেখা গিয়েছে জলের মধ্যে অসংখ্য পোকা কিলবিল করছে৷ আবার ছোট্ট এই নদীর মাঝেই জেগে উঠেছে চর৷ অবশ্য চর না বলে আবর্জনার স্তূপ বলাই ভালো৷ সেই সঙ্গে নদীর গতিপথকে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে রেখেছে আগাছা৷ পচা আবর্জনার দুর্গন্ধ ও মশার দাপটে অতিষ্ঠ দু’পাড়ের বাসিন্দারা৷ এর জন্য অবশ্য দায়ী তাঁরাই৷ বর্ধমানের ঝুরঝুরে পুল এলাকার বাসিন্দা নরেন দাস বলেন, ‘চড়া রোদ হলেই দুর্গন্ধে বাড়িতে টেকা দায় হয়ে ওঠে৷ নোংরা আবর্জনায় ভরা বাঁকা, মশার অ্যাঁতুড়ঘর হয়ে উঠেছে৷ সন্ধ্যা হলেই ঝাঁকে ঝাঁকে মশা আসছে৷’ তাঁর আক্ষেপ, ‘বাঁকার এই দশার জন্য তো আমরাই দায়ী৷ আমরা সবাই মিলে নোংরা ফেলছি৷ একটা নদী আর কত অত্যাচার সহ্য করতে পারে বলতে পারেন ? মিডিয়া দেখলেই সবাই প্রতিবাদী হতে চায়, কিন্ত্ত বাঁকাকে বাঁচাতে কারও কোনও উদ্যোগ নেই৷ সবার আগে আমাদেরই সচেতন হওয়া দরকার৷’ শুধু আবর্জনা আর দুর্গন্ধ নয়, আগে বাঁকার দু’পাড়ের উর্বর মাটিতে প্রচুর চাষও হত৷ এখন জলের অভাবে তার অনেকটাই কমেছে৷ রেনিকোট এলাকার বাসিন্দা আদুরি মুন্ডা বলেন, ‘আমার স্বামী বেঁচে থাকতে বাঁকার জলে চাষ করতেন৷ দু’বেলা দু’মুঠো খাবারের অভাব হত না৷ এখন ছেলে চাষ করে, কিন্ত্ত জলই তো নেই৷ বর্ষার সময় ভালোই চাষ হয়, অন্য সময় বাঁকার জল মেলে না৷ তাই ছেলেকে বাইরে কাজে যেতে হয়৷ রাজমিস্ত্রির জোগাড়ে থেকে যখন যা পায় তখন সেই কাজ করে৷ পেট তো মানে না৷’ তিনি আরও বলেন, ‘আমরা পড়াশোনা জানি না, তাই পরিবেশ প্রকৃতি নষ্ট হচ্ছে কিনা বুঝি না৷ তবে একটা নদী হারিয়ে গেলে আমাদের মতো অনেকেরই সমস্যা হবে এটা বুঝতে পারি৷’ বর্ধমানের দেবী সর্বমঙ্গলা মন্দিরের পাশ দিয়ে বয়ে গিয়েছে বাঁকা নদী৷ আগে সর্বমঙ্গলার ঘট তোলা হত এই বাঁকা নদী থেকেই৷ বর্তমানে নদীর এই অংশটুকুও আর্বজনায় ভরে উঠেছে৷ জঞ্জালের স্তপের মধ্যেই ঘুরে বেড়াচ্ছে শুয়োরের দল৷ নদীর জল অত্যন্ত নোংরা হওয়ায় সর্বমঙ্গলার ঘট নেওয়া বন্ধ হয়েছে৷ এই জায়গা থেকে পেরিয়ে এসেই রয়েছে বীরহাটা৷ এখানে পর দু’টি ব্রিজ বাঁকার উপর রয়েছে৷ এই এলাকার সৌন্দর্য বাড়াতে একটি ঘড়ি স্তম্ভ তৈরি করা হয়েছে৷ কিন্ত্ত ব্রিজের উপর দিয়ে যেতে গেলে অনেককে নাকে রুমাল চাপা দিতে দেখা যায়৷ বাঁকার পচা জলের দুর্গন্ধে টেকা দায়৷ ব্রিজে দাঁড়িয়ে বাঁকার দিকে চোখ রাখলে দেখা যাবে শুধুই আবর্জনা৷ তাছাড়া নদীর গা ঘেঁষে এবং বলা যায় নদী দখল করে বেশ কিছু বাড়ির তৈরি হয়েছে৷ যা একটা নদীকে ধ্বংস করার জন্য যথেষ্ট বলে মনে করছেন পরিবেশবিদরা৷ এরপর থেকে বর্ধমান শহরের শেষ প্রান্ত ডাম্পিং গ্রাউন্ড পর্যন্ত বিভিন্ন জায়গায় নদী দখল করে গড়ে উঠেছে অবৈধ নির্মাণ৷ বাসিন্দাদের অভিযোগ, বামেরা পুরসভায় ক্ষমতায় থাকতে বহু লোকজনকে অবৈধ ভাবে বাঁকার পাড়ে বসিয়েছে৷ এখন ক্ষমতা তৃণমূলের হাতে৷ নদী দখল করে বসবাসে মদত দিচ্ছে তারাও৷ শুধু তাই নয়, মোটা টাকার বিনিময়ে বিক্রি হচ্ছে বাঁকা নদী ভরাট করা জায়গা৷ রায়নগর নতুনপাড়ার উল্টো দিকে এখন নদী ভরাট করে জায়গা দখল চলছে৷ এনিয়ে আন্দোলনে নেমেছিলেন নতুনপাড়ার বাসিন্দারা৷ কিন্ত্ত শাসক দলের ক্ষমতার সঙ্গে পাল্লা দিতে পারেননি সাধারণ আন্দোলনকারীরা৷ এই এলাকার বাসিন্দারা তুলসী দাস, সোমা মণ্ডলরা বলেন , ‘আগে বাঁকার জলে বাসন ধোয়া থেকে স্নান করা সবই হত৷ একটা সময় আমরা এই জলে রান্নাও করেছি৷ কিন্ত্ত শহরের সমস্ত ড্রেন বাঁকার সঙ্গে যোগ করে দেওয়ার পর জল নোংরা হয়ে গিয়েছে৷ এখন একবার জলে নামলেই গায়ে চুলকানি বেরিয়ে যায়৷ ডাম্পিং গ্রাউন্ডের পাশে বাঁকা ভরাট করে ঘর বাড়ি তৈরি হচ্ছে৷ আর নদী এখানেই বাঁক নিয়েছে৷ এখন জল না থাকলেও বর্ষায় এই নদীই ফুঁসে ওঠে৷ অবৈধ নির্মাণের ফলে জল এসে আমাদের পাড়ে ধাক্কা মারবে৷ বর্ষায় ঘর বাড়ি হারানোর আশঙ্কা করেই আমরা অবৈধ নির্মাণে বাধা দিয়েছিলাম৷ কিন্ত্ত ওদের ক্ষমতার সঙ্গে পেরে উঠিনি৷ সামনেই বর্ষা আসছে জানি না কী হবে৷ ’ এদিকে শহরের মধ্যে অবৈধ নির্মাণ ও জঞ্জালের স্তূপ বাঁকার গতিপথ রোধ করায় বর্ষার সময় বাঁকার জল গলসিকে ভাসিয়ে দেয়৷ গত বছর বন্যার সময় গলসির ভুঁড়ি পঞ্চায়েতের বিস্তীর্ণ এলাকা ভাঙনের কবলে পড়েছিল৷ অনেক চাষের জমিও বাঁকার গর্ভে তলিয়ে যায়৷ এই এলাকার চাষি তরুণ মণ্ডল বলেন, ‘গত বছর বর্ষায় ব্যাপক বৃষ্টি হয়েছিল৷ মাঠের জল মূলত বাঁকা দিয়েই পাস হয়৷ সেই সঙ্গে ডিভিসি জল ছাড়লে দামোদরের কিছু জলও বাঁকা দিয়ে পাস করানো হয়৷ কিন্ত্ত বাঁকা মজে গিয়েছে৷ জল ধারণ ক্ষমতা কমে যাওয়ায় জলের চাপে ব্যাপক ভাঙন শুরু হয়৷ বাঁকার গতিপথে পুরোটা ড্রেজিং করলে তবেই হয়তো এই সমস্যা থেকে রেহায় পাওয়া যাবে৷’

স্মৃতির আঁকে বাঁকে

বাঁকা নিয়ে বর্ধমানের পুরনো দিনের মানুষদের নানা স্মৃতি রয়েছে৷ বর্তমান প্রজন্মের কাছে অবশ্য এটা নালা ছাড়া কিছুই নয়৷ কথা হচ্ছিল রায়না থেকে বর্ধমান রাজ কলেজে পড়তে আসা জীবন পরমাণিকের সঙ্গে৷ বাঁকাকে নদী বলতে শুনেই তিনি বলেন, ‘বাঁকা তো নালা বলেই জানি৷ নদী এই প্রথম শুনলাম৷ কলেজ যাতায়াতের পথে বীরহাটায় বাঁকা পেরোতে হয়৷ সব সময়ই দেখি নোংরা আবর্জনায় ভর্তি৷ এটা নদী হলে সংস্কার করা উচিত৷’ বর্তমান প্রজন্ম বাঁকাকে নালা বলে জানলেও এই নদী নিয়ে অনেক স্মৃতি রয়েছে শহরের প্রবীণদের৷ সর্বমঙ্গলা মন্দিরের পুরোহিত প্রভাতরঞ্জন ভট্টাচার্য বলেন, ‘ছোটবেলায় দেখেছি বাঁকায় সুন্দর জল বইছে৷ এই বাঁকা থেকেই মায়ের ঘট নেওয়া হত৷ এটাই ছিল ঐতিহ্য৷ শুধু সর্বমঙ্গলা নয় বড় মায়ের ঘটও বাঁকা থেকেই নেওয়া হয়৷ গত প্রায় এক দশক হল সর্বমঙ্গলার ঘটন নেওয়া বন্ধ হয়ে গিয়েছে৷ এখন শোভাযাত্র করে কেষ্টসায়র থেকে ঘট আনলেও কোথাও যেন একটা ঐতিহ্যে ধাক্কা খেয়েছে৷’ শরত্পল্লির বাসিন্দা বাবলু গাইন বলেন, ‘নদীর পাড়েই বড় হয়েছি৷ স্কুলে পড়াকালীন নদীতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা ঝাঁপিয়েছি৷ মা লাঠি নিয়ে মেরে জল থেকে তুলত৷ ছিপ নিয়ে কত মাছ ধরেছি৷ এখন নদীর দিকে তাকালে সে সব গল্প কথা মনে হয়৷ বাঁকা নালা থেকে ফের নদী হলে খুবই ভালো হয়৷ বর্তমানে কিছু জায়গায় সংস্কার হচ্ছে, পুরো নদীটা এ ভাবে সংস্কার হলে খুবই ভালো হয়৷ ’সর্বমঙ্গলা ঘাটের বাসিন্দা আশা পণ্ডিত বলেন, ‘আগে বাঁকার জল ভালো ছিল৷ ছট পুজোর সময় বাঁকার পাড় উত্সব প্রাঙ্গণের চেহারা নিত৷ এত ভিড় হত যে বাচ্চাদের হাতছাড়া করতে ভয় হত৷ কিন্ত্ত এখন কেউ বাঁকার জলে নামতে চান না৷ সবাই গাড়ি ভাড়া করে সদরঘাটে দামোদরে যান৷ তবে কিছু মানুষ যাঁদের আর্থিক সামর্থ নেই তাঁরা এখনও বাঁকাতেই ছট পুজো সারেন৷ বাঁকা নদী আগের অবস্থায় ফিরে এলে খুবই ভালো হবে৷’

বাঁকা রক্ষায় উদ্যোগ

যুগ যুগ ধরে অবহেলায় আনাদরে পড়ে রয়েছে বাঁকা৷ নদীর দু’পাড়ের বাসিন্দারা বারবার আবেদন জানিয়েছেন নালা থেকে বাঁকাকে ফের নদীতে ফিরিয়ে আনতে৷ বাঁকা ভরাট করে অবৈধ নির্মাণের বিরুদ্ধে আন্দোলনেও নেমেছেন বাসিন্দারা৷ কিন্ত্ত তেমন কোনও লাভ হয়নি৷ বাসিন্দাদের অভিযোগ বাম আমলেই সরকারি উদাসীনতার জেরে বাঁকা নালায় পরিণত হয়৷ সেই সময়েই বাঁকার দু’পাড়ে অবৈধ ভাবে বসতি স্থাপন শুরু হয়েছিল৷ এখনও সেই ধারা বজায় রয়েছে৷ অবশ্য রাজ্যে পালা বদলের পর বর্ধমানের বিধায়ক রবিরঞ্জন চট্টোপাধ্যায় মন্ত্রী হন৷ বাঁকাকে সংস্কার করে তার দু’পাড় সাজানোর প্রতিশ্রীতি দিয়েছিলেন৷ সেই মতো সম্প্রতি বর্ধমান উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডিএ) বাঁকা সংস্কারে উদ্যোগ নিয়েছে৷ শহরের বেশ কিছুটা জায়গায় বাঁকা থেকে আবর্জনা তুলে দু’পাড় বোল্ডার দিয়ে বাঁধানোর কাজ শুরু হয়েছে৷ এতে কিছুটা খুশি সংশ্লিষ্ট এলাকার বাসিন্দারা৷ ইছলাবাদের বাসিন্দা সাগর দত্ত বলেন, ‘এতদিন কেউ বাঁকার দিকে ফিরেও তাকাননি৷ এখন কিছুটা উদ্যোগ চোখে পড়ছে৷ ছোটবেলার দেখা সেই বাঁকা ফিরিয়ে দিলে তো খুবই ভালো হয়৷’ কিন্ত্ত এই উদ্যোগ যে স্থায়ী সমাধান নয় তা বলছেন শহরের বিশিষ্ট বাসিন্দারা৷ বর্ধমানের ইতিহাসবিদ্ সর্বজিত্ যশ বলেন,‘এখন সরকারি বোর্ডেও বাঁকা নালা লেখা থাকছে৷ এ থেকেই বোঝা যাচ্ছে বাঁকা কতটা অবহেলিত৷ কোনও একটা নদী এ ভাবে হারিয়ে গেলে খুবই খারাপ লাগে৷ নদীর হারিয়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পরিবেশেরও ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে৷ তবে বাঁকাকে বাঁচাতে যে উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে তাতে খুব একটা কাজ হবে না৷ কারণ কোনও একটি নদীর গতিপথে মাঝের অংশ সংস্কার করে কী লাভ? সামনেই বর্ষা আসছে, মাঝের অংশ খাল হয়ে থাকলে দু’পাশের সমস্ত জল সেখানে জমা হবে৷ এতে বিপরীত পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে৷ তাই বৃহত্তর উদ্যোগ নিয়ে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সংস্কার হলে এই নদীকে বাঁচানো সম্ভব৷ সেই সঙ্গে মানুষের সচেতনারও প্রয়োজন৷’ সেচমন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘আমরা রাজ্যে ক্ষমতায় আসার পর থেকেই বিভিন্ন নদী -নালা সংস্কারে হাত দিয়েছি৷ বাঁকা নদী সংস্কারেও আমাদের পরিকল্পনা রয়েছে৷ সেই মতো কাজও শুরু হয়েছে৷’ বর্ধমানের জেলাশাসক সৌমিত্র মোহন বলেন, ‘বিডিএ এবং প্রশাসনের তরফে বাঁকাকে নিয়ে নানা ভাবনা আছে৷ ইতিমধ্যে কাজ শুরু হয়েছে৷ আর শুধু শহরের অংশটুকু নয়, সমগ্র বাঁকাকে সংস্কারের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে৷’ অবৈধ নির্মাণ প্রসঙ্গে জেলাশাসক বলেন, ‘এমন কোনও অভিযোগ এখনও আমার কাছে আসেনি৷ নির্দিষ্ট অভিযোগ এলে নিশ্চয়ই ব্যবস্থা নেওয়া হবে৷’

নদী বিশেষজ্ঞ কল্যাণরুদ্র বলেন, ‘যে কোনও নদীর ক্ষেত্রেই মাঝের অংশ সংস্কার করে লাভ নেই৷ আর সংস্কারের আগে শহরের নোংরা জল বাঁকায় ফেলা বন্ধ করতে হবে৷ তা না হলে সংস্কার করেও তেমন লাভ হবে না বলে মনে করি৷’ বিধায়ক রবিরঞ্জন চট্টোপাধ্যায় অবশ্য বলেন, ‘কথামতো আমরা বাঁকা সংস্কার শুরু করেছি৷ বিডিএ -র এলাকার মধ্যে তিন দফায় কাজ হবে৷ প্রথম দফার কাজ শুরু হয়েছে৷ বর্ষার পর বাকি কাজ হবে৷ এর পরেই সৌন্দর্যায়নের জন্য দুই পাড় সাজিয়ে তোলার পরিকল্পনা আছে৷’ বাঁকা ভরাট করে অবৈধ নির্মাণ প্রসঙ্গে তিনি বলেন , ‘বাম আমলে অনেক ঝুপড়ি বসানো হয়েছিল৷ পালাবদলের পরেও সামান্য কিছু বসেছে৷ তাদের কাউকেই তোলা হবে না৷ তবে আমরা এখন নজর রাখছি নতুন করে কোনও নির্মাণ করতে দেওয়া হবে না৷

সুত্রঃ এই সময়

সর্বশেষ সংশোধন করা : 2/17/2020



© C–DAC.All content appearing on the vikaspedia portal is through collaborative effort of vikaspedia and its partners.We encourage you to use and share the content in a respectful and fair manner. Please leave all source links intact and adhere to applicable copyright and intellectual property guidelines and laws.
English to Hindi Transliterate