মন ও মানসিকতার অধঃস্তর মস্তিষ্ক — এই তত্ত্বটি সিদ্ধ ও প্রমাণিত। কিন্তু এখনও সর্বজনগ্রাহ্য নয়। এই তত্ত্বটিকে স্বীকার করে নিয়ে মনোরোগ ও তার শ্রেণিবিভাগ নিয়ে আমরা এ বার আলোচনা করতে চাই। এক জন অল্প কথায় রেগে গিয়ে গৃহস্থের অন্যদের গালাগালি দিচ্ছেন, তাঁর বকবকানি বা খেয়ালিপনায় বাধা দিলে উত্তেজনা আরও বাড়ছে, হয়তো বাধাদানকারীকে আঘাত করতে উদ্যত হচ্ছেন; এই মানসিক অবস্থা মস্তিষ্কের বিশেষ কোনও স্থানের কিছু কোষের উত্তেজনা বৃদ্ধি দিয়ে ব্যাখ্যা করা চলে। সাধারণত মস্তিষ্ককোষের উত্তেজনা ও নিস্তেজনা — এই পরস্পরবিরোধী স্বাভাবিক ধর্ম সমমাত্রিক হয়ে থাকে। কোনও একটি অপ্রীতিকর কথায় আমার রাগ হল — মস্তিষ্কের কোষের উত্তেজনা বাড়ল, এই উত্তেজনা আশেপাশের কোষগুলোতে প্রতিক্রিয়াজাত আবশনের ফলে নিস্তেজনার আধিক্য ঘটাল; ফলে আমার উত্তেজনা, নিস্তেজনা তরঙ্গের দ্বারা প্রতিহত হল। যদি কারও মস্তিষ্ক কোষের নিস্তেজনা-ধর্ম স্বভাবত কম থাকে অথবা উত্তেজনা-ধর্ম বেশি থাকে তা হলে উপরিউক্ত ব্যক্তির ন্যায় সে ওই রকম ম্যানিকাল (manical) হয়ে উঠবে। উত্তেজনার আধিক্য ও নিস্তেজনার স্বল্পতা যে সব মস্তিষ্কের বৈশিষ্ট্য তাদের কোলেরিক (Choleric) বলে অভিহিত করা হয়। কোলেরিক টাইপের লোকই যে শুধু ম্যানিকাল হয়ে উগ্রমূর্তি ধারণ করে এ কথা ভাবলে কিন্তু ভুল হবে। উত্তেজনা-নিস্তেজনা-ধর্ম যাদের মস্তিষ্কে সমমাত্রিক তারাও বিশেষ ক্রোধ উত্পাদনকারী উদ্দীপকের প্রভাবে অভিভূত হয়ে একই রকম রুদ্রমূর্তি ধারণ করতে পারে। আমার কাছে সব থেকে যা মূল্যবান তাই নিয়ে যদি কেউ আমাকে ব্যঙ্গ বিদ্রুপ করে তা হলে সমমাত্রিক হওয়া সত্ত্বেও আমি অস্থির, চঞ্চল এবং অতিমাত্রায় ক্রুদ্ধ হয়ে পড়তে পারি। এ ছাড়া অন্য কোনও কারণে আমি যখন উত্কন্ঠিত, উদ্বিগ্ন, আমার স্নায়ুগুলো যখন টেনস (tense) হয়ে আছে তখনও অতি সামান্য কথায় আমার ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে পড়তে পারে, মস্তিষ্কে উত্তেজনাপ্রবাহ আমাকে উন্মাদের মতো আচরণ করাতে পারে।
সর্বশেষ সংশোধন করা : 4/28/2020