২০০২ সালে জোহানেসবার্গে অনুষ্ঠিত রাষ্ট্রসঙ্ঘের ‘বিশ্ব পরিবেশবান্ধব উন্নয়ন’ শীর্ষ সম্মেলনে দেশের উন্নয়নে নির্মলীকরণের সবিশেষ গুরুত্ব স্বীকার করে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় যে, ২০১৫ সালের মধ্যে বিশ্বের যে বিপুল সংখ্যক মানুষদের মধ্যে নির্মলীকরণের ন্যুনতম মৌলিক সুবিধাগুলি পৌঁছয়নি, তার অর্ধেককে উক্ত পরিষেবার আওতায় আনতে হবে। নির্মলীকরণ এবং তৎসংক্রান্ত আচার আচরণের মাধ্যমে স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও অর্থনৈতিক উৎপাদনশীলতার ক্ষেত্রে প্রত্যক্ষ সুবিধা পাওয়া যায়। আর এই কথা বলার অপেক্ষা রাখে না যে মানুষ যদি তার প্রয়োজনের ন্যূনতম নির্মলীকরণের সুবিধা না পায় তবে সে মানুষ্যেতর জীবনযাপনে বাধ্য হয়। তাই এ বিষয়ে প্রতিটি রাষ্ট্রের তার নাগরিকদের উক্ত পরিষেবা দানের ক্ষেত্রে বাধ্যবাধকতা আছে। রাষ্ট্রসঙ্ঘের হিসাব অনুযায়ী উক্ত লক্ষ্যপূরণ সফল হলে বিশ্বের প্রায় ১৪৭ কোটি মানুষ (পৃথিবীর মোট জনসংখ্যার ২০ শতাংশ) উপকৃত হবে এবং সুষ্ঠু নির্মলীকরণ ব্যবস্থার সুবাদে বার্ষিক প্রায় ৬৫০০ কোটি মার্কিন ডলার (টাকার অঙ্কে প্রায় ৩,৯০,০০০কোটি) অর্থনৈতিক সুবিধা লাভ করা সম্ভব হবে।
বিগত দশকের মাঝামাঝি একটি সমীক্ষায় প্রকাশ যে, এশিয়ার এক বিশাল সংখ্যক মানুষ পানীয় জল ও উপযুক্ত নির্মলীকরণ ব্যবস্থার সুবিধা থেকে বঞ্চিত। হিসেবে প্রকাশ যে, এশিয়ার প্রায় ৭১ কোটি মানুষ সুপেয় জল পাওয়া অধিকার থেকে বঞ্চিত। প্রায় ১০৯ কোটি মানুষ উপযুক্ত নির্মলীকরণ পরিষেবার বাইরে আছেন। এশিয়া মহাদেশের অন্যতম এক বৃহৎ দেশ ভারতবর্ষও এই অভিশাপ থেকে মুক্ত নয়। অথচ জনসংখ্যার দিক থেকে পৃথিবীতে দ্বিতীয় এই উপমাহাদেশের বিশাল সংখ্যক মানুষকে যদি সুস্থ, সবল ও নিরোগ হিসেবে নবজন্ম দান করতে পারা যায়, তবে ভারতে উন্নয়ন ও সামাজিক পরিবর্তনের এক ব্যাপক সম্ভাবনা দেখা যাবে। এর পরিণতিতে ভারতীয় অর্থনীতির উন্নয়নের ক্ষেত্রে এক নতুন যুগের উন্মেষ ঘটবে। একবিংশ শতাব্দীতে এই মানব সম্পদের সম্যক ব্যবহার ভারতবর্ষের অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে তাই একটি বড় চ্যালেঞ্জ খাড়া করেছে। এই চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা করতে পারলে তবেই দেশ উন্নয়নশীল অর্থনীতির তকমা খুলে উন্নত অর্থনীতির দুনিয়ায় পা রাখতে পারবে। একই সঙ্গে এক বিশাল মানবপ্রজাতির ঘাড়ে ঝুলে থাকা অভিশাপের নৈতিক দায় থেকে রাষ্ট্র মুক্ত হতে পারবে বলে সকলের বিশ্বাস।
সুত্রঃ যোজনা জানুয়ারী ২০১৫
সর্বশেষ সংশোধন করা : 11/13/2019