যে সমস্ত জেলা শৌচাগার ব্যবহারের ক্ষেত্রে মোটামুটি একই স্তর বা পর্যায়ে রয়েছে সেগুলির অবস্থান মোটামুটি কাছাকাছিই থাকে-এই সত্যটা উঠে এসেছে মোরান-১ ০.৭৫ থেকে, যা ০.০১ পর্যায়ে খুবই তাৎপর্যময়। আবার লিসা-১ থেকে প্রমাণিত যে সমস্ত জেলায় শৌচাগার ব্যবহারের সংখ্যা তুলনামূলক ভাবে বেশি, সেগুলিরও অবস্থান পাশাপাশি বা কাছাকাছি। দেশের দক্ষিণ-পশ্চিম অংশে এই বৈশিষ্ট্য চোখে পড়ে। এ ছাড়া সুদূর উত্তর এবং উত্তর-পূর্বাঞ্চলেও জেলাগুলির এই ধরনের অবস্থান নজর কাড়ার মতো। অন্য দিকে উত্তর-মধ্য ভাগে শৌচাগার ব্যবহারের সংখ্যা কম হওয়ায় সেগুলিরও অবস্থান সন্নিহিত জেলাগুলিতে।
স্থান ও অবস্থানগত নৈকট্য যে একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য, তা স্বীকার করে নেওয়ার পর ভৌগোলিক সম্পর্ক এ ক্ষেত্রে কতটা শক্তিশালী ভূমিকা নিতে পারে তার উপর জোর দেওয়া হয়। তবে শৌচাগার ব্যবহারের ক্ষেত্রে আর্থসামাজিক পরিস্থিতিকেও বিবেচনার মধ্যে রাখতে হয়। মনে রাখতে হবে, শৌচাগার সদ্ব্যবহারের ক্ষেত্রে একটি পূর্বশর্ত হল পর্যাপ্ত জলের জোগান। তবে এ ক্ষেত্রে নেতিবাচক দিকটিই বেশি করে নজরে এসেছে। কারণ আয় বা উপার্জনগত পরিসংখ্যান ভারতে সব সময় পাওয়া যায় না। তবে মানুষের আর্থিক সঙ্গতি বা মর্যাদা চিহ্নিত করা হয় প্রাকৃতিক গ্যাসের সংযোগ কতগুলি বাড়িতে রয়েছে তার শতাংশের হিসাবে। মানুষের এই আর্থিক সঙ্গতিকেই শৌচাগার ব্যবহারের ক্ষেত্রে একটি মাপকাঠি হিসাবে দেখাতে চেয়েছেন দুই গবেষক (ডিটন ও গ্রস ২০১১)।
এ ক্ষেত্রে মাপকাঠি বিচারের আর একটি রাস্তা হল জেলার দারিদ্রসীমার নীচে (বিপিএল) বসবাসকারী পরিবারগুলির সংখ্যা বা শতাংশের হারকে ভিত্তি ধরে। বিপিএল তালিকাভুক্ত পরিবারগুলিকে বিপিএল কার্ড দেওয়া হলেও এই ব্যবস্থায় ত্রুটি বা গলদ থেকে যেতে পারে। তাই শৌচাগার ব্যবহারের সঙ্গে বিপিএল কার্ড ব্যবহারের বিষয়টি যুক্তিসঙ্গত হবে না। কোনও জেলার মোট ভূখণ্ড ও বসবাসের ঘনত্বকে নগরায়নের একটি মাপকাঠি বা ভিত্তি হিসাবে ধরে নেওয়া হয়। তবে এ সম্পর্কে মতামত বা দৃষ্টিভঙ্গির মধ্যে কিন্তু কোনও সমতা নেই। কারণ অপেক্ষাকৃত বড়বড় শহরগুলিতেই অর্থনৈতিক অবস্থার মাপকাঠির ভিত্তিতেই শৌচাগারের ব্যবহারের মাত্রা সম্পর্কে একটি দিশার হদিশ পাওয়া সম্ভব। কারণ মোটামুটি ভাবে ব্যয়সাশ্রয়ী পদক্ষেপ গ্রহণ করে এই সমস্ত অঞ্চলে বর্জ্য নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করা সম্ভব। যে সমস্ত অঞ্চলে মানুষের আয় বা উপার্জন খুবই কম সেই সমস্ত স্থানে নিষ্কাশন ব্যবস্থা সফল ও কার্যকর করতে ব্যয়ের মাত্রা অনেক গুণ বেড়ে যায়। শুধু তাই নয়, ঘনবসতি এলাকায় প্রাথমিক শৌচাগার প্রযুক্তি সংস্থাপনের পথে বাধা বা অন্তরায়ও রয়েছে প্রচুর। তাই জনবসতির ঘনত্ব এবং শৌচাগারের ব্যবস্থার মধ্যে সুনির্দিষ্ট সম্পর্কের একটি সীমারেখা টানার কাজ নিঃসন্দেহে দুঃসাধ্য।
সুত্রঃ যোজনা জানুয়ারী ২০১৫
সর্বশেষ সংশোধন করা : 1/28/2020