সীমাকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, আপনি যা করেছেন সেটা তো অনেকটা সরকারের স্বচ্ছ ভারত অভিযানের বিজ্ঞাপনের মতো। আপনি কি সেই বিজ্ঞাপন দেখেই উৎসাহিত হয়েছিলেন? গুমলার এই গৃহবধূর জবাব দেন, “স্বচ্ছ ভারত অভিযানের ওই বিজ্ঞাপনটি যথার্থ। এমন ঘটনার প্রতিবাদ হওয়া উচিত। প্রকাশ্যে মহিলাদের প্রাকৃতিক কাজ সারাটা যে অসম্মানের এবং ভয়ের সেটা আমি আমার স্বামী আর তাঁর পরিবারের সদস্যদের কাউকেই বোঝাতে পারিনি।”
গত কাল রাজ্য মহিলা কমিশনের অফিসে এসেছিলেন সীমার স্বামী ভুগুন সাউ। এক কোণায় বসেছিলেন কাঁচুমাচু মুখে। গ্রামে নিজেদের খেত রয়েছে। স্ত্রী যাতে তাঁর সঙ্গে ফিরে যান, কমিশন যেন সীমাকে এই নির্দেশ দেন। এই অনুরোধ নিয়েই কমিশনের চেয়ারপার্সন মহুয়াদেবীর কাছে দরবার করতে এসেছিলেন ভুগন। কোনও লাভ তো হয়ইনি উল্টে চেয়ারপার্সন পাল্টা ধমক দেন ভুগনকে। প্রকাশ্যে প্রাকৃতিক কাজ সারতে গিয়ে স্ত্রীর বিপদ হলে তার দায় যে ভুগুন এড়াতে পারবেন না, সে কথাও ভুগনকে মনে করিয়ে দেন মহুয়াদেবী। দ্রুত বাড়িতে শৌচাগার তৈরি করে তার পড়ে স্ত্রীকে নিয়ে যাওয়ার জন্য ভুগুনকে নির্দেশও দেন তিনি। পরে হাসতে হাসতে মহুয়াদেবী বলেন, “স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বিবাদের ঘটনার মিটমাট আমরা করে দিই। কিন্তু এমন ঘটনা আগে দেখিনি।”
ভুগুন জানিয়েছেন, তাঁদের গ্রামে পাঁচ হাজার মানুষের বসবাস। কিন্তু সকলেই বাড়ির বাইরে প্রাকৃতিক কাজ সারেন। এটাই এত দিন হয়ে এসেছে। উল্লেখ্য এ বছরের বাজেটে ঝাড়খণ্ড সরকার প্রত্যন্ত গ্রামে শৌচাগার তৈরির জন্য একটি বৃহৎ পরিকল্পনা নিয়েছে। কিন্তু তাতেও যে খুব একটা লাভ কিছু হয়নি, তা সীমার এই আচরণেই স্পষ্ট।
সীমার শ্বশুরবাড়ি ছেড়ে চলে আসার এই প্রতিবাদ অবশ্য মনে করিয়ে দিয়েছে আরও এক জনের নাম। তিনি উত্তরপ্রদেশের গৃহবধূ স্বনামধন্য প্রিয়ঙ্কা ভারতী। বিয়ের পরে শ্বশুরবাড়িতে এসে দেখেছিলেন শৌচাগার নেই। সঙ্গে সঙ্গেই স্বামীর ঘর ছেড়েছিলেন প্রিয়ঙ্কা। ফিরেছিলেন বাড়িতে নতুন শৌচাগার তৈরি হওয়ার পরে। বিদ্যা বালনের মতো কেন্দ্রীয় সরকারের স্বচ্ছ ভারত অভিযানের আর এক মুখ এই প্রিয়ঙ্কাও।
সেই তালিকায় বোধহয় আরও একটা নাম জুড়তে চলল। গুমলার সীমা সাউ।
সূত্র : প্রবাল গঙ্গোপাধ্যায়, আনন্দবাজার পত্রিকা, ২২ মার্চ ২০১৫
সর্বশেষ সংশোধন করা : 1/28/2020