অসমীয়া   বাংলা   बोड़ो   डोगरी   ગુજરાતી   ಕನ್ನಡ   كأشُر   कोंकणी   संथाली   মনিপুরি   नेपाली   ଓରିୟା   ਪੰਜਾਬੀ   संस्कृत   தமிழ்  తెలుగు   ردو

বয়স্কদের দেখভালের পরিষেবা বাড়ছে শহরে

বয়স্কদের দেখভালের পরিষেবা বাড়ছে শহরে

স্ট্রোকের ছোবলে পক্ষাঘাতের শিকার বেকবাগানের নীলিমা ঘোষ৷ হারিয়েছেন বাকশক্তিও৷ একমাত্র সম্বল ছেলেও মার্কিন প্রবাসী৷ সত্তরোর্ধ্ব এই বিধবার দেখভাল করবে কে? সত্তরোর্ধ্ব স্ত্রী অসীমা দেবীকে নিয়ে গড়ফায় দুজনের সংসার অশীতিপর অজিতকুমার দামের৷ দুই বিবাহিতা মেয়ের একজন থাকেন মুম্বইয়ে, অন্য জন বেঙ্গালুরুতে৷ অশক্ত দম্পতির নিঃসঙ্গ একাকী জীবনে ভরসা কে? হূদরোগী অনিল, আর হাঁটু নিয়ে কাহিল আল্পনা- সল্টলেকের সত্তরোর্ধ্ব সামন্ত দম্পতিরও পরিবারে আর কেউ নেই৷ রাতবিরেতে পড়ে গিয়ে কোমর ভেঙেছিল আল্পনার৷ আর মাথায় আকাশ ভেঙে পড়েছিল আশি ছুঁইছুঁই অনিলের৷ কী হবে এ বার? হাসপাতাল ছুটি দিয়েছে বটে ষাটোর্ধ্ব অনিতা সমাদ্দারকে৷ কিন্ত্ত ডাক্তারবাবু বলে দিয়েছেন, বাড়িতেই এবার ব্যবস্থা করতে হবে অটো -অ্যাডজাস্টেবল এয়ার -বেড সমেত ফাউলার্স বেড, অক্সিজেন কনসেনট্রেটর, বাইপ্যাপ ভেন্টিলেশন, নেবুলাইজার ইত্যাদির৷ তা-ও কি সম্ভব? সবই সম্ভব৷ নিছক কল্পনায় যে নয়, বাস্তবেও, তা দেখিয়ে দিয়েছে কলকাতারই বেশ কয়েকটি বেসরকারি সংস্থা৷ অনিতার বাড়িতেই এমন একটি সংস্থা বানিয়ে দিয়েছে মিনি আইসিইউ৷ সঙ্গে ২৪ ঘণ্টার নার্স৷ বাড়িতে প্রায় হাসপাতালের সমতুল পরিষেবা দেওয়ার পরও ওই সংস্থার গ্যারান্টি -ইমার্জেন্সির সময়ে প্রয়োজনে নিকটবর্তী হাসপাতালে যত দ্রুত সম্ভব পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করবে তারাই৷ পক্ষাঘাতগ্রস্ত নীলিমার ফিজিয়োথেরাপি থেকে শুরু করে রাইলস টিউবের সাহায্যে খাওয়ানো -সবই করেন এমনই আর একটি হোমকেয়ার -এল্ডারকেয়ার’ পরিষেবা প্রদানকারী সংস্থার কর্মীরা৷ তাঁর মার্কিন প্রবাসী পুত্র নীল ঘোষও তাঁদের হাতে অশক্ত মায়ের স্বাস্থ্য আর সংসার ছেড়ে দিয়ে ঝেড়ে ফেলতে পেরেছেন দুশ্চিন্তা৷

একান্নবর্তী পরিবারের ধারণা যত লোপ পেতে বসছে, জোটবদ্ধ সংসার যত বাড়ন্ত হয়ে অণু-পরিবারের বাড়বাড়ন্ত হচ্ছে, ততই সেই ফাঁকা জায়গাটা ভরাট করার চেষ্টায় জন্ম নিচ্ছে বেশ কিছু বেসরকারি সংস্থা৷ নিঃসঙ্গ মা -বাবাকে ছেড়ে কর্মসূত্রে প্রবাসী হতে বাধ্য হয়েছেন একমাত্র ছেলে কিংবা মেয়ের বিয়ের পর একাকীত্বে ভুগছেন বৃদ্ধ-বৃদ্ধা অথবা একসঙ্গে থেকেও ব্যস্ত ছেলে -বউয়ের পক্ষে প্রবীণ মা -বাবা -শ্বশুর -শাশুড়ির খেয়াল রাখা বাস্তবে সম্ভব হচ্ছে না ইচ্ছা থাকলেও - দুনিয়ার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে কলকাতা কিংবা শহরতলিতে এমন নজির দিন দিন বাড়ছে উল্কাগতিতে৷ আর সময়ের দাবি মেনে সেই তাগিদ থেকে এই মহানগরেই জন্ম নিয়েছে ট্রাইবেকা কেয়ার, উই কেয়ার, সাপোর্ট এল্ডার্স, কেয়ার কন্টিন্যুয়ামের মতো সংস্থা৷ এরা রীতিমতো পেশাদার ঢঙে অসহায় বৃদ্ধ-বৃদ্ধার দৈনন্দিন জীবনচর্যার পাশাপাশি নিরন্তর খেয়াল রেখে চলেছে তাঁদের স্বাস্থ্যেরও৷ আর দিন দিন বেড়ে চলেছে এদের কাজের বহরও৷ প্রায় মাঝরাতে স্ত্রী পড়ে গিয়ে যখন আর উঠতে পারছেন না, তখন এমনই একটি সংস্থা সাপোর্ট এল্ডার্সেরর পরিষেবা নিতে অভ্যস্ত হয়ে ওঠা অনিল এসওএস অ্যালার্ট পাঠিয়েছিলেন সংস্থার সার্ভারে৷ তথ্যপ্রযুক্তির অ -আ -ক -খ না -জেনেও, স্রেফ তাঁদের দেওয়া এমইএএস (মেডিক্যাল ইমার্জেন্সি অ্যালার্ট সিস্টেম) ডিভাইসের বোতাম টিপে সহজেই তিনি যোগাযোগ করে উঠতে পেরেছিলেন ওই সংস্থার কন্ট্রোল রুমে৷ বাদবাকি ঝক্কির পুরোটা, একেবারে পরিবারের মতোই সামলেছিলেন আমাদের সংস্থার কর্মীরা,’ জানাচ্ছেন ওই সংস্থার ম্যানেজিং ডিরেক্টর অপ্রতিম চট্টোপাধ্যায়৷ মঙ্গলবার এক সাংবাদিক সম্মেলনে এমনই একটি গ্যাজেটের কথা বলছিলেন ট্রাইবেকা -র কো -সিইও প্রতীপ সেনও৷ তাঁর কথায়, ‘আপত্কালীন পরিস্থিতিতে ছোট্ট এই যন্ত্রটির বোতাম টিপলেই আমাদের কন্ট্রোল রুমে খবর চলে যাবে নিমেষে - কিছু একটা গণ্ডগোল নিশ্চয়ই হয়েছে৷ সঙ্গে সঙ্গে আমরা ফোন করি৷ যন্ত্রটি তখন ফোনের মতোই আচরণ করতে শুরু করে৷ কোনও জবাব পেলে ভালো৷ অন্যথায়, সঙ্গে সঙ্গে আমরা অ্যাম্বুল্যান্স পাঠিয়ে দিই৷’তবে বয়স্কদের শুধু শরীর -স্বাস্থ্যের খেয়াল রাখাই নয়, তাঁদের মানসিক স্বাস্থ্য, একাকিত্ব ইত্যাদি বিষয়ে খেয়াল রাখাটাও সমান জরুরি৷ আমরা নিষ্ঠার সঙ্গে সে কাজটাই করার চেষ্টা করি,’ মন্তব্য কেয়ার কন্টিন্যুয়ামের অধিকর্তা সোমা ভট্টাচার্যের৷ ঠিক যেমন, অজিত -অসীমাদের বাড়িতে ট্রাইবেকা -র তরফে ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়েছে পরিচারিকা ও নার্সের৷ এখন তাঁরাই নিত্য খেয়াল রাখেন দাম দম্পতির যাবতীয় ভালোমন্দের৷ আর সব কিছুর দেখভাল করেন ওই সংস্থা নিযুক্ত যে কেয়ার ম্যানেজার’ তরুণ, জীবনসায়াহ্নে পৌঁছে তাঁকেই এখন ঘরের ছেলে’ আখ্যা দিচ্ছেন খোদ দাম দম্পতি৷ কারণ, এই ছেলেটির কাজে পেশাদারিত্ব যেমন আছে, তেমনই রয়েছে মানবিক পরশও৷ আমার নাতি থাকলে, সেও এমনটাই হত৷ তাই নিশ্চিন্ত আমার দুই প্রবাসী মেয়েও,’ মন্তব্য অজিতের৷ ইউরোপ-আমেরিকায় বহু পুরোনো হলেও এ দেশে এমন পরিষেবার ধারণা একেবারেই নতুন৷ দিল্লি-মুম্বই-বেঙ্গালুরুতে তবু যদি বা মেড -ওয়েল, পোর্টিয়া, ডাবরের মতো সংস্থা এই পরিষেবা শুরু করে দিয়েছে গত পাঁচ -সাত বছর আগেই, কলকাতা ও শহরতলিতে এমন পরিষেবাকে হালের বললে অত্যুক্তি করা হবে না৷ কিন্ত্ত গত দু’-আড়াই বছরে সব সংস্থারই ক্লায়েন্টের সংখ্যা বেড়েছে লক্ষ্যণীয় ভাবে৷ অধিকাংশই মূল কলকাতায় পরিষেবা দিতে শুরু করেছিল দুবছর আগে৷ আর বর্তমানে তাদের অনেকে পরিষেবা সম্প্রসারণ করে ফেলেছে উত্তর শহরতলিতে বারাসত পর্যন্ত, দক্ষিণে সুভাষগ্রাম পর্যন্ত কিংবা গঙ্গার উল্টোপাড়ে হাওড়া শহর আর হুগলির চুঁচুড়া -চন্দননগর পর্যন্তও৷ ১৯৮৮ থেকে এ শহরে কাজ করে চলছে সিএমআইজি (ক্যালকাটা মেট্রোপলিটন ইনস্টিটিউট অফ জেরেন্টোলজি) নামের যে প্রতিষ্ঠান, তার প্রতিষ্ঠাতা কর্ণধার ইন্দ্রাণী চক্রবর্তী জানাচ্ছেন, তাঁদের প্রতিষ্ঠান থেকে অন্তত ৮০০ প্রশিক্ষিত ছেলে -মেয়ে বেরিয়েছে৷ কেউ বসে নেই৷ সকলেই পেশাগত ভাবে কোনও না কোনও সংস্থায় কর্মরত৷ কেননা, সামাজিক কারণেই প্রবীণদের বিবর্ণ হয়ে যাওয়া জীবনে রং ঢালার চাহিদা বাড়ছে এ শহরে৷

সুত্রঃ এই সময়

সর্বশেষ সংশোধন করা : 2/14/2020



© C–DAC.All content appearing on the vikaspedia portal is through collaborative effort of vikaspedia and its partners.We encourage you to use and share the content in a respectful and fair manner. Please leave all source links intact and adhere to applicable copyright and intellectual property guidelines and laws.
English to Hindi Transliterate