এই ছোট ছোট পরিবারে সন্তানের প্রতি বাবা-মা-র যে অমোঘ ভালোবাসার আকর্ষণ থাকে, দায়িত্ববোধ থাকে অন্য দিকে সন্তানের মধ্যে সেই টান যেন সে ভাবে আমরা দেখতে পাচ্ছি না, কোথাও বা যেন একটা শিথিলতা লক্ষ করা যাচ্ছে সম্পর্কের আবেগে। যে নির্লিপ্ততা, নিস্পৃহতা ছিল পরিবারের বাইরের বিষয়, তারই শীতল স্পর্শ যেন ঘরের মধ্যেই অনুভব করছেন কেউ কেউ। ‘আমার মেয়েটা যে এত স্বার্থপর তৈরি হবে, তা আমি স্বপ্নেও ভাবিনি! ওর যাতে কখনও কোনও অসুবিধা না হয় তার জন্য ওর জন্মের পর থেকে স্কুলে পড়ানো পর্যন্ত ছেড়ে দিলাম, যখন যা চেয়েছে, চাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দিয়েছি। কোনও অভাব রাখিনি। তবু দেখুন, আমার অমন শরীর খারাপে এতটুকু সাহায্য করে না। নিজের লেখাপড়া আর কানে হেডফোন লাগিয়ে মোবাইলে গান শোনা — এতেই ব্যস্ত থাকে সর্বক্ষণ। বাড়ির কার কী হল, না হল — কোনও কিছুতেই তার কিছু যায় আসে না। এক মায়ের অভিব্যক্তিতে ঝরে পড়া তীব্র হতাশা আর ক্ষোভের মধ্যে যেন স্পষ্ট হয়ে ওঠে সেই নির্লিপ্ততা ও নিস্পৃহতারই শীতল স্পর্শ।
আত্মকেন্দ্রিকতার এই প্রবণতা আজকের শিশুদের মধ্যে ক্রমশ আরও প্রকট হয়ে উঠছে। যৌথ পরিবার ভালো, ছোট ছোট একক পরিবার মানে খারাপ — এমন কোনও সরলীকৃত সিদ্ধান্তে আমরা পৌঁছতে চাই না। যৌথ পরিবার বর্তমান আর্থ-সামাজিক এবং পরিবর্তিত মূল্যবোধের প্রেক্ষাপটে আত্মকেন্দ্রিক-স্বার্থপরতা গ্রহণযোগ্য নিদান হওয়া সম্ভব নয়। বর্তমান প্রেক্ষাপটে সমমনস্ক, সমভাবাপন্ন পরিবার মানুষদের সঙ্গে নিয়মিত ভাবনার আদানপ্রদানের ভিত্তিতে যুথবদ্ধ জীবনচর্যা গড়ে তোলার কথা ভেবে দেখতে পারি। যে যুথবদ্ধতা পারস্পরিক সহযোগের ভিত্তিতে, পরস্পরের অনুভূতিকে মর্যাদা দেওয়ার মধ্য দিয়ে গড়ে উঠতে পারে।
আত্মকেন্দ্রিকতার বিপ্রতীপে আমরা কোনও বৃহত্তর পরিবারের, যা শুধু রক্তের সর্ম্পকে সম্পর্কিত নয়, সম্ভাবনার কথা ভাবতে পারি।
সূত্র : পরিকথা ২০০৭
সর্বশেষ সংশোধন করা : 3/14/2020