আমাদের রাজ্য পশ্চিমবঙ্গে নির্মলীকরণের অভিযান শুরু হয় বিগত শতাব্দীর নয়ের দশকের গোড়ায় রামকৃষ্ণ মিশন লোকশিক্ষা পরিষদের হাত ধরে। তৎকালীন অবিভক্ত মেদিনীপুর জেলায় এই সংস্থা গ্রামীণ এলাকায় প্রথম নির্মলীকরণ প্রকল্পের সূচনা করে। অতি অল্প খরচে কী ভাবে গ্রামের মানুষকে শৌচাগার ও তৎ সংক্রান্ত নির্মলীকরণের সুবিধা দান করা যায়, তা বাস্তবে রূপদানের পথিকৃৎ হল লোকশিক্ষা পরিষদের এই প্রকল্পটি। প্রকল্প শুরুর মাত্র দু’ বছরের মধ্যে জেলার প্রায় ১৯ হাজার পরিবারের জন্য পাকা পায়খানা নির্মাণ করা সম্ভব হয়েছে। মেদিনীপুরের এই সাফল্যে অনুপ্রাণিত হয়ে রাজ্য সরকার নির্মলীকরণের এক সার্বিক প্রকল্প গ্রহণ করে এবং ১৯৯৩-৯৪ অর্থবর্ষে সমগ্র রাজ্যে এই প্রকল্প রূপায়ণের জন্য অর্থবরাদ্দ করা হয়। পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন বিভাগের বার্ষিক প্রতিবেদনে প্রকাশ যে, ২০০৯ সালের ৩১ মার্চ পর্যন্ত সারা রাজ্যে ৭২,৪৭,৯১৫টি পরিবারে নির্মলীকরণের সুবিধা দেওয়া সম্ভব হয়েছে।
পরিবারের পাশাপাশি রাজ্যের বিভিন্ন বিদ্যালয়ে শৌচাগার ব্যবহারের সুবিধা পায়, তারা তাদের পরিবারের অন্য সদস্যদের বোঝাতে পারে যে বাড়িতে শৌচালয় থাকার কী সুবিধা। এই ব্যাপারে ভারত সরকারের গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রক দুটি প্রকল্প চালু করে। প্রথমটি হল সার্বিক নির্মলীকরণ অভিযান এবং অপরটি জাতীয় গ্রামীণ পানীয় জল প্রকল্প। প্রথমটিতে বিদ্যালয়ে শৌচালয় নির্মাণে বিশেষ জোর দেওয়া হয় এবং এই প্রকল্পে প্রতি বিদ্যালয়ে ন্যূনতম জুটি শৌচালয় তৈরির কথা বলা হয়েছে। একটি হবে বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা ও ছাত্রীদের জন্য, অন্যটি ছাত্র ও শিক্ষকদের জন্য। পশ্চিমবঙ্গে বর্তমানে প্রায় প্রতিটি বিদ্যালয়ে অন্তত একটি শৌচালয় নির্মাণ সম্ভব হয়েছে।
ওই প্রসঙ্গে ‘নির্মল গ্রাম পুরস্কারের’ বিষয়টি উত্থাপন করা প্রয়োজন। ২০০১ সালে পূর্ব মেদিনীপুরের নন্দীগ্রাম পঞ্চায়েত সমিতি দেশের মধ্যে প্রথম পঞ্চায়েত সমিতি হিসাবে ঘোষিত হয়, যেখানে ১০০ শতাংশ মানুষকে নির্মল শৌচাগারের আওতায় আনা সম্ভব হয়েছে। পরে বিভিন্ন সময়ে রাজ্যে মোট ৩৩টি পঞ্চায়েত সমিতি ওই রূপ নির্মল ব্লক হিসাবে ঘোষিত হয়ে ‘নির্মল গ্রাম ’পুরস্কার পেয়েছে।এ যাবৎ ১হাজারের বেশি গ্রাম পঞ্চায়েতকে ‘নির্মল গ্রাম’ পুরস্কারে ভূষিত করা হয়েছে।
সুত্রঃ যোজনা জানুয়ারী ২০১৫
সর্বশেষ সংশোধন করা : 6/30/2020