অ্যাকুপাংচার (Acupuncture) হল এক ধরণের চিকিৎসা পদ্ধতি যেখানে শরীরের কতগুলি বিশেষ বিশেষ বিন্দুতে নানা উপায়ে (যার মধ্যে প্রধান হল সুতীক্ষ্ণ সূচ চামড়া ফুটো করে বিভিন্ন মাত্রায় ঢুকিয়ে) শরীরের তথাকথিত Qi বা জীবনী শক্তিকে বাঁধন মুক্ত করা। চীন দেশের বহু যুগের প্রচলিত বিশ্বাস যে, এর ফলে স্বাস্থ্য রক্ষিত হয়।* আজকের চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা যদিও পুরোপুরি এই পদ্ধতিটি বুঝতে সক্ষম হন নি, কি ভাবে এই প্রক্রিয়া কাজ করে। কিন্তু গবেষণায় দেখা গেছে যে, ব্যথা উপশমের ক্ষেত্রে, বা কেমোথেরাপির ফলে বমি বমি ভাব এই প্রক্রিয়ায় দূর হয়। এছাড়াও এটি নানা অসুখে, যেমন, অ্যালার্জি, আর্থ্রাইটিস, পেটের রোগ ইত্যাদিতে কার্যকরি বলে মনে করা হয়।
অ্যাকুপাংচার চিকিৎসা করতে গেলে রোগীকে সাধারণত সপ্তাহে একবার বা দুসপ্তাহে একবার করে অ্যাকুপাংচার-চিকিৎসকের কাছে যেতে হয়। চিকিৎসা সম্পূর্ণ হতে প্রায় গোটা বারো বার অ্যাকুপাংচার করতে হতে পারে। প্রতিবার ৩০ মিনিট থেকে এক ঘণ্টা পর্যন্ত এই চিকিৎসা চলে। কোথায় সূচ ঢোকানো হবে, সেটা চিকিৎসকরা ঠিক করেন। সেই ভাবে রোগীকে শোয়ানো হয়। সাধারণতঃ এতে কোনও ব্যথা লাগে না, এক আধ সময়ে সূচটা ঠিক যায়গায় পোঁছনোর পর একটা আবছা ব্যথার অনুভূতি হতে পারে। অ্যাকুপাংচার-ডাক্তার অনেক সময়ে সূচটিকে নাড়িয়ে শরীরের বিন্দুটিকে একটু উত্তেজিত করতে পারেন। এক একবারে গোটা বারো সূচ ফোটানো হয় এবং সূচগুলিকে ৫ থেকে ২০ মিনিট পর্যন্ত বিঁধিয়ে রেখে দেওয়া হয়।
আকুপাংচারের ইতিহাস খুঁজলে চলে যে হয় প্রায় প্রস্তরযুগে - আজ থেকে ৫০০০ বছর আগে। প্রত্নতত্ববিদরা মঙ্গোলিয়াতে পাথরের যেসব তীক্ষ্ণ সূচ খনন করে পেয়েছেন - সেগুলি মনে করা হয় অ্যাকুপাংচারে ব্যবহৃত হত। নিশ্চিতভাবে বলা যায় যে হান বংশের রাজত্বকালে অর্থাৎ খ্রীষ্টপূর্ব দ্বিতীয় শতকে অ্যাকুপাংচার পদ্ধতি চালু ছিল। সেই সময়ের রচিত চিকিৎসা শাস্ত্রের পুস্তকে অ্যাকুপাংচারের বর্ণনা আছে। এই চিকিৎসা পদ্ধতি ধীরে ধীরে চীন থেকে জাপান, ভিয়েৎনাম ইত্যাদি দেশে ছড়িয়ে পড়ে।
পাশ্চাত্যদেশ বিশেষতঃ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আকুপাংচার সম্পর্কে আগ্রহান্বিত হয় বিংশ শতাব্দীর সত্তর দশকে। নিউ ইয়র্ক টাইম পত্রিকার বিখ্যাত রিপর্টার, জেমস রেস্টন, চীন দেশে গিয়ে একটি সার্জারির পরে যখন ব্যথায় কষ্ট পাচ্ছিলেন, তখন ডাক্তাররা অ্যাকুপাংচার করে তাঁর ব্যথা উপশম করেন। রেস্টন সেই খবরটি নিউ ইয়র্ক টাইমসে লেখাতেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এ নিয়ে সাড়া পরে যায়। তার কিছু পরেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অ্যাকুপাংচারের প্রথম ক্লিনিক স্থাপিত হয়। অ্যাকুপাংচার চিকিৎসার জনপ্রিয়তা সব দেশেই ধীরে ধীরে বাড়ছে।
তথ্য সংকলন : বিকাসপিডিয়া টীম
সর্বশেষ সংশোধন করা : 2/14/2020