অনেকে বলে থাকেন দারিদ্র দূর করতে না পারলে এবং সেই সঙ্গে মানুষকে শিক্ষিত করে তুলতে না পারলে দেশ থেকে অপরিচ্ছন্নতা দূর করা সম্ভব নয়। কিন্তু এই ধারণাটা পুরোপুরি সঠিক নয়। শহরের বস্তি এলাকা বা ঝুপড়ি এলাকায় অনেক ক্ষেত্রে অপরিচ্ছন্নতা থাকলেও আদিবাসী পল্লীতে গিয়ে দেখেছি, মাটির বাড়ি হলেও সেটি সুন্দর করে নিকোনো, নিকোনো উঠোন এবং বাড়ির দেওয়ালে নানান ধরনের নকশা আঁকা রয়েছে, মনে হয় কোনও শিল্পীর তুলিতেই বুঝি সেগুলি ফুটে উঠেছে। অন্যান্য বহু গ্রামই যথেষ্ট পরিচ্ছন্ন এবং প্লাস্টিক আর থার্মোকলের স্তূপ যত্রতত্র ডাঁই করে রাখা নেই। আর শিক্ষার কথা বলতে গেলে বলা যেতে পারে, শিক্ষিত মানুষের মধ্যে অনেকেরই পরিবেশ অপরিচ্ছন্ন করার প্রবণতা রয়েছে এবং অনুরোধ উপরোধ করেও তাঁদের নিবৃত্ত করা সম্ভব হয়নি। আমাদের এলাকাতেই দেখছি, শিক্ষিত ভদ্রলোক, ছেলে বিদেশে চাকরি করে, অথচ বাড়িতে অতিথি আপ্যায়ন করলে অথবা পুজো হলে ব্যবহৃত সব থার্মোকলের প্লেট পাশের পুকুরে ফেলেন এবং নিষেধ করলে সারা দেশের উদাহরণ টেনে বড় বড় কথা বলেন। এ রকম মনোভাব অনেকের মধ্যেই রয়েছে। এ ছাড়া আমাদের পশ্চিমবঙ্গে বিভিন্ন বিদ্যালয়ের চার পাশটা বা বিদ্যালয়ের ভিতরটাও যে অনেক সময়েই অপরিচ্ছন্ন থাকে তা তো আমরা প্রতিনিয়তই দেখে থাকি। ছয়ের দশকে আমরা যখন স্কুল ছাত্র ছিলাম তখন আমাদের অন্তত এক দিন স্কুল প্রাঙ্গণ পরিষ্কার করতে হত। মনে হয় সেই সময় পরিচ্ছন্নতার বিষয়টি পাঠ্যসূচির অন্তর্গত ছিল। তখন আজকের মতো এ রকম অসংখ্য বেসরকারি স্কুল বা ইংরেজি মাধ্যম স্কুল গজিয়েও ওঠেনি। তারা ঝাড়ু হাতে স্কুল বা আশপাশে সাফাই চালাবে তা ভাবাই যায় না। দক্ষিণ কোরিয়ায় কিন্তু স্কুলের ছাত্র—ছাত্রীরা সপ্তাহে অন্তত এক ঘণ্টা এলাকার সাফাইয়ে অংশগ্রহণ করে। সেখানে এই অংশগ্রহণটা বাধ্যতামূলক।
সূত্র : যোজনা, জানুয়ারি ২০১৫
সর্বশেষ সংশোধন করা : 2/1/2020