পলিপ্যাক আর থার্মোকলের ব্যবহার ক্রমশ বেড়েই চলেছে। মাছ বিক্রেতারা প্লাস্টিকের প্যাকেটেই কাটা বা আস্ত মাছ ভরে দিচ্ছেন। এমনকী সবজি বিক্রেতাদের অনেকেই প্লাস্টিকের প্যাকেট সঙ্গে রাখছেন। মিষ্টির দোকানে লেখা রয়েছে ক্যারিব্যাগ দেওয়া হয় না -- কিন্তু ওই লেখাই সার। ক্যারিব্যাগ তাঁরা দিয়েই চলেছেন। কেন দিচ্ছেন প্রশ্ন করলে বলেন, খদ্দের চাইছে, না দিলে চলে যাবে। একই কথা বলেন সবজি বিক্রেতা বা মাছ বিক্রেতারাও। কিন্তু কোথায় যাবে যদি পাশের দোকানে বা কোনও দোকানেই না দেওয়া হয়। প্লাস্টিকের ক্যারিব্যাগে মাছ, সবজি, মিষ্টি জাতীয় খাবার বহন করার ফলে প্লাস্টিক নিঃসৃত সীসা বা ক্যাডমিয়ামের মতো মারাত্মক রাসায়নিক বিষ খাবারের সঙ্গে মানুষের শরীরে মিশছে ফলে ক্যানসারের প্রকোপ বাড়ছে। অপরিচ্ছন্ন পরিবেশে এবং প্লাস্টিকে আটকে জমা জলে মশার বংশবৃদ্ধি ঘটায় নাগরিকরা নানা ধরনের রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। কলকাতার মানুষ তো এখনও ম্যালেরিয়ার প্রকোপেও পড়েছে। কিছু দিন পূর্বে সারা উত্তরবঙ্গ জুড়ে যে এনসেফেলাইটিস মহামারির আকার ধারণ করেছিল তার পিছনে এই জমা জল এবং অপরিচ্ছন্ন পরিবেশও কম দায়ী নয়। তা ছাড়া বর্তমানে কলকাতা সহ পশ্চিমবঙ্গেরই অন্য অনেক শহরে অল্প বৃষ্টিতে জল জমে যাওয়ায় শহরবাসীরা যে নাকাল হচ্ছে তার পিছনেও রয়েছে নর্দমায় প্লাস্টিক আটকে যাওয়া। ২০০৭ সালের প্রবল বর্ষণে হাওড়া ও কলকাতার বিভিন্ন অঞ্চলে জল জমে যাওয়ায় মানুষ যে দুর্ভোগের শিকার হয়েছিল তার প্রধান কারণ হিসাবে পরবর্তীকালে পলিথিন ক্যারিব্যাগকেই চিহ্নিত করা হয়েছিল। মানুষের সঙ্গে গাছপালা, জলজ প্রাণী এবং গবাদি পশু -- সমস্ত জীবজগতই প্লাস্টিক দূষণে আজ অস্তিত্বের সঙ্কটের মুখোমুখি। আস্তাকুঁড়ে ফেলে দেওয়া গৃহস্থের বর্জ্য সবজির সঙ্গে প্লাস্টিক মিশে থাকায় গবাদি পশু শ্বাসনালিতে প্লাস্টিক আটকে মারা পড়ছে, নদী, পুকুর বা সমুদ্রের জলে ভাসমান প্লাস্টিক মাছ এবং অন্যান্য জলজ প্রাণীর ধ্বংসের কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। বৃক্ষমূলের গতিপথ রুদ্ধ হয়ে সবুজ ধ্বংস হচ্ছে। বাড়ছে পানীয় জলের সঙ্কট। মনে রাখতে হবে অপচনশীল ও বিষাক্ত এই প্লাস্টিকের মাটির সঙ্গে মিশতে সময় লেগে যেতে পারে তিনশো বছরেরও বেশ।
সূত্র : যোজনা, জানুয়ারি ২০১৫
সর্বশেষ সংশোধন করা : 7/11/2020