পরিচ্ছন্নতা বা নির্মলীকরণের সঙ্গে দেশের অর্থনৈতিক উন্নতি জড়িত? এ-ও কখনও সম্ভব? আপাতদৃষ্টিতে কেমন সঙ্গতিহীন বলে মনে হতে পারে। কিন্তু মুশকিল হল, সরকারের তরফ থেকে একাধিক কর্মসূচি বা পদক্ষেপ গৃহীত হয়ে থাকলেও তা ব্যবহার করার মতো শিক্ষা ও সচেতনতা সবার নেই। তবু আমরা পাই গঙ্গাদেবীপল্লীর দৃষ্টান্ত। এই দৃষ্টান্তে আমরা কবে উদ্বুদ্ধ হব? এই নিয়েই এই প্রবন্ধের আয়োজন।
যথাযথ স্যানিটেশনের অভাবে যে শুধুমাত্র শিশুরা অপুষ্টিতে আক্রান্ত হচ্ছে তাই নয়, দেশের অর্থনীতির উপরেও এর যথেষ্ট নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। ২০১০ সালের বিশ্ব ব্যাঙ্কের জল ও অনাময় প্রকল্পের প্রতিবেদনে জানা গেছে, শৌচাগারের অপ্রতুলতা বা শৌচাগার ঠিকমতো ব্যবহার না করার কারণে ২০০৬ সালে ভারতের অর্থনৈতিক উৎপাদন (জিডিপি) ৬.৪ শতাংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। মাথাপিছু এই ক্ষতির পরিমাণ ছিল ২১৮০ টাকা। অন্য দিকে আফ্রিকার অধিকাংশ দেশে একই কারণে মোট অভ্যন্তরীণ উৎপাদনের ক্ষতির মাত্রা ছিল ১-২ শতাংশের মতো। স্যানিটেশন ও পুষ্টির বিষয়টি অঙ্গাঙ্গি ভাবে জড়িত। স্যানিটেশন ব্যবস্থা সুনিশ্চিত না করলে পুষ্টি সুনিশ্চিত করা সম্ভব নয়। সত্যি কথা বলতে, ভারতে অপুষ্টি প্রতিরোধে যে সব ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে তার মধ্যে স্যানিটেশনের মতো বিষয়টিকে কখনওই সেভাবে গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। যদিও যে সব এলাকায় পূর্ণ স্বাস্থ্যবিধির মতো কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে, সেই সব এলাকায় কিছুটা উন্নতিও লক্ষ করা গিয়েছে। কিন্তু সামগ্রিক ভাবে স্বাস্থ্য ও পুষ্টির সঙ্গে এর প্রত্যক্ষ সম্পর্কের দিকটি এখনও পর্যন্ত জনগণের কাছে সামগ্রিক ভাবে পৌঁছে দেওয়া যায়নি। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী স্বচ্ছ ভারত অভিযানের ডাক দিয়েছেন, যাতে প্রতিটি পরিবারে শৌচাগার পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রাও স্থির করে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু শৌচাগার সঠিক ভাবে ব্যবহার করা বা পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করে রাখার বিষয়টিও মানুষকে জানাতে হবে। বাড়ির শৌচাগার যেন ছাগলের, পোষা কুকুরের, বিড়ালের আঁতুড়ঘরে পরিণত না হয় সে দিকে নজর রাখতে হবে।
সুত্রঃ যোজনা জানুয়ারী ২০১৫
সর্বশেষ সংশোধন করা : 5/29/2020