বিগত তিন দশকে টেকনোলজি, টেলিভিশন ও মিডিয়া শহুরে বাঙালি মধ্যবিত্ত জীবনযাপনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ স্থান নিয়েছে।
বাঙালি মধ্যবিত্ত পরিবারগুলিতে টেলিভিশন সেটের সঙ্গে সঙ্গে আর্বিভাব ঘটেছে নানা ধরনের গ্যাজেটস-এর। এই সব অনুষঙ্গ দিনযাপনকে আপাত ভাবে আরামদায়ক যেমন করেছে তেমনি বিনোদনের অফুরন্ত ব্যবস্থা ঘরের মধ্যেই এনে দিয়েছে।
টেলিভিশনের মাধ্যমে সারা দুনিয়ার খবর যেমন আমরা সহজেই জানতে পারছি, তেমনি দিনের ২৪ ঘণ্টা জুড়েই থাকছে নানান বিনোদনমূলক অনুষ্ঠান। আর তার সঙ্গে থাকছে প্রতিটি অনুষ্ঠানের মাঝেই অজস্র ‘ব্রেক’ বা অর্থাৎ বিজ্ঞাপনের বিরতি।
বিজ্ঞাপন ও তার প্রভাব নিয়ে একটি স্বতন্ত্র বড়সড় আকারের বই লেখা যেতে পারে কিংবা বাস্তবে তেমন বই হয়তো আছেও। আমরা এখানে শুধু উল্লেখ করতে চাইছি যে বিজ্ঞাপন আজ বহু ক্ষেত্রে জীবনযাপন পদ্ধতিতে নিয়ন্ত্রণ করছে। অপ্রয়োজনীয় পণ্য আমাদের অনেকের জীবনে হয়ে উঠছে অতিপ্রয়োজনীয় সামগ্রী। ব্র্যান্ডেড প্রোডাক্ট-এর প্রতি শহরের মধ্যবিত্তদের অমোঘ আকর্ষণ লক্ষণীয় ভাবে বেড়েছে। শহড় জুড়ে একের পর বিভিন্ন ব্র্যান্ডের প্রোডাক্টের শোরুম গড়ে উঠেছে। ‘ইউজ অ্যান্ড থ্রো’র কল্যাণে বাড়ছে স্থায়ী জঞ্জালের পরিমাণ।
শিশুদের মধ্যেও এই পণ্যমুখীনতা প্রবল ভাবে লক্ষ করা যাচ্ছে। চাহিদার পরিমাণ ক্রমশই বেড়ে চলেছে। স্কুল-পড়ুয়াদের মধ্যে আজ মোবাইল ব্যবহারের প্রবণতা ব্যাপক ভাবে লক্ষ করা যাচ্ছে। সত্যিই ক’জন শিশুর মোবাইল ব্যবহার বাস্তব প্রয়োজনের ভিত্তিতে। এ বিষয়ে সংশয়ের অবকাশ থেকেই যায়, ঠিক একই সংশয় কম্পিউটার ব্যবহারের ক্ষেত্রেও। বহু স্কুল পড়ুয়াকেই এখন দেখা যায় অনেকটা সময় ধরে কম্পিউটারের সামনে বসে থাকতে। এদের মধ্যে অনেকেরই নিজস্ব কম্পিউটার রয়েছে। অনেকে আবার সাইবার কাফেতে বসে নিয়মিত ভাবে দীর্ঘসময় ধরে। স্কুলের পাঠক্রমে কম্পিউটার সংযোজিত হয়েছে সাম্প্রতিক কালে। কম্পিউটার ব্যবহারের প্রাথমিক ধারণা এবং বিভিন্ন প্রোগাম সম্পর্কেও কিছুটা ধারণা যাতে হয় স্কুল পড়ুয়াদের মধ্যে সেই উদ্দেশ্যেই মূলত কম্পিউটার শিক্ষার সংযোজন। কিন্তু ছেলেমেয়েদর এই দীর্ঘ সময় ধরে কম্পিউটারের সামনে বসে থাকার যুক্তিগ্রাহ্য ব্যাখ্যা কি আমরা এতে পাচ্ছি? যতক্ষণ তারা কম্পিউটারের সামনে বসে থাকছে তার বেশির ভাগ সময়টা কি শেখার জন্য? সম্ভবত তা নয়। কাউন্সেলিং ক্লিনিকের অভিজ্ঞতা এবং ছোটদের সঙ্গে ও তাদের বাবা-মাদের সঙ্গে কথা বলে দেখা গেছে কম্পিউটারের সামনে অধিকাংশ সময় স্কুল পড়ুয়া বসে নানা ধরনের কম্পিউটার গেমস বা চ্যাটিং করার জন্য।
সূত্র : পরিকথা ২০০৭
সর্বশেষ সংশোধন করা : 10/15/2019